বাংলাহান্ট ডেস্ক: বলিউডে খান, ভাটদের রমরমার মাঝেও যে ছবি আলাদা করে নজর কেড়েছে সেটি হল ‘ঝুন্ড’ (Jhund)। এই ছবির হাত ধরেই দু বছর পর আবারো বড়পর্দায় পা রেখেছেন অমিতাভ বচ্চন (Amitabh Bachchan)। মুখ্য চরিত্রে বিগ বির অভিনয় দেখে কেঁদে ফেলেছিলেন ‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট’ আমির খানও।
বাস্তব কাহিনি অবলম্বনে তৈরি ঝুন্ড ছবিটি স্পোর্টস ড্রামা ঘরানার। ছবিতে ‘স্লাম সকার্স’ নামে একটি এনজিওর প্রতিষ্ঠাতার চরিত্রে অভিনয় করেছেন অমিতাভ, যিনি কয়েকজন বস্তিবাসী ছেলেমেয়ের জীবন বদলে দিয়েছিলেন। তাঁর হাত ধরেই ফুটবলের সঙ্গে বস্তির অন্ধকারে ডুবে থাকা ছেলেমেয়েদের পরিচয় হয়। গড়ে ওঠে একটি ফুটবল টিম।
৪ ঠা মার্চ, শুক্রবার মুক্তি পেল ‘ঝুন্ড’। ইতিমধ্যেই একাধিক তারকা অমিতাভের ক্যারিশ্মা দেখে মুগ্ধ। কিন্তু আজ আমরা বিগ বি নয়, বরং সেই মানুষটার ব্যাপারে জানব যাকে দেখে এই চরিত্রটির অনুপ্রেরণা পেলেন অমিতাভ। তিনি বিজয় বরসে (Vijay Barse), একজন অবসর প্রাপ্ত ক্রীড়া শিক্ষক। ৭৭ বছর বয়সী বিজয় জীবনের বেশিরভাগ সময়টাই বস্তিবাসী ছেলেমেয়েদের জন্য উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন।
এই বিজয় বরসে একবার আমিরের শো ‘সত্যমেব জয়তে’তেও অতিথি হয়ে এসেছিলেন। সেখানেই নিজের কাহিনি তুলে ধরেছিলেন তিনি। দীর্ঘ ৩৬ বছর ধরে ক্রীড়া শিক্ষকের চাকরি করেছেন তিনি। চাকরির সময়েই তাঁর পরিচয় হয় বস্তির কয়েকজন ছেলেমেয়ের সঙ্গে। সেটা ২০০০ সাল। তখন নাগপুরের একটি কলেজে শিক্ষকতা করছেন তিনি।
একদিন বৃষ্টির সময়ে বিজয় দেখেন, একটি ভাঙা বালতিতে লাথি মেরে মেরে খেলছে কয়েকজন বাচ্চা। সেটা দেখেই তাঁর মাথায় এক দারুন পরিকল্পনা আসে। এই বাচ্চাদের নিয়ে একটা ফুটবল টিম বানালে কেমন হয়? যেমন ভাবা তেমন কাজ। বাচ্চারা প্রথম বার ফুটবল খেলতে গিয়ে একটু অস্বস্তিতে পড়লেও খুব তাড়াতাড়িই আয়ত্ত করে নিয়েছিল খেলাটা।
এরপর ২০০১ সালে নাগপুরে একটি ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছিলেন বিজয়। মোট ১২৮ টি দল যোগ দিয়েছিল সেখানে। বস্তিবাসী ছেলেমেয়েগুলিকে ফুটবল খেলতে দেখে বিজয়ের শিক্ষক সত্ত্বা তাঁকে বুঝিয়েছিল যে যতক্ষণ এই বাচ্চারা খেলার মধ্যে রয়েছে ততক্ষণ তারা দুনিয়ার সমস্ত নেতিবাচকতা থেকে দূরে থাকবে।
এই ভাবনা থেকেই জন্ম ‘স্লাম সকার্স’ এর। ধীরে ধীরে বিজয়ের টিম শহর থেকে জেলা, জেলা থেকে রাজ্য এবং তারপর জাতীয় স্তরেও পরিচিতি পায়। জনপ্রিয় হন কোচ বিজয় বরসে। তিনি জানান, সফর শুরুর সময়ে কোনো স্পনসর ছিল না তাঁর কাছে। কিন্তু তাঁর আমেরিকাবাসী ছেলে সে দেশের খবরে বাবার সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন পড়েই ভারতে ফিরে আসেন।
বিজয় বরসে জানিয়েছিলেন, স্লাম সকারের জাতীয় টুর্নামেন্ট দেখে হোমলেস বিশ্বকাপের ডিরেক্টর তাঁয সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি কেপ টাউনে গিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছিলেন। ২০১২ সালে বিজয় বরসের হাতে ‘রিয়েল হিরো পুরস্কার’ তুলে দেন সচিন তেন্ডুলকর। পেয়েছিলেন নাগভূষণ পুরস্কারও।
ফিফার তরফে বিশেষ সম্মান পেয়েছিল ‘স্লাম সকার’। অবসরের পর ১৮ লক্ষ টাকা পেয়েছিলেন বিজয় বরসে। সেই টাকা দিয়ে নাগপুরে একটি বড়সড় ফুটবল স্টেডিয়াম বানান তিনি, যাতে দুঃস্থ বাচ্চারা সেখানে ফুটবল প্র্যাকটিস করতে পারে।