বড়সড় সিদ্ধান্ত সরকারের! এবার এক ধাক্কায় ১ কোটি ৭০ লক্ষ রেশন কার্ড নিষ্ক্রিয় করল রাজ্য

বাংলা হান্ট ডেস্ক: রাজ্যের কোষাগারের অবস্থা যে খুবই খারাপ তা বারংবার বলতে শোনা গেছে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। প্রশাসনিক বৈঠকগুলিতে একাধিকবার এই প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করেছেন তিনি। এক কথায়, খরচ সামলাতে বর্তমানে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে রাজ্য সরকারকে। পাশাপাশি, সরকারি প্রকল্পগুলিতেও লাগছে বিপুল অঙ্কের টাকা। এমতাবস্থায়, খরচ কমাতে এবার বড়সড় সিদ্ধান্ত নিল নবান্ন।

জানা গিয়েছে যে, রেশন কার্ড নিষ্ক্রিয় করার পথেই হাঁটছে রাজ্য সরকার। যার মাধ্যমে কয়েক হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয় কমানো সম্ভব। সূত্র অনুযায়ী, ইতিমধ্যেই ১ কোটি ৭০ লক্ষ রেশন কার্ড নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। তবে, চলতি বছরই এই সংখ্যা বেড়ে হতে পারে প্রায় আড়াই কোটির কাছাকাছি। আর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এর ফলে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ কমানো সম্ভব হবে।

   

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০২১-২২ অর্থবর্ষে রাজ্যে “দুয়ারে রেশন” এবং “খাদ্যসাথী” প্রকল্পের জন্য সরকারকে বাজেট বহির্ভুত প্রায় ২,৯৭৮ কোটি টাকা বেশি খরচ করতে হয়েছে। যার ফলে, রেশন কার্ড নিষ্ক্রিয় করার মাধ্যমে খরচ বাঁচানোর চেষ্টা চলছে। এই প্রসঙ্গে একজন আধিকারিক জানিয়েছেন, “সাম্প্রতিক বাজেট অধিবেশনে অতিরিক্ত খরচ বিধানসভায় পাশ করানো হয়েছে। এদিকে, রেশন কার্ড নিষ্ক্রিয় করে যে টাকা বাঁচানো হচ্ছে, তার সঙ্গে মিলে যাচ্ছে “দুয়ারে রেশন” এবং “খাদ্যসাথী” প্রকল্পের অতিরিক্ত খরচের পরিমাণ।”

এদিকে, রেশনের বেহাত হওয়া ঠেকাতে ইতিমধ্যে বায়োমেট্রিক-এর মাধ্যমে রেশন নেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। যার ফলে খুব সহজেই প্রকৃত উপভোক্তাদের চিহ্নিতকরণ করা সম্ভব হচ্ছে। জানা গিয়েছে যে, এখনও পর্যন্ত প্রায় ৮ কোটি উপভোক্তার ডিজিটাল রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার কার্ড যুক্ত হয়েছে। এছাড়াও, প্রায় ১ কোটি পরিবারের ফোন নম্বর যুক্ত করা হয়েছে কার্ডের সঙ্গে।

পাশাপাশি, রেশনের ব্যবস্থাকেও স্বচ্ছ রাখতে রেশন সংক্রান্ত নানা তথ্য গ্রাহকদের মোবাইলে পৌঁছে যাচ্ছে। এছাড়াও, কোন পরিবার ঠিক কত পরিমাণে রেশন পাওয়ার যোগ্য তা-ও মোবাইলে এসএমএসের মারফত পাঠিয়ে দিচ্ছে খাদ্য দফতর। যে কারণে রেশন কার্ডের সঙ্গে মোবাইল নম্বর যুক্ত করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

হিসেব অনুযায়ী, সব খরচ এবং ভর্তুকি মিলিয়ে এক কেজি চালের জন্য রাজ্যের খরচ হয় প্রায় ২৮ টাকা। যার নিরিখে স্বাভাবিকভাবেই বিনামূল্যের রেশন পরিষেবার খরচ বিপুল হয়ে উঠেছে। যে কারণে কার্ড নিষ্ক্রিয় করে খরচের বোঝা কমলে প্রকল্পের গুণগত মান বাড়বে। পাশাপাশি, এটি চালিয়ে নিয়ে যাওয়াও সম্ভব হবে।

IMG 20210624 155520 1

এই প্রসঙ্গে বিধানসভায় সরকার জানিয়েছে যে, বিভিন্ন খাতে ২০২১-২২ অর্থবর্ষে বাজেট বহির্ভূত প্রায় ২০,৭৫১ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকার অতিরিক্ত খরচ হয়েছে। যেই কারণে ঋণও নিতে হয়েছে। সেই ঋণের সুদের পরিমাণ প্রায় ৪,৫৬৬ কোটি টাকা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, রেশন কার্ড নিষ্ক্রিয় করলে কার্ড পুরোপুরি বাতিল হবে না। বরং, অনলাইন বা অফলাইনে উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ দিয়ে উপভোক্তারা দাবি করলেই তা পুনরায় সক্রিয় হয়ে যাবে। আর এর ফলে ভুয়ো বা মৃত মানুষেরা সেই প্রমাণ দিতে পারবেন না। যার ফলে দুর্নীতি অনেকাংশেই ঠেকানো যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর