বাংলা হান্ট ডেস্ক: বেশ কিছুদিন ধরেই নামাজ বিতর্ক নিয়ে উত্তেজনা দেখা যায় দেশে। মূলত কর্ণাটক থেকে শুরু হওয়া এই বিতর্ক ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে দেশজুড়ে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজ্যে এই ঘটনার প্রতিফলন দেখা গিয়েছে। এই আবহেই এবার হরি সিং গৌর সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
ভাইরাল ওই ভিডিওতে দেখা গিয়েছে যে, হিজাব পরা এক ছাত্রী ক্লাসরুমের মধ্যেই নামাজ পড়ছেন। এদিকে, এই ভিডিও সামনে আসার পরই একাধিক হিন্দু সংগঠন এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করেছে। শুধু তাই নয়, কলেজে হনুমান চালিশা পাঠ করতেও শুরু করে দেন হিন্দু সংগঠনের সদস্যরা। এমতাবস্থায়, বিতর্ক বাড়তে থাকায় পুরো বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।
জানা গিয়েছে যে, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে থাকা ওই ছাত্রীটি দামোহের বাসিন্দা। তিনি কলেজ থেকে বিএসসি-বিএড করছেন। হিন্দু সংগঠনের অভিযোগ, তিনি প্রতিদিন হিজাব পরে কলেজে আসেন। এছাড়াও, গত শুক্রবার দুপুরে ওই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেই নামাজ পড়ছিলেন। যদিও, কলেজ ক্যাম্পাসে কোনো ড্রেস কোড না থাকলেও এই ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। যেই কারণে পুরো ঘটনাটির তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নীলিমা গুপ্তা।
এদিকে, ওই ছাত্রীটি কলেজের হোস্টেলেই থাকেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে। এমতাবস্থায়, বিতর্ক প্রকাশ্যে আসার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে তাঁর নাম প্রকাশ করা হয়নি। এর পাশাপাশি মিডিয়ার সামনেও কোনো কথা বলেননি ওই ছাত্রী। মূলত, কোনো ড্রেস কোড না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বাড়তে দিতে চাইছেনা।
যদিও, এই ঘটনাটিকে সহজ করে দেখছেন না হিন্দু সংগঠনের সদস্যরা। ইতিমধ্যেই নামাজের প্রতিবাদে হনুমান চালিশা পাঠ করেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। এই প্রসঙ্গে হিন্দু জাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে উমেশ সরফ বলেছেন যে, কলেজে ড্রেস কোড প্রযোজ্য নয়, তবে ধর্মীয় কাজও শ্রেণিকক্ষে করা যাবে না।
যদিও, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জানিয়েছেন, কলেজে হিজাব পরা নতুন কিছু নয়। তবে সাম্প্রদায়িক কাজগুলি বাড়িতে বা ধর্মীয় স্থানে করা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বজায় রাখতে হবে সবাইকে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তার রিপোর্টের ভিত্তিতেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া অফিসার বিবেক জয়সওয়াল বলেছেন যে, একাডেমিক ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো অফিসিয়াল ড্রেস কোড নেই, তবে তাদের মৌলিক নৈতিক পোশাকের সাথে ক্লাসে উপস্থিত হওয়া উচিত।
এদিকে, হিন্দু জাগরণ মঞ্চের সাগর ইউনিটের সভাপতি উমেশ সরফ জানিয়েছেন, ভিডিওতে থাকা ছাত্রীটি অনেক দিন ধরে হিজাব পরে ক্লাস করছিলেন। কর্ণাটক হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের ধর্মীয় কার্যকলাপের অনুমতি দেওয়া উচিত নয়। শুক্রবার বিকেলে তাঁকে ক্লাসরুমের ভেতরে নামাজ পড়তে দেখা যায়। এটা আপত্তিকর, কারণ সব ধর্মের মানুষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কর্ণাটক হাইকোর্ট গত ১৫ মার্চ ক্লাসরুমের ভিতরে হিজাব বা মাথার স্কার্ফ পরার অনুমতির আবেদন খারিজ করেছিল। এই প্রসঙ্গে আদালত জানিয়েছিল যে, এটি ইসলামের অপরিহার্য ধর্মীয় অনুশীলনের অংশ নয়। এদিকে, হিন্দু সংগঠনের সদস্যরা এই আদেশকেই মাথায় রেখে নামাজ পড়ার ঘটনাটির বিরোধিতা করছে।