বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমান সময়ে বিভিন্ন ধর্মীয় উষ্কানীমূলক ঘটনায় জেরবার দেশ। ইতিমধ্যেই দক্ষিণের হিজাব বিতর্কের রেশ আছড়ে পড়ে সমগ্র দেশজুড়ে। সম্প্রতি পড়শি দেশের ঢাকাতেও ইসকন রাধাকান্ত মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর ও লুঠপাট চালানো হয়েছে। এমনই এক ভয়াবহ আবহে অনন্য সম্প্রীতির নজির মিলল খোদ শহর কলকাতায়। আর এই ঘটনা নিঃসন্দেহে খুশির আমেজ বইয়ে দিয়েছে দুই ধর্মের মানুষের কাছেই।
বাবা হিন্দু কিন্তু মা মুসলিম। এমতাবস্থায়, সমস্ত প্রতিবন্ধকতা এবং ধর্মীয় বেড়াজালকে টপকে সম্প্রীতির নতুন বার্তা নিয়ে এসে দু’জনের কোল আলো করে পৃথিবীতে এল রমজান। বর্তমানে সময়ে সে যেন দুই ধর্মের মানুষের কাছেই এক “মূর্ত” প্রতীক হয়ে রয়েছে।
জানা গিয়েছে যে, বাড়ির অমতে গিয়েই দু’বছর আগে বিয়ে সেরেছিলেন নাসির বানু ও রাকেশ দে। এদিকে, মেয়ে মুসলিম এবং ছেলে হিন্দু হওয়ায় দুই পরিবারের মধ্যেই তৈরি হয় চূড়ান্ত ঝামেলার। রাকেশ ড্রাইভারের কাজ করেন এবং নাসির বানু একটি ছোটখাটো বেসরকারি হাসপাতালের নার্সের কাজ করেন। উত্তর ২৪ পরগনার বিরাটিতে থাকেন এই দম্পতি।
গত রবিবার প্রসব যন্ত্রনা নিয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অ্যানেক্স লেডি ডাফরিন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে স্ত্রীকে নিয়ে গিয়েছিলেন রাকেশ। সেখানে চিকিৎসক রাজেশ বিশ্বাসের তত্বাবধানে নাসির বানুকে দ্রুত স্ত্রীরোগ বিভাগে ভরতি করা হয়। এদিকে, তাঁর ওজন ছিল প্রায় ১০৪ কেজি অর্থাৎ স্থূলতা সংক্রান্ত সমস্যা থাকায় অত্যন্ত সতর্কতার সাথে সিজার করা হয় ওই মহিলার।
সেখানেই দেখা যায় যে, একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তিনি। এদিকে, ঘটনাচক্রে গত রবিবার ছিল পবিত্র রমজানের দিন। চিকিৎসক জানিয়েছেন, জন্মের সময় শিশুটির ওজন ছিল ২ কেজি ৭০০ গ্রাম। পাশাপাশি, এই প্রসঙ্গে চিকিৎসক রাজেশ বিশ্বাস বলেছেন, “আমিই জানাই সন্তানের একটা নাম রমজান রাখতে। আর তা মেনেও নিয়েছেন শিশুটির মা-বাবা।” যদিও, সম্প্রীতির প্রতীক হিসাবে শিশুটির অন্য নাম দেওয়া হয়েছে সৌহার্দ্য।
এদিকে, ওই শিশুটির বাবা রাকেশ জানিয়েছেন, “প্রেম করার সময়ও আমাদের হিন্দু-মুসলিম বিষয়টি মাথায় আসেনি। এখনও সেটা নেই। ছেলে বড় হয়ে যে কোনো ধর্মকেই গ্রহণ করতে পারে। তাতে আমাদের কোনোরকম বাধা থাকবে না।” এদিকে এই ঘটনায় যেন, হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কে সৌহার্দ্য ফিরে আসার ইঙ্গিত এল “রমজান”-এর মধ্য দিয়ে।