বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমান সময়ে যখন বাংলায় পড়ে চাকরি পাওয়া নিয়ে এক বিরাট দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে সেখানে এক বাঙালি সমস্ত কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে এক অভাবনীয় নজির গড়ে তুলেছিলেন। আমরা সবাই জানি আমাদের দেশের অন্যতম কঠিন পরীক্ষা হল IAS। বছরের পর বছর ধরে প্রার্থীরা কঠিন পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেন।
ঠিক এমনই একটি পরীক্ষা নিজের মাতৃভাষায় দিয়ে তাতে সফল হয়েছিলেন এক অকুতোভয় বাঙালি। পাশাপাশি, তিনি সকলের জন্য তৈরি করেছেন এক বিরাট অনুপ্রেরণাও। বেশ কয়েকবছর আগেই এই অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছিলেন যে বঙ্গসন্তান, তাঁর নাম হল তন্ময় চক্রবর্তী।
একদম প্রথমে তিনি বিটেক করার পর যোগদান করেছিলেন গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং কনসার্নে। কিন্তু, সেই চাকরিতে সন্তুষ্ট ছিলেন না তিনি। বরং, তাঁর মাথায় তখন ঘুরপাক খাচ্ছিল অল ইন্ডিয়া সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বসার ভাবনা। আর সেই ভাবনাকেই “পাখির চোখ” করে এক অনবদ্য উপায় বাস্তবায়িত করেন তিনি।
এমনিতেই আমরা প্রায়ই দেখি ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারের পেশা থেকেই সসম্মানে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় পাশ করেছেন অনেকে। কিন্তু তন্ময়ের চিন্তাভাবনা ছিল একেবারে বৈপ্লবিক। তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে সর্বভারতীয় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার পুরোটাই দেবেন তাঁর মাতৃভাষায় বাংলায়।
এদিকে, তাঁর এই সিদ্ধান্তে অবাক হয়ে যান সকলেই। এমনকি, একটা সময়ে তাঁর সহপাঠীরাও তাঁকে বারংবার বোঝাতে থাকেন এই নিয়ে। কিন্তু, তিনি তাঁর সিদ্ধান্তে থাকেন অনড়। ২০০২ সালে তিনি যে লক্ষ্য স্থির করেছিলেন ২০০৬ সালেই তাতে সিদ্ধিলাভ করেন তিনি। মূলত, ২০০৫ সালের সর্বভারতীয় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়ে ২০০৬ সালে সিভিল সার্ভেন্ট হিসাবে চাকরিতে যোগদান করে এক অসামান্য রেকর্ড তৈরি করেন তন্ময়।
অবশ্য প্রথাগত ভাবে না হেঁটে IAS-এর মত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে গিয়ে তাঁকে করতে হয়েছে বিপুল পরিশ্রমও। কারণ সমগ্র সিভিল সার্ভিস পরীক্ষাই তিনি দিয়েছেন বাংলায়। ইতিহাস এবং ভূগোল ছিল তাঁর ঐচ্ছিক বিষয়। সমস্ত উত্তর তৈরি করে নিয়মিত বাংলায় লিখে অভ্যাস করতেন তিনি।
এই প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন যে, তাঁর মাতৃভাষা যে কতটা সমৃদ্ধ এবং অন্য কোনো ভাষার থেকে কোনো অংশে পিছিয়ে নয়, সর্বভারতীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সেটা প্রমাণ করাই তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল। অবশ্য তাঁর এই সাফল্যে বাবার আশীর্বাদ এবং শিক্ষকেরা তাঁকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন বলেও জানান তিনি। আর এভাবেই তন্ময় প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছেন।