বাংলাহান্ট ডেস্ক : প্রায় প্রতিবছরই রামনবমীকে ঘিরে উত্তপ্ত থাকে রাজ্যের রাজনৈতিক আবহাওয়া। একাধিক জায়গা থেকেই ওঠে সাম্প্রদায়িক অসম্প্রীতি এবং দাঙ্গার অভিযোগ। তবে এবার যেন এক অন্য রামনবমী দেখল বাংলা। রাজ্য জুড়ে ভেঙে চুরমার হয়ে গেল সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদের দেওয়াল। রামনবমীর মিছিলে দিকে দিকে সম্প্রীতির ছবি দেখল রাজ্যবাসী।
বিগত দুবছর করোনা পরিস্থিতির কারণে রামনবমীর মিছিল সেভাবে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে করতে পারেনি হিন্দু পর্ষদ। কিন্তু এবছর করোনার প্রকোপ কমায় রামনবমী যে ধুমধাম করেই পালিত হবে দেশে সেকথা আগেই ঘোষণা করেছিল তারা। সেই মতন এদিন প্রতিটি জেলায় জেলায় বের হয় রামনবমীর মিছিল। ঝাণ্ডা হাতে কাঠফাটা গরমেও মিছিলে হাঁটেন শয়ে শয়ে রামভক্ত। আর সেই মিছিলেই দেখা গেল সম্প্রীতির মূর্ত প্রতিচ্ছবি। কোথাও জল খাইয়ে কোথাও আবার হাতে হাত রেখেই আপ্যায়ন করলেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন। এই উদ্যোগে দুই ধর্মের বন্ধণ আরও শক্ত হলে বলেই দাবি তাঁদের।
রবিবার সকাল থেকেই শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছিল হাওড়ার বিভিন্ন এলাকায়৷ একটি মিছিল যখন মুসলিম অধ্যুষিত পিলখানা এলাকায় পৌঁছায় তখন মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের দিকে জলের বোতল এগিয়ে দিতে দেখা যায় মুসলিম যুবকদের। কাউকে আবার দেখা যায় এক রামভক্তের গলা জড়িয়ে তাঁর তৃষ্ণার্ত গলায় জল ঢেলে দিতে। স্থানীয় ক্লাবের মুসলিম ওই যুবকদের দাবি, রমজানের এই মাসে তাঁরাও রোজা রাখছেন, কিন্তু চান না যে হিন্দু ভাইয়েরা তৃষ্ণার্ত থাকুক এই গরমে। সেই কারণেই এই উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা।
অন্যদিকে আবার, বর্ধমানে কার্জন গেটের কাছে হাতে হাত মিলিয়ে একই মিছিলে পাশাপাশি হাঁটতে দেখা গেল দুই ধর্মের যুবকদের। হিন্দুদের গায়ে গেরুয়া পোষাক, হাতে কেশর রঙা ঝান্ডা, পাশেই জাতীয় পতাকা হাতে নিজেদের ধর্মীয় পোষাক পরেই হাতে হাত রেখে হাঁটলেন মুসলিমরা। রামনবমীতে এহেন ছবি কার্যতই নজিরবিহীন।
প্রসঙ্গত, এবার রামনবমী নিয়ে আগে থেকেই পুলিশ প্রশাসনকে সতর্ক করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবছর রামনবমী এবং রমজান মাস পড়েছে এক সঙ্গে। তাই দুই সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে যাতে কোনও সংঘাত কিংবা সাম্প্রদায়িক অশান্তি তৈরি না হয় তাই নিশ্চিত করতে চেয়েছিল রাজ্য সরকার। রাজ্যের সমস্ত মানুষ যাতে নিজের নিজের ইচ্ছে মত ধর্মাচারণ স্বাধীন এবং নিরাপদ ভাবে করতে পারে সেই ব্যাপারেই প্রশাসনকে সতর্ক করে মমতা সেদিন বলেন, ‘রাজ্যে উৎসবের সুযোগ নিয়ে অশান্তি এবং সন্ত্রাস ছড়ানোর পরিকল্পনা করছে কেউ কেউ। পুলিশ এবং প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে হবে। যাতে রাজ্যের কোথাও কোনও প্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেই দিকে আমাদের নজর রাখতে হবে।’
উল্লেখ্য, রামনবমী উপলক্ষে রাজ্যে হাজারেরও বেশি মিছিল করার কথা ঘোষণা করেছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। রামনবমী থেকে শুরু হয়ে হনুমান জয়ন্তী অবধি গোটা রাজ্য জুড়ে চলবে এই মিছিল। শুধু হিন্দু মহাসভা কিংবা বিজেপিই নয়, এবার রামনবমীর মেলায় যৌথ মিছিল করতে দেখা গেছে তৃণমূলকেও।