বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: পাকিস্তানে বিরোধী দলগুলো অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে ইমরান খানের সরকারের পতন ঘটিয়েছে। এরপর এখন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের প্রধান শাহবাজ শরিফ সেদেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন। তিনি জাতীয় পরিষদে প্রধানমন্ত্রী পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গিয়েছে।
আজ ১১ই এপ্রিল, এই ইস্যুতে একটি ভোট হবে। জয়ের জন্য ৩৪২ সদস্যের সংসদে ১৭২ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন শাহবাজের। কারণ ইমরান সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবে ১৭৪টি ভোট পড়েছে। তাই শাহবাজের জয় একপ্রকার নিশ্চিত। এরপর দু-একদিনের মধ্যে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও শপথ নিতে পারেন। সেজন্য ভারতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে, শাহবাজ ভারতের পক্ষে কতটা ‘শরীফ’ প্রমাণিত হবেন?
শাহবাজ এখনও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হননি, এমনকি তিনি শপথও নেননি। কিন্তু তার মধ্যেই কাশ্মীর ইস্যুকে সামনে এনেছেন তিনি। রবিবার সংবাদমাধ্যেমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমরা ভারতের সঙ্গে শান্তি চাই। কিন্তু কাশ্মীর সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এটা সম্ভব নয়।’ মানে এটা পরিষ্কার যে তিনি কাশ্মীর ইস্যু জিইয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। পাকিস্তানি মিডিয়ার মতে, শাহবাজের এই নীতি সেখানকার সেনাবাহিনীরও মত, কারণ তারাও কাশ্মীর ইস্যুকে জিইয়ে রাখতে চায়। এই ইস্যুর অজুহাতে সেনাবাহিনী সরকারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের বাজেট পায়।
এর আগে শাহবাজ তিনবার পাঞ্জাবের বৃহত্তম প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। সেখানে তিনি একজন কঠোর ও সংস্কারবাদী প্রশাসক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। কিন্তু তার সমালোচকরা উল্লেখ করেছেন যে তার ‘সংস্কারবাদ’-র কেন্দ্রে রয়েছে বেশিরভাগ এমন নীতি আছে যা ভোটব্যাংক আকৃষ্ট করে।
অর্থাৎ তিনি এমন কিছু পদক্ষেপ নেন, যা দেশের উন্নতিতে সুদূরপ্রসারী না হলেও জনগণের মধ্যে সরকারের ভাবমূর্তি গড়তে সাহায্য করে। অর্থাৎ বিনামূল্যে ল্যাপটপ বিতরণ, বিভিন্ন রকমের ভাতার ব্যবস্থা, কম ভাড়ায় বেকার যুবকদের জন্য ট্যাক্সি পরিষেবা প্রদান, ইত্যাদি। পাকিস্তানি বিশেষজ্ঞদের মতে, যেহেতু কাশ্মীর বিরোধ এখনও জাতীয় পর্যায়ে পাকিস্তানে সবচেয়ে বেশি ভোটারকে আকৃষ্ট করে, তাই তারা সমাধানের পরিবর্তে এটির উপর একটি জনতাবাদী বিকল্প গড়ে তুলতে ইস্যুটি জিইয়ে রাখবে।
শাহবাজ যখন পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন তিনি চীনের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত প্রকল্পগুলি দ্রুত বাস্তবায়ন করেছিলেন। এর মধ্যে পাঞ্জাবে পরিচালিত পাকিস্তানের প্রথম মেট্রো, বাস পরিষেবাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সম্ভবত সে কারণেই চীন শাহবাজকে প্রধানমন্ত্রী হতে স্বাগত জানিয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদপত্র ‘গ্লোবাল টাইমস’-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ইমরান খানের সম্ভাব্য উত্তরসূরি শরীফ পরিবারের থেকে হতে পারেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে চীন-পাকিস্তান সম্পর্কের প্রচার করে আসছে। তার শাসন আমলে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা আরও ভালো হতে পারে।’
শাহবাজ শরীফ একা নন, তার সঙ্গে থাকবে পাকিস্তানের দ্বিতীয় প্রধান দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। পিপিপি শাহবাজের দল পিএমএল-এনের প্রতিপক্ষ। রাজনৈতিক স্বার্থের পরিপ্রেক্ষিতে, পিপিপি-র নীতিগুলি পিএমএল-এন-এর থেকে ভিন্ন ছিল। অতীতে, দলটির প্রধান আসিফ আলী জারদারি যখন পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ছিলেন, তখন তিনি কাশ্মীরকে একটি “অমীমাংসিত সমস্যা” হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন। কাশ্মীর ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে ভারতের সঙ্গে কথা বলার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। তবে এই সময়ে ভারতের নরেন্দ্র মোদী সরকারের অবস্থান পরিষ্কার যে তারা প্রথমে কাশ্মীর নিয়ে, তারপর অন্যান্য ইস্যুতে পাকিস্তানের সঙ্গে কথা বলবে। এমতাবস্থায় শাহবাজ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পিপিপিতে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এই প্রেক্ষাপটে উল্লেখ্য।
পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের মেয়াদ আর এক বছর বাকি। ২০২৩ সালের আগস্টে সংসদ নির্বাচন। বর্তমানে পাকিস্তানের অর্থনীতিও ভেঙে পড়েছে। মার্কিন ডলারের তুলনায় সেখানে টাকার মান দাঁড়িয়েছে ১৯০-এর কাছাকাছি। আর বর্তমানে শাহবাজের পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতাও নেই। অর্থাৎ শাহবাজকে চারদিক থেকে এমনভাবে বেঁধে রাখা হয়েছে যে সুদূরপ্রসারী পরিণতি সহ বড় সিদ্ধান্ত তিনি খুব কমই নিতে পারেন। সেটা ভারতের সাথে সম্পর্কের সাথে সম্পর্কিত হোক বা কাশ্মীর সমস্যার সাথে সম্পর্কিত হোক। তবে, তিনি তার সরকার, রাজনৈতিক জোট এবং দেশের পরিস্থিতির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে কিছু জনতাবাদী সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবেন, যাতে তিনি আগামী নির্বাচনে পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠনের সুযোগ পান। অর্থাৎ এই সময়ে তার কাছ থেকে ভালো কিছু পাওয়ার বা আলোচনার আশা রাখাটা ভারতের জন্য বোকামি হবে।