মানবিকতা! রমজানে মাসে মাথা ন্যাড়া করে হিন্দু বাবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠান সম্পন্ন করলেন মুসলিম ছেলে

বাংলা হান্ট ডেস্ক: প্রাচীনকাল থেকেই একের পর এক মহামানবের মূল বক্তব্যই ছিল সমস্ত কিছুর ঊর্ধ্বে মানবতাই আমাদের আসল ধর্ম। জাতপাত, ভেদাভেদের পাশাপাশি সমস্ত ধর্মীয় গ্লানিকে মুছে দিয়ে তাঁরা বারংবার মানবসেবায় নিয়োজিত হওয়ার কথা বলেছেন আমাদের। কিন্তু, সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক বিক্ষিপ্ত ঘটনা প্রশ্নের মুখে ফেলেছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে। আর যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে মানবজীবনেও।

এমতাবস্থায়, এক নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী থাকল শ্রীরামপুর। সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে সরিয়ে নিয়ম মেনে মস্তক-মুণ্ডন করে হিন্দু বাবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করে সবাইকে অবাক করে দিলেন মুসলিম ছেলে। জানা গিয়েছে যে, দিল্লিতে ন্যাশনাল ফিজিক্যাল ল্যাবরেটরিতে বিজ্ঞানী হিসেবে গোটা কর্মজীবন কাটিয়েছিলেন বিজ্ঞানী সুজিত কুমার হালদার। কিন্তু, অবসরের পর স্ত্রী শিপ্রা হালদারকে নিয়ে শ্রীরামপুরের দে স্ট্রিটে থাকতেন তিনি।

   

কয়েক বছর আগে হঠাৎ সুজিতবাবুর প্রস্টেট ক্যানসার ধরা পড়ে। তারপর থেকে কলকাতায় নিয়মিত চিকিৎসা করাতেন তিনি। কিন্তু, তাঁর একমাত্র মেয়ে চৈতালি বাগ সাইপ্রাসে থাকায় করোনা আবহে চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসেননি কেউই। এমতাবস্থায়, শ্রীরামপুরের গোপীনাথ সাহা স্ট্রিটের বাসিন্দা তথা মার্বেল মিস্ত্রি আনোয়ার আলি ওই বৃদ্ধ দম্পতির পাশে দাঁড়িয়ে চিকিৎসার সমস্ত দায়িত্ব পালন করেন।

এদিকে, গত ২৮ মার্চ না ফেরার দেশে পাড়ি দেন সুজিত বাবু। যদিও, মৃত্যুর আগে তিনি তাঁর স্ত্রীকে জানিয়ে দেন, “আনোয়ার আমার ছেলে। সে যেন মৃত্যুর পর মুখাগ্নি ও শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করে।” এমতাবস্থায়, সুজিত বাবুর সেই ইচ্ছা পূরণেই এগিয়ে আসেন তাঁর মুসলিম পুত্র আনোয়ার। এমনকি, কথা মত সুজিতবাবুর মৃত্যুর পর তাঁর মুখাগ্নিও করেন তিনি।

যদিও, এই সময় রোজা শুরু হয়ে গেলেও নিজের ধর্ম পালনের পাশাপাশি গত মঙ্গলবার সমস্ত নিয়ম মেনে হিন্দু বাবার শ্রদ্ধানুষ্ঠান সম্পন্ন করেন আনোয়ার। মস্তক-মুণ্ডনের মাধ্যমে হিন্দু পিতার শেষ কাজ সম্পূর্ণ করেন তিনি। এদিকে, সুদূর সাইপ্রাস থেকে সুজিত বাবুর মেয়ে চৈতালিও বাবার শ্রাদ্ধের কাজ করতে এসেছিলেন শ্রীরামপুরে।

তিনি জানিয়েছেন, “আজকে রোজার মধ্যেই আমরা দুই ভাই-বোন বাবার কাজ করেছি। এটা ভেবে ভাল লাগছে আমার এক ভাই আছে। আর তাঁরই টানে আবারও আমি আসব এই দেশে।” প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পেশায় মার্বেল মিস্ত্রি হলেও আনোয়ার জিমের প্রশিক্ষণও দেন। সবচেয়ে বড় কথা, বিগত কুড়ি বছর ধরে তিনি বিভিন্ন সময়ে বহু অসুস্থ মানুষকে দেশের একাধিক হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন।

WhatsApp Image 2022 04 13 at 6.05.29 PM

এই প্রসঙ্গে আনোয়ার জানিয়েছেন, “কখন যে ওনাদের সঙ্গে ভালবাসার বন্ধনে জড়িয়ে গিয়েছি আমি নিজেও বুঝতে পারিনি। তাই ওনাকে আমি নিজের আরেক বাবা বলে মনে করি। ওনার শেষ ইচ্ছার কথা আমার বাবা-মাকে জানাতে তাঁরা আমাকে জানান পৃথিবীতে মানুষের ভালোর জন্য যদি কোনো কাজ করা যায় তবে সেখানে ধর্ম কোনো বাধা হয় না। তাই আমি সবকিছু ভুলে কোনো ধর্মের অসম্মান না করেই শুধুমাত্র মানবধর্মের পালন করেছি।”

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর