স্কুলে যাওয়ার হয়নি সুযোগ! ১০৪ বছর বয়সেই ৮৯ শতাংশ নাম্বার নিয়ে পরীক্ষায় প্রথম হলেন বৃদ্ধা

বাংলা হান্ট ডেস্ক: কথায় আছে, শেখার কোনো বয়স হয়না। অর্থাৎ, মানুষ চাইলেই যে কোনো বয়সে যে কোনো কিছু শিখতে পারে। তবে, তার জন্য চাই প্রবল ইচ্ছেশক্তি। কারণ, সেই ইচ্ছেশক্তির ওপর ভর করেই তাঁরা করে ফেলেন অসাধ্য সাধন। আর এটাই ফের একবার প্রমাণ করে দেখালেন কেরালার ১০৪ বছর বয়সী বৃদ্ধা কুট্টিয়াম্মা। তিনি এমন এক নজির তৈরি করেছেন যে প্রত্যেকের কাছেই হয়ে উঠেছে অকল্পনীয়।

শুধু তাই নয়, বর্তমানে তিনি সকলের কাছে হয়ে উঠেছেন এক অনুপ্রেরণাও। যাঁরা জীবনের শেষ প্রান্তে এসে বার্ধক্যের চিন্তায় চিন্তিত থাকেন তাঁদের কাছেও কুট্টিয়াম্মা হয়ে উঠেছেন এক “রোল মডেল।”

মূলত, এই বয়সে এসেও কেরালা রাজ্য সাক্ষরতা মিশনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কার্যত রেকর্ড তৈরি করেছেন কুট্টিয়াম্মা। শুধু তাই নয়, তিনি ৮৯ শতাংশ নাম্বার পেয়ে সবাইকেই চমকে দিয়েছেন।

রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন অভিনন্দন:
প্রবীণ এই মহিলার বিরল কৃতিত্বের জন্য সেই রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ভি শিবকুট্টি তাঁকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন। পাশাপাশি, তিনি এই বিষয়ে টুইট করে কুট্টিয়াম্মাকে তাঁর কঠোর পরিশ্রম এবং বিশ্বাসের জন্য কুর্ণিশ জানিয়েছেন৷

পরীক্ষার আগে নিয়েছিলেন টিউশন:
মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, এই সাক্ষরতা পরীক্ষার আয়োজন করেছিল কেরালার আয়রাকুন্নান পঞ্চায়েত। যার মূল উদ্দেশ্য ছিল সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতে শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা বাড়ানো। সেখানেই কুট্টিয়াম্মা সহ জেলার বহু নাগরিক উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, কুট্টিয়াম্মাও যে কোনো উপায়ে এই পরীক্ষাটি পাশ করতে চেয়েছিলেন। এমনকি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কয়েক মাস আগে তিনি টিউশনও নেন। আর এভাবেই পরিশ্রমের ফলে তিনি এত ভালো নম্বর পেয়েছেন।

মাত্র ১৬ বছর বয়সেই হয়ে যায় বিয়ে:
জানা গিয়েছে, কুট্টিয়াম্মা কখনও স্কুলে যাননি। এমনকি মাত্র ১৬ বছর বয়সেই তাঁর বিয়ে হয়ে যায়। এরপর সংসারের কাজ সামলাতে গিয়ে তিনি আর লেখাপড়ার সুযোগ পাননি। কিন্তু, তিনি প্রবলভাবে পড়াশোনা করতে চেয়েছিলেন। তাই, বয়সের এই পর্যায়ে যখন তিনি পড়াশোনার সুযোগ পান তখন এটি হাতছাড়া হতে দেননি।

কানে শুনতে হয় অসুবিধে:
১০৪ বছর বয়সেও কুট্টিয়াম্মার শেখার তাগিদ তাঁকে আজ শিক্ষিত করে তুলেছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, তিনি শুধুমাত্র ৮৯ শতাংশ নম্বরই পাননি বরং ওই পরীক্ষায় শীর্ষস্থানও অর্জন করেছেন। যদিও, বার্ধক্যজনিত কারণে তাঁর শুনতে একটু অসুবিধা হয়। সেজন্য তিনি পরীক্ষার সময় শিক্ষকদের একটু জোরে কথা বলার জন্য অনুরোধ করেছিলেন।

WhatsApp Image 2022 04 29 at 6.33.49 PM

সকলেই খুব খুশি:
কুট্টিয়াম্মার এই সাফল্যে তাঁর সন্তানরাও খুব খুশি। এই প্রসঙ্গে জানকী, গোপালন, রাজাপ্পন এবং রবীন্দ্রন জানান যে, তাঁদের মা সবসময় পড়াশোনা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সংসারের দায়িত্ব তাঁর ওপর এতটাই ছিল যে, তিনি কিছুতেই তা করতে পারছিলেন না। তবে, এখন তিনি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন। পাশাপাশি, কুট্টিয়াম্মার উদ্যম এবং ইচ্ছেশক্তিকে কুর্ণিশও জানাচ্ছেন সকলেই।


Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর