জ্ঞানবাপী মসজিদে মিলল শিবলিঙ্গ, এলাকা সিল করার নির্দেশ আদালতের

বাংলা হান্ট ডেস্ক: আদালতের নির্দেশে শুরু হওয়া বারাণসীর বিখ্যাত জ্ঞানবাপী মসজিদ কমপ্লেক্সে সমীক্ষার কাজ সোমবার সকাল ১০ টা ১৫ মিনিট নাগাদ শেষ হয়েছে। যে উদ্দেশ্য নিয়ে সমীক্ষা চালানো হয়েছিল তা প্রায় পূরণ হয়েছে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল। শুধু তাই নয়, জানা গিয়েছে, যে নির্দিষ্ট পরিসীমায় সমীক্ষা চালানো হয়েছিল তার একটি অংশে একটি শিবলিঙ্গও দেখা গিয়েছে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সমীক্ষা দলের অংশ হিসেবে থাকা হিন্দু পক্ষের আইনজীবী হরিশঙ্কর জৈন, দ্রুত বারাণসী আদালতে আবেদন করেন।

পাশাপাশি, আদালতকে জানানো হয় যে, সেখানে শিবলিঙ্গ পাওয়া গেছে। আর স্বাভাবিকভাবেই যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রমাণ। শুধু তাই নয়, সিআরপিএফ কমান্ড্যান্টকে জায়গাটি সিল করার নির্দেশ দেওয়ারও দাবি জানানো হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে সিনিয়র ডিভিশন জজ রবি কুমার দিবাকর অবিলম্বে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে জায়গাটি সিল করার নির্দেশ দেন।

মুসলমানদের প্রবেশে বাধা দেওয়ার দাবি:
মূলত, সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট হরিশঙ্কর জৈন আদালতে আবেদন করে বলেন, সোমবার সমীক্ষা চলাকালীন মসজিদ কমপ্লেক্সে শিবলিঙ্গ পাওয়া গেছে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ। এমন পরিস্থিতিতে সিআরপিএফ কমান্ড্যান্টকে এটি সিল করার নির্দেশ দেওয়া উচিত। এমনকি, বারাণসীর জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে সেখানে মুসলমানদের প্রবেশে বাধা দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া উচিত। পাশাপাশি, তিনি আরও দাবি জানান যে, এখন মাত্র ২০ জন মুসলমানকে নামাজ পড়ার অনুমতি দেওয়া উচিত এবং তাঁদের অবিলম্বে ওজু করা থেকেও বিরত রাখতে হবে। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত দেরি না করে দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে যেখানে শিবলিঙ্গ পাওয়া গেছে সেটি সিল করার নির্দেশ দেন।

কেশব মৌর্য বলেন, সনাতন হিন্দু ঐতিহ্য পৌরাণিক বার্তা পেয়েছে:
এই প্রসঙ্গে ডেপুটি সিএম কেশব প্রসাদ মৌর্যও এই বিষয়ে নিজের বক্তব্য জানিয়েছেন। তিনি টুইটে জানিয়েছেন যে, বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে জ্ঞানবাপীতে বাবা মহাদেবের প্রকাশ দেশের শাশ্বত হিন্দু ঐতিহ্যকে একটি পৌরাণিক বার্তা দিয়েছে।

হিন্দু পক্ষের দাবি প্রাধান্য পেল:
পাশাপাশি এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, আদালত থেকে নিযুক্ত বিশেষ আইনজীবী বিশাল সিং জানিয়েছেন, যে পরিস্থিতি পাওয়া গেছে তা রিপোর্টে দেখানো হবে। প্রমাণ কারো পক্ষে বাড়ানো হবে না বা কমানো হবে না। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, সমীক্ষা চলাকালীন, উভয় পক্ষই শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সহযোগিতা প্রদান করেছে।

এছাড়াও, সমীক্ষা দলের এক সদস্য জানান, চত্বরের একাংশে জমে থাকা জল সরানো হয়েছে। পরিষ্কার করার পর পাথরের নিচে চাপা পড়ে থাকা অবস্থায় একটি শিবলিঙ্গ পাওয়া যায়। এই শিবলিঙ্গের উচ্চতা নিচ থেকে প্রায় ২০ ফুট বলে জানা গেছে। যদিও, মুসলিমরা সেটিকে জলের ফোয়ারা হিসেবে অভিহিত করছেন। এখানে ওজু করা হয়। অনেক কষ্টে শিবলিঙ্গটির সন্ধান মেলে বলেও জানান তিনি।

এদিকে, এই শিবলিঙ্গের আবিষ্কার হিন্দু পক্ষের দাবিকে আরও জোরালো করেছে। এই প্রসঙ্গে হিন্দু পক্ষের আইনজীবী সুধীর ত্রিপাঠী বলেছেন যে, “শিবলিঙ্গটি নন্দী মহারাজের ঠিক সামনে পাওয়া গেছে। আমরা এই জায়গাটি সিল করার জন্য আদালতে আবেদন করেছি। যা সিল করার নির্দেশও দেয় আদালত।”

পাশাপাশি, ডিজিসি সিভিল মহেন্দ্র প্রসাদ পান্ডে বলেছেন যে, শিবলিঙ্গের আকারটি পূর্বে পরিবর্তন করার চেষ্টা করা হয়েছিল। নন্দীর ঠিক সামনেই শিবলিঙ্গটি পাওয়া গেছে, তাই প্রত্নতাত্ত্বিক সমীক্ষার দাবি উঠেছে।

এছাড়াও, বার কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার সদস্য শ্রীনাথ ত্রিপাঠী বলেছেন যে, আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্টটি নিশ্চিত করার জন্য একটি তদন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিক সমীক্ষা দ্বারা সমস্ত তদন্ত করা দরকার। এদিকে, হিন্দু পক্ষের দাবি, শিবলিঙ্গটি নন্দী মহারাজের সামনে বেসমেন্টের কাছে মসজিদের মাঝখানে সমাহিত রয়েছে। এই বিশালাকার শিবলিঙ্গের রং সবুজ।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কাশী বা বারাণসীর বিখ্যাত বিশ্বনাথ মন্দিরের গায়েই রয়েছে এই জ্ঞানবাপী মসজিদ। ঐতিহাসিকরা মনে করছেন যে, একাধিকবার বিদেশি হানাদারদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই মন্দিরটি। তারপরেই ১৬৬৯ সালে মূল মন্দিরটি দখল করে জ্ঞানবাপী মসজিদ তৈরি করেন মুঘল বাদশাহ ঔরঙ্গজেব।

 

তবে, এখনও ওই মসজিদের দেওয়ালে হিন্দু দেবদেবীর ছবি দেখা যায়। তবে, অষ্টাদশ শতকে হিন্দুদের আবেগকে মান্যতা দিয়েই মসজিদের একদম কাছেই আজকের বিশ্বনাথ মন্দিরটি তৈরি করেন মারাঠা রাজ্য মালওয়ার রানি অহল্যাবাই হোলকর।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর