চব্বিশেই বিধানসভা নির্বাচন বাংলায়! শুভেন্দু অধিকারী জোরালো দাবি ঘিরে জোর জল্পনা

বাংলাহান্ট ডেস্ক : কয়েক দিন আগে বঙ্গ সফরে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। দলীয় সূত্রে খবর বঙ্গ বিজেপির কাছে সেদিনই চলে গিয়েছিল কড়া বার্তা। আর দেখানো যাবে ৩৫৬ ধারার ভয়। মাঠে ময়দানে নেমেই করতে হবে লড়াই। এদিকে এতদিন রাষ্ট্রপতি শাসনের ফাঁকা আওয়াজ শুনিয়েই বাজার গরম করে রাখতেন বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব। আর এখন, অমিত শাহের নির্দেশে বিপাকে তাঁরাই।

বাংলায় ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে ২১-এ নির্বাচনের পর থেকেই বেশ সরব ছিল বঙ্গ বিজেপি। একাধিকবার বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারির কথা তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এবার আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে বিস্ফোরক দাবি করে বসলেন এই বিজেপি নেতা। তাঁর দাবি, ‘ একসঙ্গেই করতে হবে ২০২৪-এর লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচন।’ কী ভাবে হবে তা অবশ্য ওঁর জানার কোনও দরকার নেই।

একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে গত বছর তৃতীয় বারের জন্য বাংলার মসনদে বসেছে তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার। তারপর থেকে শুরু হয়েছ বিজেপি ছেড়ে আবার তৃণমূলে যোগ দেওয়ার ঝড়। একের পর এক বড় বড় বিজেপি নেতাই ইতিমধ্যে নাম লিখিয়ে ফেলেছেন ঘাসফুলে। কিন্তু এত কিছুর পরেও মমতার সরকার পাঁচ বছর মেয়াদ সম্পূর্ণই করতে পারবে না বলে দাবি করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর। যদিও কোন সূত্রে অংক মিলিয়ে তাঁর এই দাবি তা একমাত্র তিনিই বলতে পারেন। শুভেন্দু দাবি করেন, আগামী ২০২৪ সালে দেশের লোকসভা ভোটের সঙ্গেই এ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হবেই। তৃণমূল শিবির যদিও এমন দাবি মোটেই পাত্তা দিচ্ছে না। উল্টে বিরোধী দলনেতাকে কটাক্ষই করেছেন তৃণমূল সমর্থকেরা।

শুক্রবার বাঁকুড়ার সোনামুখীতে ছিল বিজেপির ‘সংকল্প যাত্রা’। সেই যাত্রায় অংশগ্রহণ করেন শুভেন্দুও। সেখানে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আর অপেক্ষা করতে হবে না ২০২৬ পর্যন্ত, ২০২৪-এই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হবে।’ বিরোধী দলনেতা এর আগেই দাবি করেছিলেন, তৃণমূল সরকার রাজ্য শাসন করতে গিয়ে চরম আর্থিক সংকট সৃষ্টি করছে। আইনশৃঙ্খলার হালও খুবিই শোচনীয়। মূলত, রাজ্যের কোষাগারের শোচনীয় অবস্থার জন্য এই সরকার চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। অসহায় অবস্থায় শাসক দল হাল ছেড়ে দেবে। আর তখনই এগিয়ে আসবে বিধানসভা নির্বাচন। প্রসঙ্গত, বাম আমলে ১৯৯১ সালে রাজ্যে বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচন একসঙ্গে করা হয়েছিল। সেই সময় রাজ্য সরকারের পাঁচ বছর মেয়াদ ধরলে বিধানসভা ভোটের আরও এক বছর বাকি ছিল।

শুভেন্দুর দাবির উত্তরে রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘বিজেপি ছেড়ে দলে দলে সবাই বেরিয়ে যাচ্ছে। দিল্লির কাছে রাজ্যের নেতাদের বিশ্বাসযোগ্যতা ঠেকেছে তলানিতে গিয়ে। এই অবস্থায় মুখরক্ষা করতে এই রকম গাজর ঝুলিয়ে দল বাঁচানোর চেষ্টা করছে শুভেন্দ! ও নিজেও জানেন, ও সব হবে না কোনওদিন।’

রাজ্যের বিরোধী দলনেতা এ দিন অভিযোগ করেন, রাজ্যে একের পর এক বড় বড় দুর্নীতির ঘটনা যখন প্রকাশ্যে আসছে, তখন অন্য দিকে নজর ঘোরানোর নানা রকম চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার। তিনি বলেন, ‘যখন এই রাজ্যের বড় বড় মন্ত্রী রগড়ানি খাচ্ছেন, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ৪৮ ঘণ্টার জন্য নিঁখোজ হয়ে যাচ্ছেন, তখন অর্জুন সিংহের নামে তিন দিন ধরে ‘টক শো’ চলছে। কখনও বা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য বদলের কথা বলেও প্রসঙ্গ ঘোরানোর চেষ্টা হচ্ছে।’ কেন্দ্রের তথ্যমিত্র কেন্দ্রগুলিকে বন্ধ করে ‘বাংলা সহায়তা কেন্দ্র’ করে হাজার হাজার দলীয় ক্যাডার তৈরি করা হয়েছে, মিড-ডে মিলের সুপারভাইজ়ার নিয়োগেও হয়েছে চূড়ান্ত কারচুপি হয়েছে।

এর আগেও রাজভবন থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এমন কথাই বলতে শোনা গিয়েছে শুভেন্দু অধিকারীকে। রাষ্ট্রপতি শাসনের ফানুস চুপসে যাওয়ার পর এবার নন্দীগ্রামের বিধায়কের এই নতুন দাবি নিয়ে সরগরম বাংলা।

তবে কী রাজ্যে বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার দিকেই ইঙ্গিত করলেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক? নির্ধারিত সময়ের আগে রাজ্যে ফের একবার বিধানসভা নির্বাচন হতে পারে বলে দাবি করলেন শুভেন্দু। এর আগেও একাধিকবার রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার পক্ষে আওয়াজ তুলেছিলেন তিনি। রামপুরহাট বগটুইকাণ্ডের পর সেই দাবি আরও জোরালো হয়। সম্প্রতি অমিত শাহ বঙ্গ সফরে আসার পর সেই নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করেছেন বলেও মনে করেছিল রাজনৈতিক মহলের একাংশ। যদিও অমিত শাহের মন্তব্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের বিন্দুমাত্র ইঙ্গিতও মেলেনি।

Sudipto

সম্পর্কিত খবর