করোনা প্রাণ কেড়েছে মা-বাবার! দুঃখ ভুলিয়ে সেরা হওয়া ছাত্রীকে ২৯ লক্ষ টাকা মেটানোর নোটিস

বাংলা হান্ট ডেস্ক: জীবন কখন কাকে কোন পথে চালায় তা বলতে পারেনা কেউই। করোনা মহামারি কেড়ে নিয়েছে তার একমাত্র আশ্রয় বাবা-মা দুজনকেই। তার ছোট্ট কাঁধে চেপেছে ছোট ভাইয়ের দেখাশোনা করার বড় দায়িত্ব। তার মধ্যেই সে চালিয়ে গেছে অদম্য লড়াই। সাফল্যও পেয়েছে সে। দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষায় ৯৯.৮ শতাংশ নম্বর পেয়ে মধ্যপ্রদেশে সেরা হয়েছে বনিশা পাঠক। জীবনের লড়াইতে জয়লাভ করলেও সেই বনিশাকেই এখন পড়তে হয়েছে আইনি জটিলতায়।

তার মৃত বাবার নেওয়া গৃহঋণের বকেয়া টাকা মেটানোর আইনি নোটিসে রাতের ঘুম উড়েছে তার। বনিশা এখনও অপ্রাপ্তবয়স্ক। ফলে বাবার জমানো টাকা কিছুই হাতে পায়নি সে। ঋণের কিস্তি শোধ দেওয়ার মতো ক্ষমতা নেই তার। এই কথা জানিয়ে বেশ কয়েকবার কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিলেও, এখনও তাঁদের তরফ থেকে কোনও জবাব পায়নি বছর সতেরোর কিশোরী।

বনিশার বাবা জীতেন্দ্র পাঠক ছিলেন এলআইসির এজেন্ট। অফিস থেকে মোটা টাকার গৃহঋণ নেন তিনি। কিন্তু ২০২১ সালের মে মাসে, কোভিড-১৯ মহামারির ভয়াবহ দ্বিতীয় তরঙ্গ বনিশাদের জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছিল তাঁকে। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে মৃত্যু হয় বনিশার মা সীমা পাঠকেরও। তারপর থেকে মামার প্রফেসর অশোক শর্মার বাড়িতেই থাকে বনিশা এবং তার ছোটভাই ১১ বছরের বিভান। বাবা-মায়ের মৃত্যুর তীব্র শোক এবং মানসিক যন্ত্রনা সামলে, নিজের পড়াশোনার বিন্দুমাত্র ক্ষতিও হতে দেয়নি বনিশা। বোর্ডের পরীক্ষায় ৯৯.৮ শতাংশ নম্বর পাওয়ার পর সে একটি কবিতায়ও লিখেছিল, ’তোমাকে ছাড়াই আমি মাথা তুলে দাঁড়াবো বাবা’। সেইসময় রাজ্যের সকলের মুখে মুখে ঘুরেছিল সেই পঙক্তিটি।

তবে, গত কয়েক মাস ধরে তার মৃত বাবার নামে ক্রমাগত আইনি নোটিস পাঠিয়ে যাচ্ছে এলআইসি কর্তৃপক্ষ। প্রতিটি নোটিসের বয়ানই প্রায় এক, ‘বকেয়া না মেটালে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে’। শেষ নোটিস এসেছে গত ২ ফেব্রুয়ারি, তাতেও জানানো হয় এই বকেয়ার পরিমাণ ২৯ লক্ষ টাকা! এরপরই এলআইসি কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয় সে। বনিশা লেখে সে আর তার ভাই দুজনেই অপ্রাপ্ত বয়স্ক। তার বাবার জমানো টাকা বা মাসে মাসে পাওয়া কমিশনের টাকা কোনও ভাবেই তুলতে পারবে না তারা। তাই, তার বয়স ১৮ না হওয়া পর্যন্ত ওই বকেয়া মেটানো সম্ভব নয়। বনিশার মামাও জানিয়েছেন, অত টাকা দেওয়ার মতো উপায় নেই তাঁর। জীতেন্দ্র খুব বড় মাপের এজেন্ট ছিলেন। মিলিয়ন ডলার রাউন্ড টেবল নামে সুপরিচিত বীমা ক্লাবের নিয়মিত সদস্যও ছিলেন তিনি। তাই, তাদের আবেদন এলআইসি খুব সহজেই মেনে নেবে বলে আশা করেছিল বনিশা।

কিন্তু, অদ্ভুত ভাবে এই বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে এলআইসি কর্তৃপক্ষ। তবে ভোপালের এলআইসি কর্তারা জানিয়েছেন, বনিশার আবেদন ইতিমধ্যেই এলআইসির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কর্তারা বনিশা এবং তাঁর মামাকে মৌখিকভাবে জানিয়েছে, বনিশার ১৮ বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত আপাতত আর কোনও নোটিস পাঠানো হবে না। তবে, এলআইসি কর্তাদের মুখের কথায় আর ভরসা রাখতে পারছে না বনিশারা। তাদের দাবি, যেভাবে সরকারিভাবে বকেয়া মোটানোর কথা জানিয়েছিল সংস্থা। সেই রকমভাবেই নোটিস যে আর পাঠানো হবে না, সেটাও সরকারিভাবেই জানিয়ে দেওয়া হোক লাইফ ইনশিওরেন্স কর্পোরেশন অফ ইণ্ডিয়ার তরফ থেকে।

Sudipto

সম্পর্কিত খবর