বাংলা হান্ট ডেস্ক: আমাদের দেশে যাতায়াতের অন্যতম একটি মাধ্যম হল ট্রেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিদিনই লক্ষ লক্ষ মানুষ ট্রেনে চেপেই পৌঁছে যান নিজেদের গন্তব্যে। এমতাবস্থায়, যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্যের কথা মাথায় রেখে একাধিক জায়গায় ঢেলে সাজানো হচ্ছে বিভিন্ন স্টেশনকে। সেই রেশ বজায় রেখেই সম্প্রতি ব্যাঙ্গালোর শহরের বুকে ভারতের প্রথম “সেন্ট্রালাইজড এসি রেলওয়ে টার্মিনাল” পরিষেবা চালু করা হয়েছে।
এমনকি, এই টার্মিনালটির গঠন ও পরিষেবা এতটাই অত্যাধুনিক যে এটি যেকোনো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে সহজেই টেক্কা দিতে পারে। মূলত, বৈয়াপ্পানাহাল্লির এই টার্মিনালটি স্যার মোক্ষগুন্দম শ্রীনিবাস শাস্ত্রী বিশ্বেশ্বরায়ার নামে নামকরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি, এটি সংক্ষেপে এসএমভি টার্মিনাল হিসেবেও পরিচিত। উল্লেখ্য যে, স্যার মোক্ষগুন্দম শ্রীনিবাস শাস্ত্রী বিশ্বেশ্বরায়া মাইসোরের দেওয়ান ছিলেন। পাশাপাশি, পেশাগতভাবে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে ব্যাঙ্গালোরের একাধিক উন্নয়নমূলক কাজেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। এছাড়াও, তাঁর মহতী কর্মকান্ডের জন্য তিনি ১৯৫৫ সালে “ভারত রত্ন” সম্মানেও ভূষিত হন।
এদিকে, নবনির্মিত এই টার্মিনালটি যাত্রীদের সমস্তরকম সুবিধা এবং পরিষেবার দিকটিকে মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, এই অত্যাধুনিক প্রকল্পটি তৈরি করতে প্রায় ৩১৪ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। মূলত, ব্যাঙ্গালোর সিটি এবং যশবন্তপুর রেলওয়ে টার্মিনালের পর শহরের তৃতীয় প্রধান রেল টার্মিনাল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এটি। ইতিমধ্যেই গত ৬ জুন অর্থাৎ সোমবার থেকে এই টার্মিনালে রেল চলাচল সফলভাবে শুরু হয়েছে। মূলত, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই টার্মিনাল তৈরির কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ২০২২-এর মার্চে এসে তা সম্পূর্ণভাবে সমাপ্ত হয়।
কি কি রয়েছে এই টার্মিনালে?
জানা গিয়েছে এই টার্মিনালের ভিতরে যাত্রীদের জন্য অত্যাধুনিক প্রতীক্ষালয়, ফুড কোর্ট এবং ভিআইপি লাউঞ্জের ব্যবস্থা রয়েছে। পাশাপাশি, টার্মিনালের ছাদের উপরে লাগানো রয়েছে সোলার প্যানেল। এছাড়াও, রয়েছে চলমান সিঁড়ি, লিফট এবং ফুট ওভারব্রিজের ব্যবস্থাও। যা প্রত্যক্ষভাবে সুবিধা প্রদান করবে যাত্রীদের। এদিকে, টার্মিনালের সামনেই গাড়ি পার্ক করার জন্য একটি সুবিশাল জায়গা রয়েছে। যেখানে একইসাথে প্রায় ২৫০ টি গাড়ি, ২০ টি ক্যাব ট্যাক্সি, ৫০ টি অটো-রিকশা এবং ৫ টি বাস সহ ৯০০ টি বাইক দাঁড়াতে পারে।
অপরদিকে, ট্রেন যাত্রীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে এই টার্মিনালের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগের ব্যবস্থাও বাড়ানো হচ্ছে। যার ফলে যাত্রীরা খুব সহজেই এবং কম সময়ে এই টার্মিনালে পৌঁছতে পারবেন। পাশাপাশি, এই টার্মিনালের প্রতিটি দরজায় থাকছে “অটোম্যাটিক লক সিস্টেম”-এর সুবিধা। ভিতরে সর্বত্র রয়েছে ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ডও। এই রেল টার্মিনালে প্রবেশ করার মুহূর্তেই দেখা যাবে স্যার বিশ্বেশ্বরায়ার একটি মূর্তি। যার অন্য দিকে এলইডি আলো দিয়ে লেখা রয়েছে “আই লাভ বেঙ্গালুরু”।
জানা গিয়েছে ক্রান্তিবীর সঙ্গোলি রায়ান্না (কেএসআর) এবং যশবন্তপুর রেল স্টেশনে যাত্রীদের ভিড় কমাতেই এই অত্যাধুনিক টার্মিনালটি নির্মাণ করা হয়েছে। মোট ৪,২০০ বর্গমিটার ক্ষেত্রের এই টার্মিনালে সাতটি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। পাশাপাশি, ১৫ মিটার চওড়া ও ৬০০ মিটার দীর্ঘ প্ল্যাটফর্মগুলি একে অপরের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই রেল টার্মিনাল দিয়ে কোছুভেলি হমসফর এক্সপ্রেস ও বানসওয়াডি-এর্নাকুলম এক্সপ্রেস সহ মোট ৫০টি ট্রেন চলবে বলে আপাতত জানা গিয়েছে।
এদিকে, এই টার্মিনালে চলাচলের জন্য দু’টি ভূগর্ভস্থ পথ তৈরি করা হয়েছে যা একে অপরের সমান্তরাল ভাবে রয়েছে। এছাড়াও, সৌন্দর্যায়নের জন্য দেওয়ালে রয়েছে বেঙ্গালুরুর উল্লেখযোগ্য সব পর্যটন কেন্দ্রের ছবি। এমতাবস্থায়, নতুন এই টার্মিনালকে ঘিরে স্বভাবতই আগ্রহ বাড়ছে যাত্রীদের মধ্যে।