বাংলা হান্ট ডেস্ক: পয়গম্বর মহম্মদকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে বর্তমানে কার্যত উত্তাল গোটা দেশ। পাশাপাশি, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশের বক্তব্যের পর এটি একটি আন্তর্জাতিক বিষয় হয়ে উঠেছে। এমনকি, এর পেছনে পাকিস্তানের হাত রয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ প্যাটেলও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, পাকিস্তান এই বিষয়টির পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচ লক্ষেরও বেশি টুইট করেছে। মূলত, পাকিস্তান চেয়েছিল ইসলামিক এবং বিশেষ করে আরবের দেশগুলির সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি হোক। কিন্তু, আদৌ তা ঘটেনি। আসুন জেনে নেওয়া যাক পাকিস্তানের সমস্ত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কেন মুসলিম দেশগুলির সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের কোনো অবনতি হয়নি?
প্রথমে পুরো বিষয়টি জেনে নিন:
গত ২৭ মে বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদ মামলায় টেলিভিশনের বিতর্কের সময় পয়গম্বর মহম্মদকে নিয়ে নূপুর শর্মার একটি মন্তব্যের পর বিতর্ক শুরু হয়। এমনকি, ওই ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পরে, বিজেপি গত ৫ জুন নূপুর শর্মাকে সমস্ত দলীয় পদ থেকে সরিয়ে দেয় এবং তাঁকে প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও বরখাস্ত করে। এছাড়াও, নূপুরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় এফআইআর দায়ের করা হয়।
১৫ টি মুসলিম দেশ তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছে:
ইতিমধ্যেই বিশ্বের বহু মুসলিম দেশ নূপুরের এই বিতর্কিত মন্তব্যের প্রতিবাদ করেছে। কাতার, ইরান, ইরাক, কুয়েত, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, মালদ্বীপ, ওমান, জর্ডন, বাহরিন, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তান সহ প্রায় ১৫ টি দেশ এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে সব দেশকেই জবাব দেওয়া হয়েছে ভারতের তরফে। এই প্রসঙ্গে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক স্পষ্টভাবে বলেছে, এই দেশে সব ধর্মকে সম্মান করা হয়। পাশাপাশি, এখানে সব ধর্মের মানুষ বসবাস করেন এবং তারা ধর্মীয় স্বাধীনতাও পেয়েছেন।
তিনটি বিষয় জেনে নিন, যা মুসলিম দেশগুলি ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ককে দৃঢ় করেছে:
ঘটনা-১: গত সপ্তাহে ইরানের বিদেশমন্ত্রী আবদুলহায়েন তিন দিনের সফরে ভারতে আসেন। তিনি বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (NSA) অজিত ডোভালের সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করেছেন। পাশাপাশি, দুই নেতা বেসামরিক ও ব্যবসায়িক বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
এদিকে, ইরানের বিদেশমন্ত্রীর ভারত সফরের পরপরই শনিবার ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সিতে (IAEA) ভোটগ্রহণ হয়। এটি ইরানের নিন্দা জানিয়ে একটি প্রস্তাব এনেছিল, যার খসড়া করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানি। এর সমর্থনে ৩০ টি ভোট পড়ে। এতে মূলত, ভারত ইরানকে সমর্থন করে। আসলে ওই ভোটের সময় ভারত অনুপস্থিত ছিল। পাশাপাশি, ভারতের মতো পাকিস্তান ও লিবিয়া এই ভোটে অংশ নেয়নি।
ঘটনা-২: দু’দিন আগেই ভারতের উপরাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডু কাতার সফর শেষে ভারতে ফিরেছেন। বহু বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হয়েছে।
ঘটনা-৩: আগামী সপ্তাহে ভারতে আসছেন বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী। এরপর চলতি মাসেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জার্মানি সফরের প্রস্তাব করা হয়েছে। তিনি সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতেও যাবেন। মূলত, চলতি বছরের জানুয়ারিতে এই সফরের কথা থাকলেও করোনার কারণে তা স্থগিত করা হয়। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আগামী মাসে ভারত সফর করতে পারেন।
মুসলিম দেশগুলির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় থাকার আরও দু’টি কারণে জেনে নিন:
১.অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব: আরবের দেশগুলির সাথে ভারতের একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব রয়েছে। আমরা যদি ২০২১-২২ সালের পরিসংখ্যান দেখি তাহলে দেখতে পাবো, ভারত কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, বাহরিন, ইরাক, কুয়েত, সৌদি আরব, ওমানের মতো দেশগুলির সাথে ১৪.৭ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি ব্যবসা করেছে। এতে ভারত সর্বোচ্চ সংখ্যক পণ্য আমদানি করেছে। অর্থাৎ এর ফলে সরাসরি সুবিধা পেয়েছে এইসব দেশ। একই সঙ্গে ভারত থেকেও খাদ্যশস্য ও অন্যান্য খাদ্যবস্তু ওইসব দেশে ব্যাপক হারে যায়। এমতাবস্থায়, বিশ্বজুড়ে আর্থিক মন্দার আবহে কোনো দেশই চাইবেনা কোনো তৃতীয়পক্ষের কারণে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে।
২. ভারতের শক্তিশালী অবস্থান: বিশ্বে ভারতের সামরিক অবস্থান অত্যন্ত শক্তিশালী। এমনকি, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতেও ভারতের অবস্থানের দিকে নজর রাখছে গোটা বিশ্ব। উদাহরণস্বরূপ, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (IAEA) ইরানকে নিন্দা জানিয়ে নিয়ে আসা প্রস্তাবের বিষয়টির অবতারণা করা যেতে পারে। ভারত যদি এই প্রস্তাবকে সমর্থন করত তাহলে ইরানের জন্য বিষয়টি আরও কঠিন হয়ে উঠত। তাছাড়া, বর্তমানে এই মুসলিম দেশগুলির সকল বিষয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের সমর্থনের প্রয়োজন রয়েছে।