ক্লাসে পড়ুয়ারা না আসায় পড়াতে পারেননি! বেতনের ২৩ লক্ষ টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত শিক্ষকের

বাংলা হান্ট ডেস্ক: প্রত্যেক চাকুরিজীবী নিজেদের কাজের জন্য প্রতি মাসে বেতন পান। শিক্ষকতা থেকে শুরু করে চিকিৎসক-ইঞ্জিনিয়ার সহ সমস্ত পেশার মানুষেরাই তাঁদের নিজ নিজ কর্মের ভিত্তিতে উপার্জন করেন। কিন্তু, নিজের বেতন পেয়ে ফের সেটিকে ফেরত দেওয়ার ঘটনা কি কখনও শুনেছেন? নিশ্চয়ই না। তবে, এবার ঠিক সেইরকমই এক ঘটনার প্রসঙ্গ সামনে এসেছে। যার পেছনে রয়েছে এমন এক কারণ যেটি জানার পর কার্যত চমকে যাবেন আপনি।

মূলত, এই ঘটনাটি ঘটেছে বিহারে। জানা গিয়েছে, সেখানকার মুজাফফরপুরের বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত নীতীশ্বর কলেজের লালন কুমার নামের একজন সহকারী অধ্যাপক তাঁর প্রায় তিন বছরের বেতন ফেরত দিতে চেয়েছেন। ইতিমধ্যেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে চিঠি লিখে রেজিস্ট্রারের কাছে ২৩ লক্ষ ৮২ হাজার ২২৮ টাকার চেক হস্তান্তর করেন। তবে, রেজিস্ট্রার তাঁর আবেদন গ্রহণ করে চেক ফেরত দেন বলে জানা গিয়েছে।

   

পুরো ঘটনাটি ঠিক কী?
খবর অনুযায়ী, লালন কুমার নীতিশ্বর কলেজের হিন্দির সহকারী অধ্যাপক। এমতাবস্থায়, তিনি জানিয়েছেন যে, গত দু’বছর ৯ মাসে খুব কম শিক্ষার্থী তাঁর ক্লাসে উপস্থিত হয়েছে। অর্থাৎ তিনি পড়ুয়াদের পড়াতেই পারেন নি। পাশাপাশি, লালন আরও বলেন, তিনি যখন পড়াননি তখন তিনি কিভাবে বেতন নিতে পারেন? যে কারণে, উপাচার্যকে লেখা চিঠিতে তিনি RDS বা MDDM কলেজে বদলির অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে, তাঁর এই আবেদনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এই বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে সাক্ষাৎকারের সময়ে তিনি জানান, “এর আগে ৬ বার আবেদন করেছি। আমি চাই ওই নির্দিষ্ট সময়ের সমস্ত বেতন ফেরত নেওয়া হোক এবং এতেই আমি স্বস্তি পাব। আমি কাজ করেছি কিন্তু আমি এটা নৈতিকভাবে সঠিক বলে মনে করি না। আমার যেখানে পোস্টিং হয়েছে সেখানে ক্লাস চলছে না। আমি এতে সন্তুষ্ট নই। আমাদের ক্লাসে প্রায় ১৩০ জন পড়ুয়া রয়েছে। কিন্তু তারা আসে না।”

এদিকে, জানা গিয়েছে, বেশ কয়েকবার বদলির ইচ্ছা প্রকাশের পর বেতন ফেরত দিতে এই পদক্ষেপ নিয়েছেন লালন। উল্লেখ্য যে, প্রফেসর লালন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং জেএনইউ থেকে স্নাতকোত্তর করার পর দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি এবং এমফিল ডিগ্রি করেছেন। তিনি ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে কলেজে যোগদানের ক্ষেত্রে নিয়োগপত্র পান। এমতাবস্থায়, ওই কলেজে পড়াশোনার পরিবেশ নেই দেখে তিনি বারংবার এই সমস্যাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে জানান। শুধু তাই নয়, লালন এমন একটি কলেজে তাঁর নিয়োগের দাবি জানান যেখানে তিনি শিক্ষকতার সুযোগ পাবেন।

1657107190483 whatsapp image 2022 07 06 at 3.35.23 pm

বিশ্ববিদ্যালয়ের কি মত:
এই প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ডক্টর আর কে ঠাকুর জানান, প্রফেসর লালন গত ৪ জুলাই চেক নিয়ে তাঁর অফিসে পৌঁছেছিলেন কিন্তু সেই চেকটি গৃহীত হয়নি। তিনি এই মুহূর্তে বিষয়টি আরও বোঝার চেষ্টা করছেন বলে জানা গিয়েছে। এদিকে, লালনকে পিজি কলেজে বদলির প্রশ্নে আর কে ঠাকুর বলেন, পিজি কলেজে যোগদানের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সিনিয়র ও অভিজ্ঞ শিক্ষকদের প্রাধান্য দেওয়া হয়। এমতাবস্থায়, রেজিস্ট্রার বলেন, পড়ুয়াদের পড়াতে অন্য কোথাও না গিয়ে প্রফেসর লালন এখন যেখানে রয়েছেন সেখানেই ছাত্রদের ক্লাসে আসতে অনুপ্রাণিত করতে পারেন।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর