বাংলা হান্ট ডেস্ক : তিনি অর্জুন। না না, কুরুক্ষেত্রের গাণ্ডীবধারী অর্জুন নন। ইনি অর্জুন সিং (Arjun Singh)। ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ (BJP MP of Barrackpore) তিনি। যদিও সেটা নিতান্তই খাতায় কলমে। বিধানসভার আগে তৃণমূলে (TMC) ‘দম বন্ধ’ হয়ে যাওয়ায় ঝাঁপ মারেন পদ্মফুলে। কিন্তু বিধানসভা ভোটে বিজেপির (BJP) ভরাডুবি হয়। তারপরই অর্জুনবাবুর আবার পদ্মফুলের পাপড়ি লেগে হাঁচি শুরু হওয়ায় পালিয়ে আসেন তৃণমূলে। কিন্তু সেই সময় নিজের ছেলে তথা ভাটপাড়ার বিধায়ক পবন সিংহকে (Pawan Singh) বগলদাবা করে তৃণমূলে আনতে পারেননি অর্জুন। এটা কী নিতান্তই ব্যর্থতা? নাকি রয়েছে কোনও রাজনীতির ছক?
পিতা-পুত্র দুজনেই দুলছেন পদ্মফুলের দোলনায় : প্রসঙ্গত, বছর খানেক আগে এই পবন সিংকেই একদল ‘দুষ্কৃতি’ বোমা নিয়ে তাড়া করে ভাটপাড়ার বুকে। খবর পেয়েই ‘অ্যাকশনে’ নামেন স্বয়ং অর্জুন। তখন তাঁর হাতে ‘গাণ্ডীব’ জাতীয় কিছু ছিল কিনা তা যদিও খতিয়ে দেখেনি সংবাদ মাধ্যম। অবশ্য পিতা-পুত্র দুজনেই তখন দুলছেন পদ্মফুলের দোলনায় (পড়ুন, রয়েছেন বিজেপিতে)। সেই সময় ‘বাংলার কালারফুল বয়’ মদন মিত্রর সঙ্গে লাইভ টিভি বিতর্কে অত্যন্ত কুৎসিত বিবাদে জড়িয়ে পড়েন অর্জুন। পড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েই ‘হে মোর প্রাণসখা’ বলে একে অপরকে জড়িয়েও ধরেন। কিন্তু সেই অর্জুনই কেন ব্যর্থ হলেন নিজের পুত্র পবনকে ‘সঠিক রাস্তা’ দেখানোর? এখানে উঠে আসছে কিছু রাজনৈতিক লাভ ক্ষতির হিসেব।
১) শিল্পী মুকল রায়ের ‘অনুপ্রেরণা’ : দল বদল যদি শিল্প হয়, তাহলে মুকুল রায় তার সবচেয়ে বড়ো শিল্পী। মুকুলবাবু বিজেপির বিধায়ক, কিন্তু আছেন তৃণমূলে। মুকুলের ছেলে শুভ্রাংশু তৃণমূলের টিকিটে দুবারের বিধায়ক। কিন্তু ২০১৯ সালে বিজেপিতে যোগ দেন। তবে একুশে বিজেপির স্বপ্নভঙ্গ হওয়ার পর বাবার সঙ্গে তিনিও যোগ দেন তৃণমূলে।
তবে, মুকুল রায় তৃণমূলে যোগ দিলেও নিজেকে বিজেপি বিধায়ক বলেই পরিচয় দিয়ে এসেছেন এতদিন। যদিও, রাষ্ট্রপতি ভোটের দিন আবার তিনি কোনও রাখঢাক না করেই নিজেকে তৃণমূলের বিধায়ক ঘোষণা করেছেন। তবে, বিজেপি ছাড়লেও এখনও তিনি বিধায়ক পদ ছাড়েন নি।
২) পবন তো বড় হয়েছে : পিতার আদেশ অমান্য করে কি কিছুটা বিদ্রোহী হয়ে উঠেছেন পবন? সম্প্রতিক পরিস্থিতি কিন্তু সেদিকেও ইঙ্গিত করছে। ১৮ জুনের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তৃণমূলের বিধায়ক এমপিরা দল বেঁধে ভোট দিতে আসেন। সেই দলে কিন্তু ছিলেন না পবন। অর্জুন পুত্র এমন পরিস্থিতিতে ভোট দিয়েছেন যে, উনি কার দলে ছিলেন, সেটা বোঝা দায়। কারণ তিনি তৃণমূলের সাংসদ-বিধায়ক আর বিজেপির সাংসদ-বিধায়কদের একদম মধ্যে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছেন। অর্জুন এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘পবন তো বড় হয়েছে। ও দু’বারের বিধায়ক। নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আমার সঙ্গে এ বিষয়ে কোনও কথা হয়নি।’
এর আগে কিন্তু ছেলের বিষয়ে অন্য সুর ছিল অর্জুন সিং-র। যেদিন তিনি তৃণমূলে যোগ দিলেন সেদিন পবনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কোনও রাখঢাক না করেই অর্জুন বলেন, ‘বাবা যখন আছে, ছেলে আর কোথায় যাবে? আজকেই এখানে আসত। কিন্তু ওর শরীরটা একটু খারাপ। মামার বাড়ি গিয়ে লু লেগে গিয়েছিল। আজকেই যেত। বাবা যখন গিয়েছে, আর কোথায় যাবে!’ সেদিনের সেই আত্মবিশ্বাসী সুর কিন্তু এদিন অর্জুনের গলায় আর শোনা গেলো না। তাহলে কি ছেলে পবন সিং-র উপর আশাহত হয়ে পড়েছেন অর্জুন? রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা কি ভোটের ময়দান ছাড়িয়ে ঢুকে পড়েছে অর্জুনের পরিবারেও? নাকি, দুই নৌকায় পা দিয়ে চলছে সিং পরিবার? নাকি আগামী কাল একুশে জুলাইয়ের মঞ্চেই ফের তৃণমূলে অভিষেক হবে পবনের?