বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমানে ভারত তথা সমগ্ৰ বিশ্বের চোখ রয়েছে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য চলমান প্রক্রিয়ার দিকে। এমতাবস্থায়, ভারতীয়দের কাছে এটা একটা বাড়তি কৌতূহল জোগাচ্ছে। কারণ, ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনক (Rishi Sunak)। স্বাভাবিকভাবেই, এই খবর প্রত্যেক ভারতীয়ের কাছেই অত্যন্ত গর্বের। যে শ্বেতাঙ্গরা একটা সময়ে আমাদের দেশে রাজত্ব করেছিল, আজ সেই দেশেরই এক ব্যক্তি ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে পৌঁছনোর পথে পাড়ি দিতে চলেছেন। এমতাবস্থায়, সুনক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন সকলেই। শুধু তাই নয়, ইতিমধ্যেই তাঁর একটি বক্তব্য বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। যেখানে ঋষি নিজেকে একজন “গর্বিত হিন্দু” হিসেবে অভিহিত করেছেন।
গোমাংস ত্যাগ করার আবেদন: ২০২০ সালে, ঋষি সুনক অর্থমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন। সেই সময় তিনি ভগবদ্গীতার উপর হাত রেখে শপথ নিয়েছিলেন। এদিকে, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্যেক ভারতীয়ের কাছে তিনি পছন্দের মানুষ হয়ে ওঠেন। এই প্রসঙ্গে একটি ব্রিটিশ সংবাদপত্রের তরফে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি তাঁর নিজস্ব স্টাইলে উত্তর দেন। ঋষি বলেন, “আমি এখন ব্রিটেনের নাগরিক, কিন্তু আমার ধর্ম হিন্দু। ভারত আমার ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। আমি গর্ব করে বলতে পারি আমি একজন হিন্দু এবং হিন্দু হওয়াই আমার পরিচয়।” উল্লেখ্য যে, সুনকের ডেস্কে গণেশের মূর্তি রয়েছে। এছাড়াও, তিনি ধর্মীয় ভিত্তিতে গোমাংস ত্যাগ করার আবেদন জানান। পাশাপাশি, তিনি নিজেও গরুর মাংস খান না।
এমতাবস্থায়, ২০২০ সাল থেকেই ঋষিকে দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়। উল্লেখ্য যে, সুনক যুক্তরাজ্যের উইনচেস্টার কলেজ থেকে স্কুলের পড়াশোনা করেছেন। যেটি সেখানকার দেশের অন্যতম নামকরা স্কুল। এরপর তিনি আমেরিকার অক্সফোর্ড এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে উচ্চশিক্ষা শেষ করেন। পাশাপাশি, রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার আগে, তিনি গোল্ডম্যান শ্যাক্স এবং আরও কয়েকটি কোম্পানিতে কাজ করেছিলেন।
পাঞ্জাবের সুনক: ঋষি সুনক হলেন পাঞ্জাবি খত্রী পরিবারের সদস্য। ঋষির ঠাকুরদা রামদাস সুনক গুঞ্জরাওয়ালায় থাকতেন। যিনি দেশভাগের পর পাকিস্তানে চলে আসেন। রামদাস ১৯৩৫ সালে গুঞ্জরাওয়ালা ছেড়ে নাইরোবিতে গিয়েছিলেন কেরানির চাকরির জন্য। এদিকে, ঋষির জীবনীকার মাইকেল অ্যাশক্রফট জানিয়েছেন যে, হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের অবনতির কারণে রামদাস সুনক নাইরোবিতে চলে যান। রামদাসের স্ত্রী সুহাগ রানী সুনক গুঞ্জরাওয়ালা থেকে দিল্লিতে এসেছিলেন এবং সাথে তাঁর শাশুড়িও ছিলেন। এরপর তাঁরা ১৯৩৭ সালে কেনিয়া যান।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রামদাস একজন হিসাবরক্ষক ছিলেন যিনি পরে কেনিয়ায় প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়েছিলেন। রামদাস ও সুহাগ রানীর ছয় সন্তান রয়েছে। যাঁর মধ্যে তিন পুত্র ও তিন কন্যা সন্তান ছিল। ১৯৪৯ সালে নাইরোবিতে জন্মগ্রহণকারী ঋষির বাবা যশবীর সুনক ছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন। ১৯৬৬ সালে, যশবীর লিভারপুলে আসেন এবং লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিকিৎসাবিদ্যা অধ্যয়ন করেন। বর্তমানে তিনি সাউথ হ্যাম্পটনে থাকেন। পাশাপাশি, রামদাস সুনকের তিন মেয়েই ভারতে পড়াশোনা করেছেন।
মায়ের পরিচয়: ঋষির দাদু রঘুবীর বেরি পাঞ্জাবের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে তানজানিয়ায় যান। সেখানে তিনি সারাক্ষা সুনককে বিয়ে করেন। জীবনী অনুসারে, সারাক্ষা ১৯৬৬ সালে একটি একমুখী টিকিটে যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন যা তিনি তাঁর বিয়ের গহনা বিক্রি করার পরে কিনেছিলেন। পাশাপাশি, বেরিও যুক্তরাজ্যে চলে যান এবং সেখানে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব নিয়ে বেশ কয়েক বছর কাজ করেন। এরপরে, তিনি ১৯৮৮ সালে ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের অধীনে “মেম্বার অফ অর্ডার” নির্বাচিত হন। এই দম্পতির তিনটি সন্তান ছিল। যার মধ্যে একজন হলেন ঋষির মা ঊষা। তিনি ১৯৭২ সালে অ্যাশটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্মাকোলজিতে ডিগ্রি অর্জন করেন। ঋষির বাবা-মা ১৯৭৭ সালে বিবাহ করেছিলেন।