বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না এমন মানুষ কার্যত খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এমনকি, সরকারের পক্ষ থেকেও ভালো ভাবে পরিষেবা দেওয়ার লক্ষ্যে অনলাইন মারফত একাধিক কাজ করা হচ্ছে। পাশাপাশি, গ্রামাঞ্চলেও ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা চলছে সরকারের পক্ষ থেকে। যদিও, ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর অপব্যবহারও বিপুলভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। পাশাপাশি, এমন অনেক অপরাধও সংগঠিত হচ্ছে যেগুলি সাইবার ক্রাইমের আওতায় আসে। এমতাবস্থায়, সাইবার ক্রাইম মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে Information Technology Act, 2000 লাগু করা হয়েছে।
বেড়েছে সাইবার ক্রাইমের ঘটনা: Information Technology Act, 2000 সম্পর্কে বিশদভাবে জানিয়েছেন চুরুর সরকারি আইন কলেজের অধ্যক্ষ ডক্টর এস কে সাইনি। তিনি বলেছেন যে, ইন্টারনেট ব্যবহারের পাশাপাশি এর অপব্যবহারও বেড়েছে। আর সেই কারণেই বৃদ্ধি পেয়েছে সাইবার ক্রাইমের ঘটনাও। তাঁর মতে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে অবৈধ কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়া, চুরি, ইলেকট্রনিক মানি লন্ডারিংয়ের মত ঘটনা সাইবার ক্রাইমের মধ্যে পড়ে। এগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার তথ্য প্রযুক্তি আইন, ২০০০ এনেছে। সাইবার ক্রাইমের অধীনে, ঘটনাস্থলে একজন ব্যক্তির শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকা আবশ্যক নয়। একই সঙ্গে সাইবার টেররিজমও সাইবার ক্রাইমের ক্যাটাগরিতে আসে।
ব্যাঙ্কিং জালিয়াতি: এই প্রসঙ্গে এস কে সাইনি জানিয়েছেন, ইন্টারনেটের মাধ্যমে আজকাল মানুষ লুঠ ও প্রতারণার মতো কাজও করছে। একই সঙ্গে ব্যাঙ্কিং জালিয়াতির মত ঘটনাও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এই ধরণের ঘটনা রুখতেই আইনে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। যদি কোনো ব্যক্তি ব্যাঙ্কিং জালিয়াতির ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হন, সেক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে IT Act, 2000-এর ধারা 77B, 66D-র অধীনে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এর পাশাপাশি IPC-র 419, 420 এবং 465 ধারাও যোগ করা যেতে পারে। ব্যাঙ্কিং জালিয়াতির ক্ষেত্রে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রিপোর্ট করা উচিত। কারণ, দ্রুত অভিযোগ করলে তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনাও বাড়তে পারে।
এখানে করতে হবে অভিযোগ: এস কে সাইনির মতে, কোনো ব্যক্তি যদি ব্যাঙ্কিং জালিয়াতির শিকার হন বা অন্য কোনো ধরণের সাইবার ক্রাইমের শিকার হন, সেক্ষেত্রে তিনি ভারত সরকারের পোর্টাল https://cybercrime.gov.in/-এ গিয়ে অভিযোগ নথিভুক্ত করতে পারেন। এছাড়াও, সেই ব্যক্তি নিকটস্থ থানায় গিয়ে সাইবার ক্রাইমের অভিযোগও দায়ের করতে পারেন।
ভুয়ো প্রোফাইলগুলিকেও করেছেন সাবধান: সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রায়শই ভুয়ো প্রোফাইলের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এমতাবস্থায়, এস কে সাইনি বলেছেন যে, আইটি আইন, 2000-এ সোশ্যাল মিডিয়ায় থাকা নকল প্রোফাইলগুলির বিষয়ে বিধান দেওয়া হয়েছে। আইটি আইন, 2000-এ ধারা 66B এবং 67-এর অধীনে ভুয়ো প্রোফাইলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। অন্যদিকে, কেউ যদি ডিজিটাল স্বাক্ষরের অপব্যবহার করে থাকেন সেক্ষেত্রে আইটি আইন, 2000-এর ধারা 66C, 71, 73 এবং 74-এর অধীনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এর পাশাপাশি IPC-র 463 এবং 465 ধারাও যোগ করা যেতে পারে।
সাইবার টেররিজম: এস কে সাইনির মতে, পর্নোগ্রাফির জন্যও আইটি অ্যাক্ট, 2000-এ বিধান রয়েছে। আইটি আইন, 2000-এর ধারা 67A-এর অধীনে পর্নোগ্রাফির জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। অন্যদিকে, কেউ যদি সাইবার টেররিজমে জড়িত থাকেন, সেক্ষেত্রে আইটি আইন, 2000-এর ধারা 43C-র অধীনে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। সর্বোপরি, সাইবার টেররিজমে কারাদণ্ডের বিধানও রয়েছে।