বাংলাহান্ট ডেস্ক : থাকতেন ঝাঁ চকচকে ফ্ল্যাটে। প্রত্যেকটি ঘরে বসানো ছিল এসি। যাতায়াত ছিল দামী দামী গাড়িতে। ইচ্ছে হলে মুখে জল আনা খাবার অর্ডার করতেন অনলাইনে। সেই বিলাসবহুল জীবন থেকে ছোট্ট জেলের কুঠুরি। এক নিমিষে বদলে গেছে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের জীবন। আর সেই থেকে জেল জীবনে দিন দিন অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন তিনি। ফুঁপিয়ে উঠছেন মাঝে মাঝে। সহবন্দীদের বলছেন, এ জীবনে হয়ত জেল থেকে মুক্তি পাবেন না!
যত দিন যাচ্ছে ততই মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছেন স্কুল সার্ভিস কমিশন দুর্নীতি মামলায় ধৃত প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিশেষ বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার বিকালে আদালত থেকে জেলে ফিরে রীতিমতো কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।নিজে থেকেই মাঝে মাঝে বলছেন,”এ জীবনে হয়তো আমার আর জেল থেকে মুক্তি পাওয়া হবে না। আইনজীবীরা আজতো জামিনের আবেদনও করলেন না। ওরা বলেছেন জামিন হওয়া অসম্ভব। আবেদন করে কোন লাভ নেই।”
আলিপুর মহিলা সংশোধনাগারে ৩০০ বর্গ ফুটের একটি ঘরে ১৯ জন বন্দির সাথে রয়েছেন অর্পিতা। সেই বন্দিদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে চারটি শৌচালয় ও স্নানের জায়গা। আদালতের নির্দেশে অর্পিতার সঙ্গে সর্বদা রয়েছে একজন করে মহিলারক্ষী। নিরাপত্তা জনিত কারণে তাকে নির্দিষ্ট ঘরের বাইরে বেরোতে দেওয়া হয় না। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তাকে দেওয়া সমস্ত খাবার ও জল পরীক্ষা করে দেওয়া হয়।
অর্পিতার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক কারারক্ষী জানিয়েছেন,”খবর থেকে জানতে পেরেছিলাম টালিগঞ্জের ডায়মন্ড সিটির ১৬৫০ বর্গফুটের এসি ঘরে থাকতেন অর্পিতা। সেখান থেকে জেলার এই সাধারণ পরিবেশ তিনি একেবারেই মেনে নিতে পারছেন না। সব সময় একটা অস্থিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিছু বন্দিদের অর্পিতা জানিয়েছেন, পার্থ বাবু প্রথমে তাকে মেয়ের চোখে দেখলেও পরে তারা বন্ধু বান্ধবী হয়ে ওঠেন।” জেল মারফত খবর অনুযায়ী, নিজের এই সঙ্গিন পরিস্থিতির জন্য পার্থ চট্টোপাধ্যায়কেও দোষারোপ করেছেন অর্পিতা।
অর্পিতার আইনজীবী নীলাদ্রিশেখর ভট্টাচার্য জানিয়েছেন,”অর্পিতার পরিচিতরা
কেউই তার সাথে যোগাযোগ রাখছেন না। প্রথম দিকে কয়েকজন যোগাযোগ রাখছিলেন, এখন তারাও আর কোন সম্পর্ক রাখতে চাইছেন না। মাঝে মাঝেই ঘুম থেকে উঠে ফুঁপিয়ে উঠছেন।”
খাবারের মানের পাশাপাশি শৌচালয়ের পরিছন্নতা নিয়ে একাধিকবার অভিযোগ জানিয়েছেন অর্পিতা। সে বিষয় কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে,”জেলের শৌচালয় নিয়মিত পরিষ্কার রাখা হয়। কিন্তু অর্পিতা মুখোপাধ্যায় যে লাইফস্টাইল এর মাধ্যমে জীবন যাপন করতে সেখান থেকে এইখানে এসেছেন বলে তার অসুবিধা হচ্ছে।”