কেড়ে নেওয়া হয়েছিল প্রাপ্য ‘২” নম্বর! দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে ৮ বছর পর “শিক্ষক” হলেন সুরজিৎ

বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমান সময়ে শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতি প্রসঙ্গে কার্যত উত্তাল রাজ্য-রাজনীতি। যত দিন এগোচ্ছে ততই সামনে আসছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। এমনকি, ইতিমধ্যেই আদালতের নির্দেশে চাকরি খুইয়েছেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর (Paresh Chandra Adhikary) কন্যা অঙ্কিতা অধিকারী (Ankita Adhikary)। পাশাপাশি, তাঁর জায়গায় “যোগ্য প্রার্থী” হিসেবে শিক্ষিকা হসেবে যোগদান করেছেন ববিতা সরকার। এদিকে এই আবহে আশার আলো দেখছেন আন্দোলনরত যোগ্য চাকরি প্রার্থীরা। দুর্নীতির বেড়াজালকে ছিন্ন করতে দিনের পর দিন লড়াই করছেন তাঁরা। আর সেই লড়াইতেই এবার উঠে এল চাকরি প্রার্থী সুরজিতের নাম।

স্কুল শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখে নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন তিনি। বসেছিলেন পরীক্ষাতেও। কিন্তু, ফলাফল বেরোনোর পর থেকেই শুরু হয় চাকরি আদায়ের লড়াই। আর সেই লড়াই করতে গিয়েই কেটে গিয়েছে বেশ কয়েকটা বছর। এমতাবস্থায়, এত দিনে শেষ হাসি হাসলেন তিনি। দীর্ঘ আট বছর পর আদালতের নির্দেশে স্কুল শিক্ষক পদে নিয়োগ পেতে চলেছেন বাঁকুড়ার বাংলা গ্রামের বাসিন্দা সুরজিৎ গোস্বামী।

   

জানা গিয়েছে, শারীরশিক্ষা বিষয়ে বিপিএড করার পর ২০১১ সালে প্রকাশিত স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষার জন্য আবেদন করেন সুরজিৎ। ২০১২ সালে সম্পন্ন হওয়া সেই পরীক্ষা ভালোও হয় তাঁর। একপ্রকার পাশের ব্যাপারে তিনি প্রায় নিশ্চিত ছিলেন। কিন্তু, ২০১৩ সালে ফলাফল বেরোনোর পর দেখা যায় তাঁকে “নট কোয়ালিফায়েড ফর পার্সোনালিটি টেস্ট” হিসাবে চিহ্নিত করে কমিশন। পাশাপাশি, সুরজিৎ জানতে পারেন যে, টেট পাশ করলেও নিজস্ব সাবজেক্টে তিনি ৩৯ নম্বর পাওয়ায় তাঁকে “নট কোয়ালিফায়েড” করা হয়েছে। আর সেখানেই সন্দেহ হয় তাঁর।

শুধু তাই নয়, কমিশনকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ জানিয়ে পরীক্ষার খাতা দেখতে চেয়ে আরটিআই করে তিনি জানতে পারেন যে, ইচ্ছে করে দু’নম্বর কমিয়ে তাঁকে “নট কোয়ালিফায়েড” করা হয়েছে। এমতাবস্থায়, কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। দীর্ঘ প্রতীক্ষা এবং লড়াই শেষে ২০২১-এর ১৩ ডিসেম্বর নিজের প্রাপ্য দু’ নম্বর ফেরত পান সুরজিৎ। এমনকি, সুরজিতের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশও দেয় আদালত। চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি নেওয়া হয় সেই পরীক্ষা।

যদিও, সেই পরীক্ষার ফলাফল জানাতেও অত্যধিক সময় নেয় কমিশন। এমনকি, সুরজিৎ প্যানেল ভুক্ত হয়েছেন বলে জানা গেলেও তাঁর নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়ে ক্রমশ গড়িমসি হতেই থাকে। এমতাবস্থায়, ফের আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি। তারপরেই আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে, শিক্ষক পদে দ্রুত নিয়োগ করতে হবে সুরজিৎকে।

High Court 1

এদিকে, সুরজিৎ জানিয়েছেন যে, অবৈধভাবে অন্য কাউকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্যই ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁর দু’নম্বর কমিয়ে দেওয়া হয়। যদিও, এই দীর্ঘ লড়াই শেষে জয়লাভের পর খুশি হয়েছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরাও। এই প্রসঙ্গে সুরজিৎ বলেন, “দীর্ঘ পথ পেরিয়ে আজ আমি এখানে এসেছি। হাইকোর্টকে অনেক ধন্যবাদ জানাই। ২০১১ সাল থেকে আমার লড়াই শুরু হয়েছিল। দশ-বারো বছর পর তার সুবিচার পেলাম।”

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর