স্ট্রেচারে শুয়ে ছাড়তে হয়েছিল যেই মাঠ, সেখানেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রূপকথা লিখলেন হার্দিক

বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা কাল ২০২১-এর দুঃসহ স্মৃতি থেকে কিছুটা মুক্তি পেয়েছেন। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে রোহিত শর্মার ভারত। আর ভারতের এই জয়ে যার সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল তিনি হলেন ভারতের তারকা অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং তিন বিভাগেই দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে কালকের জয়ের নায়ক ছিলেন তিনি।

অথচ এই হার্দিক পান্ডিয়ারই খারাপ সময়ের শুরুটা হয়েছিল এশিয়া কাপেই ৪ বছর আগে। হাজার আঠারো সালে এই দুবাইতেই একই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হার্দিক পান্ডিয়া বোলিং করতে গিয়ে পিঠে চোট পেয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন স্ট্রেচারে শুয়ে। সেই থেকে হার্দিক পান্ডিয়ার বোলিংয়ের অবনতি শুরু হয়েছিল, যার ফল দীর্ঘদিন ধরে ক্রিকেটারটির পাশাপাশি ভারতীয় দলকেও ভুগতে হয়েছিল।

সেবার পাকিস্তানের ইনিংসের ১৮ তম ওভারে নিজের পঞ্চম ওভারে করছিলেন হার্দিক। ওই ওভারের পঞ্চম বলটি করার পরই পিঠে চোট পেয়ে মাঠে শুয়ে পড়েন তিনি। তারপর থেকে ক্রমশ হার্দিক এর বোলিংয়ের ধার কমতে থাকে। জাতীয় দলের হয়ে হোক বা আইপিএলে ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হার্দিকের বোলার হিসেবে সময় তা একেবারেই ভালো যায়নি। যে কারণে তাকে দলে সামিল করা হতো সেই কারণটাই বন্ধ হয়ে যায়। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হার্দিক পান্ডিয়া ওটা টুর্নামেন্টের মাত্র ৪ ওভার বল করতে পেরেছিলেন এবং তাতেও ৪০ রান দিয়ে বসেছিলেন।

সেই বিশ্বকাপের পর রিহ্যাব করতে গিয়ে বেশ কয়েক দিনের জন্য ক্রিকেট থেকে সরে যান হার্দিক। ব্যাঙ্গালোরের জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে দীর্ঘ চার-পাঁচ মাস ধরে নিজের চোট সারিয়ে সম্পূর্ণ ফিট হয়ে ওঠার জন্য পরিশ্রম করতে থাকেন এই তারকা অলরাউন্ডার। পর আইপিএলে গুজরাট টাইটান্সের অধিনায়ক হিসেবে মাঠে ফেরেন তিনি। এটি ছিল তার কেরিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। ব্যাট হাতে আরো অনেক বেশি দায়িত্বশীল ব্যাটিং করতে শুরু করেন হার্দিক। সেইসঙ্গে বল হাতেও ধারাবাহিকভাবে সাফল্য পেতে থাকেন তিনি। ফলস্বরূপ জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তন করেন এবং নিজের ভাল পারফরম্যান্সকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন।

কাল ম্যাচ শেষে রবীন্দ্র জাদেজার সঙ্গে বসে কিছুটা সময় আড্ডা দিচ্ছিলেন জুনিয়র পান্ডিয়া। সেই ম্যাচ সংক্রান্ত নানান রকম আলোচনায় উঠে আসে তাদের মুখে। খায় কোথায় প্রসঙ্গ ওঠে চার বছর আগে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এশিয়া কাপে এসেই ম্যাচের যেখানে হার্দিক চোট পেয়েছিলেন। হার্দিক নিজের মুখে স্বীকার করেন কাল যেন তিনি একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ করেছেন। ফ্রী মাঠে চোট পেয়ে একদিন তাকে বেরিয়ে যেতে হয়েছিল এবং তার বোলিং নিয়ে প্রশ্ন চিহ্ন উঠে গিয়েছিল, চার বছর পরে সেই মাঠেই তার নায়ক হয়ে ওঠা যেন হার্দিকের কাছে এক রূপকথার সমান।

কাল বল হাতে মহাম্মদ রিজওয়ান এবং ইফতিকার আহমেদ সহ তিনটি অতিগুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিয়েছিলেন হার্দিক। তার পাশাপাশি অত্যন্ত কৃপণ বোলিং করেছিলেন এই অলরাউন্ডার। সেই সঙ্গে ব্যাট হাতে যখন তিনি নামেন তখন ভারতীয় দল রীতিমতো চাপের মধ্যে রয়েছে। জাদেজার সঙ্গে জুটি বেঁধে তিনি যেভাবে ভারতকে ম্যাচ থেকে দেন তাতে উচ্ছ্বসিত ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা।


Reetabrata Deb

সম্পর্কিত খবর