বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: যেদিন থেকে মোহনবাগান পরিণত হয়েছে এটিকে মোহনবাগানে, তবে থেকে যেন ইস্টবেঙ্গলের লড়াই করার ক্ষমতাটাই হারিয়ে গিয়েছে। এর আগে ২০১৯-২০ মরশুমেও শুধুমাত্র মোহনবাগানের কাছে হেরেছিল ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু সেই ২-১ ফলে ডার্বি হারলেও যথেষ্ট লড়াই দেখা গিয়েছিল লাল-হলুদ শিবিরের মধ্যে। জোয়ান মেয়েরা গঞ্জালেসের একটি শর্ট পোস্টে লেগে না ফিরলে ওই ম্যাচ ড্র করেও ফিরতে পারতো ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু এই এটিকে মোহনবাগানের সঙ্গে যেন তারা পাল্লায় দিতে পারছে না।
এদের সঠিক কারনটা বিশ্লেষণ করতে বসলে আমাদের কয়েকটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে। যেদিন থেকে এটিকে এবং মোহনবাগান মার্চ হয়ে একটি স্বতন্ত্র সত্তা, ‘এটিকে মোহনবাগানে’ পরিণত হয়েছে, তখন থেকে ইস্টবেঙ্গলের হারার ধারায় একটি পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। তার আগের বছরও আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হওয়া এটিকের গোটা স্কোয়াডটিই এটিকে মোহনবাগানের হয়ে খেলছিল ২০২০-২১ মরশুমে। তার সঙ্গে এঁটে উঠতে পারেনি রবি ফাওলারের ইস্টবেঙ্গল।
এটিকে এবং মোহনবাগান মাঠ হওয়ার পরে তড়িঘড়ি স্পন্সর হিসেবে শ্রী সিমেন্টকে জানানো হয় লাল-হলুদ শিবিরের সঙ্গে যুক্ত হতে। তার আগে ইস্টবেঙ্গলের ইনভেস্টর গোষ্ঠী কোয়েসের কাছ থেকে স্পোর্টিং রাইটস ফেরত পেতে অনেক দেরি হয়েছিল। ফলে বাকি দলগুলির যখন দল তৈরি সম্পূর্ণ তখনো ইস্টবেঙ্গল জানতোই না যে তারা কাদের নিয়ে আইএসএলে নামবে। শেষপর্যন্ত ইনভেস্টর গোষ্ঠীর তৎপরতায় লিভারপুল লেজেন্ড রবি ফাওলার ইস্টবেঙ্গল আসেন। তড়িঘড়ি বিদেশে নির্বাচন করে এবং ট্রান্সফার মার্কেটে অবিক্রিত থাকা স্বদেশি ফুটবলারদের নিয়ে একটি ইস্টবেঙ্গল স্কোয়াড গঠন করা হয়।
আইএসএলে নিজেদের প্রথম মরশুমের প্রথম ম্যাচেই এটিকে মোহনবাগানের মত স্টেবল দলের বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে অভিযান শুরু করতে হয়েছিল লাল-হলুদ শিবিরকে। প্রথমার্ধে ভালো লড়াই দেখিয়েছিলেন ম্যাঘোমা, স্টেইনম্যানরা। কিন্তু রয় কৃষ্ণা ৪৯ মিনিটে গোল করতেই ম্যাচ থেকে হারিয়ে যাওয়া শুরু ইস্টবেঙ্গলের। আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের এটিকে, নিজেদের ডিফেন্সের জন্য পরিচিত ছিল। এটিকে মোহনবাগানের সেই কোনটি সঞ্চারিত করেছিলেন স্প্যানিশ কোচ। ফলে একবার পিছিয়ে পড়ার পর ম্যাচে ফেরার সুযোগ ইস্টবেঙ্গল পায়নি বললেই চলে। উল্টে দ্বিতীয়ার্ধের শেষদিকে মানবীর সহিংসতায় দুর্দান্ত ভঙ্গিতে গোল করে যান যার ফলে ইস্টবেঙ্গল ম্যাচটি হারে ২-০ ফলে।
সেবার মরশুমের দ্বিতীয় ডার্বিতে কৃষ্ণার গোলে পিছিয়ে গিয়েও এটিকে মোহনবাগান ডিফেন্ডার তিরির আত্মঘাতী গোলে সমতায় ফিরেছিলেন ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে শেষদিকে জাভি হার্নান্দেস এবং ডেভিড উইলিয়ামসের গোলে ম্যাচ জিতে টুর্নামেন্টের কিছুদিন আগেই জোড়াতালি দিয়ে প্রস্তুতি হওয়া একটা দলের সঙ্গে তিন বছর একসাথে খেলতে থাকা একটি দলের তফাৎ কতটা সেটা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন হাবাস।
দ্বিতীয় মরশুমে ইস্টবেঙ্গল দলে আমূল পরিবর্তন হয়। সকল বিদেশি ফুটবলারদের ছেড়ে দিয়ে নতুন বিদেশি ফুটবলার আনা হয়। গতবার এটিকে মোহনবাগানের হয়ে আইএসএলে গোল্ডেন গ্লাভস জয়ী অরিন্দম ভট্টাচার্যকেও দলে সামিল করা হয়। নিজেদের প্রথম ম্যাচে জামশেদপুর এর বিরুদ্ধে ড্র করার পর দ্বিতীয় ম্যাচ এটিকে মোহনবাগানের মুখোমুখি হয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। সমর্থকদের মনে অনেক আশা ছিল। আবারো সম্পূর্ণ নতুন দল গঠিত হলেও বেশ কিছুদিন তারা একসঙ্গে অনুশীলন করেছেন। কিন্তু ডার্বিতে নামা মাত্রই ইস্টবেঙ্গল সর্মথকরা বুঝে যান এটিকে ম্যানেজমেন্ট তাদের যে দল স্কোয়াড একসময় তৈরি করেছিল যা নিয়ে এটিকে মোহনবাগান মাঠে নেমেছিল তাদের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ছাড়া আর অন্য কোনো রাস্তা নেই। গতবছর এটিকে মোহনবাগানের হয়ে দুর্দান্ত গোলকিপিং করা অরিন্দমের একের পর এক ভুলে ৩-০ ফলে ম্যাচ হারে ইস্টবেঙ্গল। সেবারে মরশুমের মাঝপথেই কোচ বদল হয়।
ওই মরশুমের দ্বিতীয় ডার্বিতে গত তিন বছরে এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে জয়ের সবচেয়ে কাছাকাছি এসেছিল ইস্টবেঙ্গল। ৫৬ মিনিটে ড্যারেল সিডওয়েলের গোলে এগিয়ে গিয়েও। তারপর পরিবর্ত হিসেবে মাঠে নামা ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন ফুটবলার জামশেদ নাসিরির পুত্র কিয়ান নাসিরির হ্যাট্রিকে ম্যাচ জিতে নেয় এটিকে মোহনবাগান।
কোয়েসের মতোই ইস্টবেঙ্গল শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বিবাদ হওয়ায় এরপর বিদায় নেয় ইনভেস্টর শ্রী সিমেন্ট গোষ্ঠী। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির মধ্যস্থতায় ইস্টবেঙ্গলের নতুন ইনভেস্টর হয়ে আসে ইমামি। কিন্তু এবারও ইস্টবেঙ্গল ভুগলো একই রোগে। দূরান্তের নামার আগে এক সপ্তাহ ইস্টবেঙ্গলের স্কোয়াডের সকল ফুটবলাররা একসঙ্গে অনুশীলন করার সুযোগ পাননি। লাল-হলুদ কোচ স্টিফেন কনস্ট্যানটাইন বুঝতে পেরেছিলেন যে এইরকম একটা নতুন দল নিয়ে এটিকে মোহনবাগানের মত গত তিন-চার মরে একসঙ্গে থাকা একটি স্কোয়াডের বিরুদ্ধে আক্রমণ করাটা কতটা বিপদজনক হবে। তাই নিচের ডিফেন্সকে সংগঠিত করেন তিনি। তার নিশ্ছিদ্র ডিফেন্সের পরিকল্পনায় কোন ভুল ছিল না। কিন্তু সুমিত পাসির একটা মাত্র ভুলে টানা ষষ্ঠ বার কালকে হাড়ের মুখ দেখতে হল লাল হলুদ সমর্থকদের। তাদের জন্যেই আসার খবর একটাই যে এবার আইএসএল এর অনেক আগে একটা দল মোটামুটি একসঙ্গে করা গেছে। ডুরান্ড স্বার্থে হলেও এই হার থেকে শিক্ষা নিয়ে দীর্ঘদিন একসঙ্গে অনুশীলন করে আইএসএলে হয়তো এর চেয়ে ভালো ফল করবে ইস্টবেঙ্গল, এমনটাই আশা করছেন লাল-হলুদ অনুরাগীরা।