বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল। জয় কি জিনিস তা হয়তো ভুলেই গিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গল সর্মথকরা। আজকের ম্যাচের আগে অবধি বছরের শুরুতে আইএসএল থেকে শুরু করে বর্তমান ডুরান্ড কাপ মিলিয়ে ২০২২-এ মোট ১৩ টি ম্যাচে মাঠে নেমেছিল ইস্টবেঙ্গল। মাঝখানের সময়টা বেশ টালমাটাল ছিল। আইএসএলে টেবিলের তলদেশে ফিনিশ করতে হয়েছিল। শ্রী সিমেন্ট গোষ্ঠী ইস্টবেঙ্গলের ইনভেস্টর এর দায়িত্ব ছেড়ে চলে গিয়েছিল। নতুন ইনভেস্টর জোগাড় করতে কালঘাম ছুটেছিল লাল-হলুদ কর্মকর্তাদের।
এরই মাঝে মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যস্থতায় ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের মধ্যে সমঝোতা হয় এবং বহু টালবাহানার পর দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তি সই হয় শুরু হয় দল গঠনের কাজ। অনেক পিছিয়ে ছিল ইস্টবেঙ্গল বাকি দলগুলো থেকে। তাও ইমামি কর্তারা ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের পাশে থাকতে আহবান জানিয়েছিলেন। কথা দিয়েছিলেন তারা ভালো দল তৈরি করবেন। আজ হয়তো সেই কথার প্রথম এবং আংশিক প্রতিফলন দেখা গেল।
ডুরান্ডে আজ নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলতে নেমেছিল লাল-হলুদ ব্রিগেড। স্টিফেন কনস্ট্যানটাইনের ছেলেদের এই ম্যাচ থেকে কিছুই পাওয়ার ছিল না। দল গঠন হয়েছে এক মাসও সম্পুর্ণ হয়নি। একসপ্তাহের একটু বেশি একসঙ্গে অনুশীলন করে তারপরেই এই প্রতিযোগিতা খেলতে নামতে হয়েছিল ইস্টবেঙ্গলকে। ইন্ডিয়ান নেভি এবং রাজস্থান ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র করার পর এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে নিজেদের ভুলে হারের মুখ দেখতে হয়েছিল ইস্টবেঙ্গলকে। সর্মথকরা হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আজ ডুরান্ডে নিজেদের গ্রুপের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ মুম্বাই সিটি এফসির বিরুদ্ধে খেলা ছিল ইস্টবেঙ্গলের। এটিকে মোহনবাগানের কাছে হারের পর হয়তো কেউই এই ম্যাচ নিয়ে বিশেষ কোনো প্রত্যাশা রেখে আসেননি। কারণ এটিকে মোহনবাগানের মতোই মুম্বাই সিটি এফসি দীর্ঘদিন ধরে অনুশীলন এবং একসাথে খেলতে থাকা একটি স্কোয়াড নিয়ে ডুরান্ড এসেছে। খাতায়-কলমে তারা ইস্টবেঙ্গলের চেয়ে কয়েক যোজন এগিয়ে।
কিন্তু সমবেত লাল-হলুদ সমর্থকদের সকলকে চমকে দিয়ে মুম্বাই সিটি এফসির পূর্ণশক্তির দলকে হারিয়ে দিল ইস্টবেঙ্গল। ১৯শে জানুয়ারির পর থেকে দলের জয় দেখেননি লাল-হলুদ সমর্থকরা। আজ দেখলেন। চলতি বছরে ১৩ টি ম্যাচ খেলে মোট ৮ টি গোল করেছিল ইস্টবেঙ্গল। আজ ক্লিয়েটন সিলভারা করলেন ৪ টি গোল। সবমিলিয়ে লাল-হলুদ সমর্থকদের যাবতীয় অপূর্ণতাকে যেন পূর্ণতা দিল এই ম্যাচ।
মুম্বাই সিটি এফসি কোচ দেজ বাকিংহ্যাম সম্পূর্ণ শক্তির দলই নামিয়েছিলেন। দলের জয় নিয়ে কোনো সন্দেহই রাখতে চাননি তিনি। কিন্তু ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলকে ডোবানো সুমিত পাসি যেন অন্য কিছু ভেবে এসেছিলেন। প্রথমার্ধেই তিনি করলেন জোড়া গোল। সেইসঙ্গে ক্লিয়েটন সিলভার দুর্দান্ত ফ্রি-কিক থেকে ইস্টবেঙ্গল প্রথমার্ধেই তিন গোল করে। কিন্তু গোটা টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত ফুটবল খেলা ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্সকে আজ প্রথমার্ধে তিন গোল হজম করতে হয়। জোড়া গোল করেন ছাঙতে ও তৃতীয় গোলটি করেন মুম্বাইয়ের তারকা বিদেশি গ্রেগ স্টুয়ার্ট। তিনটে গোলের ক্ষেত্রেই কিছু না কিছু ভুল ছিল ইস্টবেঙ্গল গোলরক্ষক কমলজিৎ-এর। দ্বিতীয়ার্ধে ফের আক্রমণ প্রতিআক্রমণ খেলা জমে ওঠে। দুই দলই গোল করার অনেক সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু ভাগ্য যেন আজ ইস্টবেঙ্গলকে সঙ্গ দিল। ম্যাচের বয়স যখন একাশি মিনিট, ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলাররা যখন ফিটনেসের দৌড়ে মুম্বাইয়ের কাছে পিছিয়ে পড়ছে, ঠিক তখনই বাঁ প্রান্ত থেকে জেরির একটা দৃষ্টিনন্দন ক্রসকে আটকাতে পারলেন না মুম্বাই গোলরক্ষক নওয়াজ। অল তার হাত থেকে ছিটকে যেতেই সুযোগসন্ধানী ক্রিয়েট এন্ড সিলভার চতুর্থ গোল করে ইস্টবেঙ্গলের জয় নিশ্চিত করে দেন। এই জয়ের পর আইএসএলে পুরোপুরি তালমিল তৈরি হওয়া একটি সুন্দর ইস্টবেঙ্গল স্কোয়াডকে দেখার আশা করতেই পারে লাল-হলুদ সমর্থকরা।
জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরির উপর দিয়ে ভেসে চলছে বিমান, তরুণীর ভিডিও দেখে হতবাক নেটমাধ্যম!