বাংলাহান্ট ডেস্ক : মহিষকুচি নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়ে গিয়ে মিলন স্যারের কথা বললে এক ডাকে সবাই চিনবে। কারণ এক – দুই দিন নয়, টানা কুড়ি বছর ধরে এই স্কুলে সম্পূর্ণ বিনা বেতনে পড়িয়ে যাচ্ছেন তিনি।তার পরামর্শ ছাড়া এক পাও এগোন না স্কুলের স্থায়ী শিক্ষক থেকে পড়ুয়ারাও! মহিষকুচি নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়ের “বিনা বেতনের” শিক্ষক মৃত্যুঞ্জয় লাহিড়ি সমাজের কাছে এক দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন।
আজ থেকে প্রায় কুড়ি বছর আগেকার কথা। নিজের ভাইপোকে নিয়ে এই স্কুলে এসেছিলেন তাকে ভর্তি করানোর জন্য। সেই সময় এই স্কুলে পড়ুয়া সংখ্যা ছিল ৫০০ এর কাছাকাছি। এদের জন্য বরাদ্দ ছিলেন মাত্র চার জন শিক্ষক। স্বাভাবিকভাবে শিক্ষকদের উপর তৈরি হয়েছিল প্রবল চাপ।সেই সময় স্কুলের প্রধান শিক্ষক তারাপ্রসাদ ভট্টাচার্য মৃত্যুঞ্জয়বাবুকে স্কুলে পড়ানোর জন্য অনুরোধ করেন। সেই সময় মৃত্যুঞ্জয় বাবু কিছু টিউশনি করতেন। কিন্তু তার নেশা ছিল পড়ুয়াদের পড়ানো। তাই বিনা দ্বিধায় প্রধান শিক্ষক তারাপদ ভট্টাচার্যের অনুরোধে যোগদান করেন স্কুলে।
বক্সিরহাট থানার শালডাঙার বাসিন্দা স্নাতক মৃত্যুঞ্জয় বাবু প্রতিদিন নিয়ম করে সকাল ন’টায় তৈরি হয়ে যান স্কুলে যাওয়ার জন্য। সবার আগে পৌঁছে তালা খোলেন স্কুলের। নিয়মিত পড়ুয়াদের ক্লাস নেন অংক,ইংরেজি ও বাংলা সাহিত্যের। শুধুমাত্র পড়ানোর নেশাকে কেন্দ্র করে গত কুড়ি বছর ধরে এই স্কুলে শিক্ষকতা করে আসছেন। তাই বিকল্প কোন আয়ের শক্তপোক্ত ব্যবস্থা করে উঠতে পারেননি। এখনো নিজের খরচা চালান প্রাইভেট টিউশনি করিয়ে। তার কথায় গত কুড়ি বছর ধরে যে শ্রদ্ধা ও সম্মান তিনি পেয়েছেন তা কোন সরকারি স্কুলের শিক্ষকের চেয়ে কম নয়।
অভিভাবক থেকে শুরু করে স্কুলের অন্যান্য শিক্ষকরা খুবই শ্রদ্ধা করেন মৃত্যুঞ্জয় বাবুকে। যে কোন সমস্যায় আগে তার কাছে সবাই ছুটে যায় সমাধানের জন্য। তার ইচ্ছা আমৃত্যু তিনি পড়িয়ে যাবেন এই স্কুলে। ছাত্র-ছাত্রী থেকে গ্রামবাসীদের একটাই চাওয়া, যে মানুষটি এতগুলো বছর স্কুলের জন্য নিজের প্রাণপাত করলেন তাকে কোন সম্মান দিয়ে ভূষিত করা হোক।