বাংলাহান্ট ডেস্ক : বিগত কয়েক মাস ধরেই বিচ্ছিন্ন ভাবে একের পর এক আল কায়দা (al qaeda) ঘনিষ্ঠ জঙ্গি ধরা পড়েছিল রাজ্যে। কিন্তু প্রত্যেক বারই নিয়ে দু’চার দিন পুলিস তৎপরতার দেখিয়েই আবার সব শান্ত হয়ে যায়। গত কয়েক বছরে ভিতরে ভিতরে পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) মাটিতে যে ওই জঙ্গি সংগঠন দ্রুত বিস্তার লাভ করেছে, তা জানতে পারেননি গোয়েন্দারা। সম্প্রতি রাজ্যে আবার আল কায়দার উপমহাদেশীয় শাখার চার সদস্য গ্রেফতার হয়। আর তার পরই গোয়েন্দাদের নজরে আসে জঙ্গি সংগঠন বিস্তারের তথ্য। ওসামা বিন লাদেনের নেতৃত্বে যে জঙ্গি সংগঠন এক সময়ে ৯/১১-র মতো শিউরে ওঠার ঘটনা ঘটিয়েছিল, তাদেরই শাখার রাজ্যে এই রকম বিস্তার যথেষ্ট চিন্তার বলেই মনে করছে প্রশাসন।
পশ্চিমবঙ্গ পুলিসের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স এবং গোয়েন্দা শাখা সূত্রের খবর, এ রাজ্যে ওই জঙ্গি সংগঠনের অন্তত তিনটি মডিউল তৈরি হয়েছে। তার মধ্যে একটি দুই ২৪ পরগনা, একটি হাওড়া এবং তৃতীয়টি উত্তরবঙ্গে কাজ করছে। রাজ্যের গোয়েন্দা সূত্রের জানা যাচ্ছে, ধৃতদের জেরা করে তিনটি মডিউলের অন্তত ১৯ জনের নামের হদিশ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ৬ জনকে ইতিমধ্যেই ধরা সম্ভব হয়েছে। এদের মধ্যে চার জনকে কিছু দিন আগেই গ্রেফতার করেছে এসটিএফ। দু’জন ধরা পড়ে উত্তর ২৪ পরগনায়, এক জন দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এবং এক জন মুম্বইয়ে। মুম্বই থেকে গ্রেফতার হওয়া জঙ্গির নাম সাদ্দাম হোসেন খান। সাধারণ শ্রমিক সেজে মুম্বইয়ে লুকিয়েছিল সে। তবে বাকি ১৩ জনকে এখনও ধরতে পারেননি তদন্তকারী গোয়েন্দারা।
ধৃতদের মধ্যে আবু তালহা-সহ আরও তিন জন দক্ষিণ এশিয়ায় আল কায়দা সংগঠনের মাথা বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। ওই তিন জনই বাংলাদেশি নাগরিক। সীমান্ত পেরিয়ে এ দেশে ঢুকেছে তারা। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, পশ্চিমবঙ্গ থেকে মধ্যপ্রদেশ, বিহার, দক্ষিণ ভারতের একাধিক রাজ্য-সহ দেশের নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে ওই সংগঠনের সদস্যেরা।
এক গোয়েন্দা আধিকারিক জানান, এ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকেরা যান। জঙ্গি সংগঠনের সদস্যেরা লুকিয়ে থাকার জন্য ওই পরিযায়ী শ্রমিকের দলে মিশে যায়। ওই দলে মিশেও ক্রমাগত মৌলবাদী এবং জঙ্গি ভাবধারা প্রচার করতে থাকে তারা।
বাংলায় জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের একাধিক সদস্য বিভিন্ন রাজ্যে বাঙালি শ্রমিকদের দলে মিশে থাকার পর থেকেই পরিযায়ীদের উপরে বাড়তি নজরদারি শুরু হয়েছে। গোয়েন্দারা আশা করেন দেশ ছেড়ে না-পালালে বাংলাদেশি মাথাদেরও ধরা সম্ভব হবে।
জানা যাচ্ছে, প্রায় তিন বছর আগে থেকে এ রাজ্যে সংগঠন তৈরি শুরু করে আল কায়দা। জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশে বসে থাকা আবু তালহার নির্দেশেই কাজ হত। অতিমারি পরিস্থিতি কাটলে ত্রিপুরা-মেঘালয়ের সীমান্ত দিয়ে ঢোকে তালহা ও তার কিছু অনুচর। অসমের বরপেটা হয়ে উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সে ঘাঁটি গেড়েছিল। সেখান থেকেই তালহা অন্য রাজ্যে পাড়ি দিয়েছে বলে অনুমান গোয়েন্দাদের।