বাংলা হান্ট ডেস্ক: বাঙালির কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব হল দুর্গাপুজো (Durga Puja)। প্রতিবছর মহাসমারোহে এই পুজোয় মেতে ওঠেন আপামর বাঙালিরা। পাশাপাশি, পুজোর এই কটা দিনের জন্য সারাবছর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন সকলেই। এমতাবস্থায়, এই পুজো এবার স্বীকৃতি পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্তরেও। ইউনেস্কোর (UNESCO) হেরিটেজ লিস্টে ইতিমধ্যেই জায়গা করে নিয়েছে সবার প্রিয় দুর্গাপুজো। তবে, বর্তমানে এই পুজো সর্বত্রই ব্যাপক আকার ধারণ করলেও বাংলার প্রথম দুর্গাপুজোর ইতিহাস কিন্তু অনেকের কাছেই অজানা। বর্তমান প্রতিবেদনে আমরা সেই সম্পর্কেই বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপিত করছি।
পুরাণ মতে, বলিপুরের (যা বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের বোলপুর শহর) রাজা সুরথ বাংলাতে প্রথম দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন। মূলত, সুপুর ছিল রাজা সুরথের রাজধানী। মার্কন্ডেয় পুরাণ অনুযায়ী, মর্ত্যলোকের এই রাজাই মর্ত্যবাসীদের মধ্যে দেবী দুর্গার লীলা প্রচার করেছিলেন। পাশাপাশি, মার্কন্ডেয় পুরাণে এই প্রসঙ্গের অবতারণাও করা হয়েছে। সেখানে বলা আছে:
তত: স্বপুরমায়াতো নিজেদেশাধিপোহভবৎ।
আক্রান্ত: স মহাভাগস্তৈস্তদা প্রবলারিভি:॥৭
অমাতৈ:বলিভি:দুষ্টে:দুর্বলস্য দুরাত্মভি:।
কোষ বলঞ্চাপহৃতং তাত্রাপি স্বপুরে তত:॥৮
এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, দুর্গা সপ্তশতী দেবী মাহাত্ম্য এবং মার্কণ্ডেয় পুরাণে রাজা সুরথকে চিত্রগুপ্ত বংশীয় রাজা অর্থাৎ চিত্রগুপ্তের বংশধর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। একটা সময়ে তিনি তাঁর রাজত্ব, সম্পত্তি এবং মর্যাদা সবকিছুই হারিয়ে ফেলেন। যার ফলে যদুবংশীয় এই রাজা তাঁর রাজ্য ছাড়তে বাধ্য হন। এদিকে, রাজ্য ছাড়ার পর তাঁর সাক্ষাৎ হয় সমাধি বৈশ্য নামের আরও এক হতভাগ্য বণিকের সাথে। ওই বণিকও ব্যবসায় ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। এমতাবস্থায়, তাঁদের সাথে যোগাযোগ হয় মেধস মুনির।
মনে করা হয় যে, পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুর শহরের কাছে গড়চন্ডীধাম নামক স্থানে ছিল মেধস মুনির আশ্রম। যদিও, অনেকে আবার মনে করেন যে, মেধস মুনির আশ্রম বর্তমান বাংলাদেশের চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার করলডাঙা পাহাড়ে অবস্থিত ছিল। তবে, আশ্রমের অবস্থান নিয়ে দ্বিমত থাকলেও এই মেধস মুনির আশ্রমেই যে প্রথম দুর্গাপুজো শুরু হয়েছিল এই প্রসঙ্গে সকলেই সহমত পোষণ করেছেন।
তাঁরা মেধস মুনির শরণাপন্ন হয়ে নিজেদের করুণ পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন। এমতাবস্থায়, মুনি তাঁদের দেবী মাহাত্ম্য শোনানোর পাশাপাশি মহিষাসুরমর্দিনীর স্তব করে শোনান। এছাড়াও, তিনি রাজা সুরথ এবং বণিক সমাধি বৈশ্যকে জানান মা দুর্গার আরাধনা এবং পুজো করলেই তাঁদের ভাগ্য ফিরবে। ওই নির্দেশ মত তাঁরা মাটির প্রতিমা নির্মাণ করে ওই আশ্রমেই দুর্গাপুজো শুরু করেন। কথিত আছে দেবীর আরাধনার পর রাজা সুরথ ও বণিক সমাধি বৈশ্য ফের তাঁদের মর্যাদা পুনরায় ফিরে পান। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, মেধস মুনির আশ্রমে এই পুজো বসন্তকালে সম্পন্ন হয়েছিল। অপরদিকে, শরৎকালের দুর্গাপুজো শ্রী রামচন্দ্রের অকাল বোধনের কারণে সম্পন্ন হয়।