বাংলাহান্ট ডেস্ক : দেখতে দেখতে কেটে গিয়ে অর্ধশতাব্দী। কিন্তু আজও অব্যাহত তার ধারা। বড়দেবীর পূজায় আজও লাগে মানুষের রক্ত। অষ্টমীর রাতে গুপ্তি পূজায় নিজেদের আঙ্গুল চিরে রক্ত অর্পণ করেন এক পরিবারের সদস্যরা। বহুদিন ধরে চলে আসা এই রাজকীয় ঐতিহ্য মেনেই কোচবিহারের দেবী বাড়িতে পূজিত হচ্ছেন বড় দেবী। প্রায় ৫১২টি বছর অতিক্রান্ত হয়েছে কোচরাজবংশের এই বড়দেবীর পূজা।
এই পূজার ইতিহাস কোচবিহার ও তার আশপাশের এলাকাগুলিতে বেশ প্রচলিত। আনুমানিক ১৫১০ সালে তৎকালীন কোচবিহারের রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা মহারাজা বিশ্বসংহের সুযোগ্য পুত্র মহারাজা নরনারায়ণ এই পুজোর প্রচলন করেন। লোক মুখে জানা যায়, কোচবিহারের মহারাজা নরনারায়ণ নাকি স্বপ্নে দেবীকে দেখেছিলেন। সেই স্বপ্নে পাওয়া দেবীই বড়দেবী হিসেবে কোচবিহারে পূজিত হন এখনও।
অষ্টমীর নিশিথে হয় গুপ্তি পূজা। একেবারে শুরুর দিকে বড়দেবীর পূজায় নাকি একবার নরবলিও হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে তৎকালীন মহারাজা এই নরবলি প্রথা বাতিল করে দেন। নরবলির পরিবর্তে নর রক্তেই হয় দেবীর পূজা।
গতকাল অষ্টমীর গভীর রাতে কোচবিহারের কালজানির এক পরিবার বংশপরম্পরায় গুপ্তি পূজায় অংশগ্রহণ করে। আঙ্গুল চিরে রক্ত দেন ওই পরিবারের লোকেরা । সেই রক্তেই পূজিত হন বড়দেবী।
এই দেবীর বেশ কিছু শারীরিক বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। ‘কোচ’ উপজাতির মানুষের চেহারার সঙ্গে বেশ কিছু মিল লক্ষ্য করা যায়। এই দেবীর শরীরের রং লাল, মুখের গঠন বেশ খানিকটা চ্যাপ্টা। ১১ ফুট লম্বা হয় বড় দেবীর প্রতিমা। দেবীর বাহন সিংহ এবং বাঘ। ষষ্ঠী থেকে রীতি মেনেই পুজো হয়। তবে দেবীর ভোগ শুধুমাত্র পায়েস। দেবীর প্রতিমা বিসর্জন হয় রাজপরিবারের নিজস্ব ঘাট বাঁধানো যমুনী নদীতে।