বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমান সময়ে সমগ্ৰ দেশজুড়েই উৎসবের মরশুম পরিলক্ষিত হচ্ছে। পাশাপাশি, মহাসমারোহে পালিত হচ্ছে দশেরা (Dasara) উৎসব। তবে, এই উৎসব সর্বত্র পালিত হলেও মাইসোরের (Mysore) রাজকীয় দশেরা উৎযাপন সম্পূর্ণ আলাদা। মূলত, বিজয়া দশমীর দিনটি মাইসোরে জাঁকজমকপূর্ণভাবে আনন্দের সাথে পালিত হয়। পাশাপাশি, সেখানে ১০ দিন যাবৎ ওই অনুষ্ঠান স্থায়ী হয়। এছাড়াও, প্রাসাদ থেকে শুরু করে পুরো শহর জুড়ে থাকে আলোর রোশনাই। আর তাই সেখানকার ঐতিহাসিক দশেরা দেখতে দেশ-বিদেশের মানুষ ভিড় জমান।
মাইসোরে প্যালেস এবং চামুণ্ডেশ্বরী পাহাড়: এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, “মাইসোর দশেরা”, “রয়্যাল ফেস্টিভ্যাল” নামেও পরিচিত। এই উপলক্ষ্যে শোভাযাত্রা থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রদর্শনী এবং মেলার পাশাপাশি নাচ এবং গানের অনুষ্ঠানও সম্পন্ন হয়। শুধু তাই নয়, লক্ষাধিক আলোয় আলোকিত করা হয় মাইসোরে প্যালেসকে। এছাড়াও, চামুণ্ডেশ্বরী পাহাড়টিকে প্রায় দেড় লক্ষ বাল্ব দিয়ে আলোকিত করা হয়।
৭৫০ কেজির স্বর্ণ আসন: মাইসোরের চামুন্ডি পাহাড়ে অবস্থিত চামুণ্ডেশ্বরী দেবীর মন্দিরে প্রার্থনার মাধ্যমে দশেরার উদযাপন শুরু হয়। তারপর হাতি, ঘোড়া ও উট সহযোগে মিছিল শুরু হয়। হাতিগুলিকে অপরূপ সাজে সাজিয়ে শোভাযাত্রায় বের করা হয়। যেগুলিকে দেখতে অত্যন্ত আকর্ষণীয় লাগে। ওই হাতিগুলির পিঠে চামুণ্ডেশ্বরী দেবীর মূর্তির সাথে প্রায় ৭৫০ কেজি ওজনের সোনার আসন রাখা হয়।
যখন সুসজ্জিত হাতিরা সোনার এই আসনটি নিয়ে বের হয় তখন হাজার হাজার মানুষ তার উপর ফুল বর্ষণ করে। ওই আসনটিকে “হাউদা” নামে অভিহিত করা হয়। যা মাইসোরের কারিগরদের একটি চমৎকার এবং বিষ্ময়কর সৃষ্টি। প্রথা অনুযায়ী, প্রথমে রাজপরিবার এই মূর্তির পূজা করে। এরপর তা মিছিলে অন্তর্ভুক্ত হয়।
মাইসোরের দশেরার ইতিহাস: মাইসোরের রাজকীয় দশেরার ইতিহাস সম্পর্কে কথা জানাতে গেলে বলতে হয় যে, হরিহর এবং বুক্কা নামে দুই ভাই চতুর্দশ শতাব্দীতে বিজয়নগর সাম্রাজ্যে নবরাত্রি উদযাপন করেছিলেন। পঞ্চদশ শতাব্দীতে রাজা ওদেয়ার যখন এই দশটি দিন উদযাপন শুরু করেন, তখন এর নাম হয় দশেরা। এছাড়াও কথিত আছে যে, চামুন্ডি পাহাড়ের দেবী চামুণ্ডেশ্বরী মহিষাসুর নামক অসুরকে হত্যা করেছিলেন এবং অশুভের উপর সত্যের জয়কে পুনরুদ্ধার করেছিলেন। যেদিন তাকে হত্যা করা হয়েছিল সেই দিনটিকে মাইসোরের বাসিন্দারা বিজয়া দশমী বা দশেরা হিসেবে পালন করে।
পাশাপাশি, নবরাত্রির অন্য নয়টি দিন দেবী শক্তির নয়টি রূপের পূজা করা হয়। যার মধ্যে ষষ্ঠ দিন দেবী সরস্বতী, অষ্টম দিন দেবী দুর্গা এবং নবম দিন দেবী লক্ষ্মীর পূজা সম্পন্ন হয়। এমতাবস্থায়, দশম দিনে, একটি মিছিল বের করা হয়। যা মাইসোর প্রাসাদ থেকে শুরু হয় এবং বান্নিমন্তপায় শেষ হয়। প্রতি বছর দেশ-বিদেশের বহু মানুষ এই আন্তর্জাতিক দশেরা উদযাপনে সামিল হন।