বাংলা হান্ট ডেস্ক: চলতি বছরের বিজয়া দশমী (Bijoya Dashami) “অভিশপ্ত” হয়ে রইল রাজ্যবাসীর কাছে। প্রতিমা বিসর্জনের সময়ে জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) মালবাজারের মাল নদীতে আচমকাই আসা হড়পা বানে জলের তোড়ে ভেসে গিয়ে এখনও পর্যন্ত ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি, নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে। দুর্গাপুজোর শেষ দিনে এই ভয়াবহ ঘটনায় শোকস্তব্ধ রাজ্যবাসী। তবে, ওই বিপদের সময়েই কার্যত “ত্রাতা”-র ভূমিকায় অবতীর্ণ হন মহম্মদ মানিক নামের এক যুবক। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও ভয়াবহ হড়পা বানে ভেসে যাওয়া মানুষদের মধ্যে ১০ জনের প্রাণ বাঁচান তিনি। যাদের মধ্যে এক শিশুও ছিল।
এমনকি, ওই উদ্ধারকাজের সময় পায়ে আঘাত পান মানিক। যদিও, সেইদিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ ছিল না তাঁর। অভিশপ্ত সেই রাতের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, “সেদিন নদীতে ঠাকুর বিসর্জন দেখার জন্য গিয়েছিলাম। আমি পৌঁছনোর মিনিটখানেক পরেই দেখি নদীর জল হঠাৎ বেড়ে গিয়ে লোকজন ভেসে যাচ্ছে। আমার কাছে এক বন্ধু ছিল। ওকে তৎক্ষণাৎ মোবাইল ফোনটা দিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার পর ১০ জনকে উদ্ধার করি। তাদের মধ্যে শিশু, মহিলা ও পুলিশও ছিল।”
এমনকি, ওই ভয়াবহ দৃশ্য রীতিমতো তাড়া করে বেড়াচ্ছে মানিককে। খাওয়াদাওয়াও করতে পারছেন না তিনি। হঠাৎ করে ঘটা এই দুর্ঘটনা গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে তাঁকে। এর আগে মাল নদী এরকম মারাত্মক হড়পা বান দেখেননি বলেও জানিয়েছেন মানিক। পাশাপাশি, প্রশাসনের তৎপরতার প্রসঙ্গে তিনি জানান, “আমি দেখেছি তখন প্রশাসন এবং ফায়ার ব্রিগেডের কর্মীরা কাজ করেছে। তারা লোককে উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছিল। তবে, সেখানে সিভিল ডিফেন্সের লোক থাকলেও কোনো নৌকা আমার চোখে পড়েনি।”
সর্বোপরি, চোখের সামনে মানুষদের ভেসে থাকতে দেখে নিজেকে সামলে রাখতে পারেন নি মানিক। আর সেই কারণেই তৎক্ষণাৎ উদ্ধারকাজের জন্য নদীতে ঝাঁপ দেন তিনি। এদিকে, পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে যে, ওইদিন মোট ৭০ টি প্রতিমা বিসর্জনের জন্য নিয়ে আসা হয়েছিল সেখানে। যদিও, তার মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ টি প্রতিমা বিসর্জনের পরই ওই ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটে যায়।
প্রতিমা বিসর্জনের সময় সেখানে ৮ জন সিভিল ডিফেন্সের কর্মী ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। তবে, সিভিল ডিফেন্সের এক কর্মী জানিয়েছেন যে, তাঁদের কাছে তখন দড়ি ছাড়া আর কিছুই ছিল না। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে খবর পাওয়া গিয়েছে, মৃতদের মধ্যে ১০ বছরের এক বালিকাও রয়েছে। এদিকে, মাঝরাত পর্যন্ত উদ্ধারকাজ চালানো হলেও প্রবল বৃষ্টির জেরে উদ্ধারকাজ সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। পাশাপাশি, এই ঘটনার জেরে জলপাইগুড়িতে এই বছর বাতিল হয়েছে পুজো কার্নিভাল।