বাংলাহান্ট ডেস্ক: মধ্যরাতে উত্তাল হয়ে উঠল কলকাতা। সল্টলেক করুণাময়ীতে ৮৪ ঘণ্টা ধরে আন্দোলনরত ছিলেন ২০১৪ ও ২০১৭ সালের টেট পরীক্ষার্থীরা (Salt Lake TET Agitation)। তাঁদের দাবি, চাকরি না পাওয়া অবধি আমরণ অনশন করে যাবেন। তবে সেই আন্দোলন কার্যত কুড়ি মিনিটে ছত্রভঙ্গ করে দিল পুলিশ। রীতিমতো বলপ্রয়োগ করে সরিয়ে দেওয়া হল চাকরিপ্রার্থীদের। মধ্যরাতে কলকাতায় পুলিশি ‘অ্যাকশনের’ সাক্ষী থাকল গোটা রাজ্য।
একেই শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি সহ নানা রকম অনৈতিক কাজকর্মের অভিযোগে অস্বস্তিতে রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। তার উপর চাকরির দাবিতে ক্রমাগত আন্দোলন আরও কিছুটা ব্যাকফুটে রেখেছে তৃণমূল কংগ্রেসকে। একদিকে মেয়ো রোডে ৫০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে নিয়োগের দাবিতে আন্দোলন করছেন এসএসসি চাকরিপ্রার্থীরা। ইতিমধ্যেই বিগত ৮৪ ঘণ্টা ধরে সল্টলেকের করুণাময়ীতে আন্দোলন করছিলেন ২০১৪ ও ২০১৭ সালের টেট পরীক্ষার্থীরা।
এই অবস্থায় সল্টলেকের শিক্ষা পর্ষদ অফিসের সামনে ১৪৪ ধারা মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। পর্ষদের আর্জি মেনে বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট জানায়, মেনে চলতে হবে ১৪৪ ধারা। বিধাননগর পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, প্রয়োজনীয় পুলিশ নিয়ে পর্ষদ অফিসে কর্মীদের ঢোকা ও বেরোনোর ব্যবস্থা করতে হবে। এদিন দিনভর আন্দোলনে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সল্টলেক চত্বর।
https://www.facebook.com/DR.SUKANTABJP/posts/2415156625289693
পুলিশের তরফ থেকে ২০১৪ টেট পরীক্ষার্থীদের আন্দোলন তুলে নেওয়ার ঘোষণা করা হয়। তাঁরা ওই স্থান পরিত্যাগ না করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানায় পুলিশ। এই ঘোষণার পর বেড়ে যায় আন্দোলনের তীব্রতা। চাকরিপ্রার্থীরা সাফ জানিয়ে দেন, প্রাণ থাকতে তাঁরা সেখান থেকে উঠবেন না। এদিকে টানা অনশন করতে থাকায় অসুস্থ হয়ে পড়েন একাধিক আন্দোলনকারী। ঘটনাস্থলে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করতে চান সিপিআইএম নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। বিজেপি নেতা সজল ঘোষও যান তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে।
এরপর ঘড়িতে রাত ১২টা বাজতেই ‘অ্যাকশন’ শুরু করে পুলিশ। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় তাদের। এলাকা ফাঁকা করতে আন্দোলনকারীদের চ্যাংদোলা করে তুলে দেওয়া হয় অনশন মঞ্চ থেকে। বহু চাকরিপ্রার্থীকে আটক করা হয়। মাত্র কুড়ি মিনিটেই এলাকা খালি করে দেওয়া হয়। পুলিশের এই অ্যাকশনের জেরে সঙ্গে সঙ্গেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। মধ্যরাতের এই ঘটনার জেরে ইতিমধ্যেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজ্যের রাজনৈতিক মহল।
বাংলার বর্তমান পরিস্থিতিকে হিটলারের জার্মানির সঙ্গে তুলনা করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। টুইট করে সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও। তৃণমূলের ‘খেলা হবে’ স্লোগান নিয়েও কটাক্ষ করেন তিনি। অন্যদিকে, শুক্রবার বেলা ১২টায় সল্টলেকে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেয় বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই। চাকরিপ্রার্থীদের উপর পুলিশি জুলুমের প্রতিবাদে করুণাময়ী বাসস্ট্যান্ডে জমায়েতের ডাক দেওয়া হয়েছে।
Didi’s Khela Hobe had new meaning today when Police started applying brute force & detaining TET 2014 qualified students who were protesting against the state govt for their legitimate demands.
Youths have no future in this TMC govt. This govt must go.
pic.twitter.com/pIjODU5Gkd— Dr. Sukanta Majumdar (@DrSukantaBJP) October 20, 2022
এদিকে আন্দোলনকারীদের আটক করে নিউটাউন থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয় হাওড়া, শিয়ালদহ ও ধর্মতলায়। ২০১৪-র চাকরিপ্রার্থীদের সরিয়ে দেওয়ার পর মুহূর্তেই গোটা এলাকা সাফ করে ফেলে পুলিশ। তুলে ফেলা হয় আন্দোলনকারীদের পোস্টার, ফ্লেক্স। ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণ অনশনকারীদের তুলে দিলেও অবস্থানে অনড় থাকেন ২০১৭ সালের প্রার্থীরা। শেষে রাত ৩টে নাগাদ করুণাময়ী থেকে ২০১৭ সালের প্রতিবাদীদেরও সরিয়ে দেয় পুলিশ। ভোরবেলা আন্দোলনকারীদের একাংশকে শিয়ালদহ স্টেশনে ছেড়ে দেওয়া হয়।
অন্যদিকে, পুলিশি অ্যাকশনের জেরে করুণাময়ীর আন্দোলনস্থল থেকে নিখোঁজ হয়েছে তিন আন্দোলনকারী। এমনটাই অভিযোগ করছেন আন্দোলনরত চাকরিপ্রার্থীরা। ফলে দুশ্চিন্তায় রয়েছে তাঁরা। অচিন্ত্য ধারা, অচিন্ত্য সামন্ত, অর্ণব ঘোষ নামে তিন আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি করেন বাকিরা। তাঁদের কিছু হলে আন্দোলন আরও তীব্র করার হুঙ্কার নিয়েছেন বেশ কিছু চাকরিপ্রার্থী।