টিউশনের টাকায় চলে অর্ণবের সংসার! অশ্রুচোখে মাসির আফসোস, ‘পড়াশোনা করানোই ভুল হলো’

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ কোথাও বাড়ির একমাত্র সন্তানের কথা ভেবে কেঁদে চলেছেন পরিবারের সদস্যরা, আবার কোনো পরিবারের ছোট্ট শিশুটি তার মায়ের অপেক্ষায় গুনে চলেছে প্রতিটি প্রহর! প্রিয়জনের অপেক্ষায় অপেক্ষারত তারা সকলেই। গোটা বাংলা এখন যাদের দিকে তাকিয়ে, সেই প্রাথমিক টেট (Primary Tet) চাকরিপ্রার্থীদের ঘিরে উৎকণ্ঠা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। গতকাল মধ্যরাতে পুলিশি অত্যাচারের শিকার সকলে। কারোর খবর মিলছে, তো কোন কোন ক্ষেত্রে প্রিয়জনের গলা শুনতে অশ্রু চোখে অপেক্ষায় পরিবারের লোকজন। এমনই এক টেট উত্তীর্ণ হুগলির (Hooghly) বাসিন্দা অর্ণব ঘোষ (Arnab Ghosh), যার খোঁজ পেলেও বর্তমানে উদ্বেগ কিছুতেই কাটতে চাইছে না গোটা পরিবারের।

সাম্প্রতিক সময়ে নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলায় তোলপাড় বঙ্গ রাজনীতি। বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ প্রদর্শনে অনড় বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীরা। সেই ধারা বজায় রেখে গত সোমবার সল্টলেকের এপিসি ভবনের নিকট প্রতিবাদে বসে ২০১৪ সালের টেট চাকরিপ্রার্থীরা। তাদের কাতর আবেদন, ‘দ্রুত নিয়োগের ব্যবস্থা করা হোক।’

বিগত তিন দিন ধরে আন্দোলন চললেও গতকাল মধ্যরাতে তাদেরকে জোর করে তুলে দেয় পুলিশ। পরবর্তীতে প্রিজন ভ্যানে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হলেও এখনো পর্যন্ত বহুজনের কোনরকম খোঁজ মেলে নি, যা ঘিরে উদ্বেগে দিন কাটছে সকল পরিবারের। হুগলির বাসিন্দা অর্ণব ঘোষ তাদের মধ্যেকারই একজন। গতকাল রাত থেকে কোনরকম খোঁজ না পেলে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে সকলে। তবে পরবর্তী ক্ষেত্রে ফোন করে অর্ণব পরিবারকে আশ্বস্ত করলেও চিন্তা কমার কোন লক্ষণ নেই!

অর্ণব ঘোষ; হাওড়ার বাড়িতে থাকেন হৃদরোগে আক্রান্ত তার অসুস্থ বাবা। ছোটবেলা থেকে মাসির বাড়িতেই মানুষ হয়েছে অর্ণব; হুগলির দক্ষিণপাড়া এলাকায় বড় হওয়ার পাশাপাশি মাস্টার্স ডিগ্রী এবং বিএড পাশ করে এবং পরবর্তীতে টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও মেলেনি নিয়োগ। অর্ণবের কষ্টের কাহিনী বর্ণনা করতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন তার মাসি সরস্বতী চট্টোপাধ্যায়।

তিনি বলেন, “এর থেকে পড়াশোনা না করলে ভালো হতো। দুটো গরু আর ছাগল কিনে দিলে বরং সেটা কাজে লাগতো। ও বরাবর ভালো পড়াশোনা করেছে। ফল ভালো করতো, কিন্তু এতদিন ধরে চাকরির আশায় কষ্ট করে যেতে হবে, তা কখনো ভাবিনি।”

Tet protest

বর্তমান সময় দাঁড়িয়ে মেলেনি চাকরি! টিউশনি করিয়ে কোনমতে দিন কাটে অর্ণবদের। এদিন অর্ণবের জামাইবাবু জানান, “গত সোমবার কলকাতায় যায় অর্ণব। তবে গতকাল সকালের পর থেকে আর কোনরকম খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না ওর। প্রতিটি সময় উৎকণ্ঠায় কাটছিল আমাদের। এরপর ও যোগাযোগ করলেও এখনো চিন্তায় রয়েছি।” একইসঙ্গে কেঁপে আসা গলায় শ্যামসুন্দরবাবুর কাতর আবেদন, “অর্ণব অবিবাহিত ছেলে। অনেক মা-ই এমন রয়েছেন, যারা ছোট ছোট সন্তানকে নিয়ে প্রতিনিয়ত রাস্তায় বসে আন্দোলন করে চলেছে। এরা যেন সঠিক বিচার পান।”

Sayan Das

সম্পর্কিত খবর