বাংলাহান্ট ডেস্ক : ভারতে (India) বাল্যবিবাহের নিবন্ধিত মামলার সংখ্যা ৫ বছরে প্রায় ৩ গুণ বেড়েছে। ভারতে ২২ কোটিরও বেশি বধূ রয়েছে, যাদের বয়স ১৮ বছরের কম। ভারতে প্রতিদিন ৩৫ জন মেয়েকে উদ্ধার করা হয়, যাদের বিয়ের জন্য অপহরণ করা হয়েছিল। এই তিনটি পরিসংখ্যান থেকে পরিষ্কার যে ভারতে বাল্যবিবাহ এখনও পুরোপুরি নির্মূল হয়নি। ভারতে বিয়ের বৈধ বয়স মেয়েদের জন্য ১৮ বছর এবং ছেলেদের জন্য ২১ বছর। তবে বিভিন্ন ধর্মের ব্যক্তিগত আইনে এই আইনি বয়স ভিন্ন।
উদাহরণস্বরূপ, মুসলিম ব্যক্তিগত আইন অনুসারে, যদি কোনও মেয়ের বয়স ১৫ বছর বা তার বেশি হয় তবে সে তার নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করতে পারে। এখন এমনই এক মুসলিম ছেলে ও মেয়ের বিয়ের বিষয়টি হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছেছে। এই পুরো বিষয়টি একটি ১৬ বছর বয়সী মেয়ে এবং ২১ বছরের একটি ছেলের বিবাহের সাথে সম্পর্কিত। দুজনেই মুসলিম। দুজনেই নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করেছেন। কিন্তু মেয়ের পরিবারের লোকজন এই বিয়েতে আপত্তি জানায়। বিষয়টি পাঞ্জাব- হরিয়ানা হাইকোর্টে বিচারাধীন ছিল।
চলতি বছরের ১৩ জুন পাঞ্জাব-হরিয়ানা হাইকোর্ট এই বিয়েকে স্বীকৃতি দেয়। হাইকোর্ট বলেছে যে মুসলিম ব্যক্তিগত আইনের অধীনে, মেয়েটি শারীরিকভাবে এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে তার বিয়ে করার অধিকার রয়েছে। ন্যাশনাল কমিশন ফর প্রোটেকশন অফ চাইল্ড রাইটস (এনসিপিসিআর) হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। এনসিপিসিআর, তার পিটিশনে যুক্তি দিয়েছিল যে হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত বাল্যবিবাহের অনুমতি দিচ্ছে এবং এটি ২০০৬ সালের বাল্যবিবাহ নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করেছে। আবেদনে বলা হয়েছে, এই আইন ধর্মনিরপেক্ষ এবং সব ধর্মের জন্য প্রযোজ্য। এখন সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্ত নেবে ১৬ বছরের মেয়ে এবং ২১ বছরের ছেলের বিয়েটি বৈধ কি না। আগামী ৭ নভেম্বর এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হবে। বলা বাহুল্য, বাল্যবিবাহের কড়া আইন, তারপরও বাড়ছে মামলা।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (এনসিআরবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ১০ বছরে, বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ আইনের অধীনে ৪.৫ হাজারেরও বেশি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এর মধ্যে ৭১ শতাংশের বেশি মামলা হয়েছে ৫ বছরে। ২০২০ এবং ২০২১ সালে করোনার দুই বছরে, ১৮০০-এর বেশি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছিল। এনসিআরবি-র তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে ১২ হাজার ৭৮৮ জন মেয়েকে অপহরণের পরে উদ্ধার করা হয়েছিল। এই মেয়েগুলোকে বিয়ের জন্য অপহরণ করা হয়েছিল। অর্থাৎ প্রতিদিন এমন ৩৫টি মেয়েকে উদ্ধার করা হয়েছে।
এই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ভারতের অর্ধেকেরও বেশি “বালিকা বধূ” উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও মহারাষ্ট্রে রয়ছে। উত্তরপ্রদেশে ৩.৬ কোটি বালিকা বধূ রয়েছে। যেখানে বিহারে ২.২ কোটি, পশ্চিমবঙ্গে ২.২ কোটি, মহারাষ্ট্রে ২ কোটি এবং মধ্যপ্রদেশে ১.৬ কোটি রয়েছে।