বাংলা হান্ট ডেস্ক: ছোটবেলা থেকেই অসাধারণ গুণের অধিকারী তিনি। যার ওপর ভর করে মুহূর্তের মধ্যে এঁকে ফেলতে পারেন প্রতিকৃতি। কিন্তু, বারংবার তাঁর এই কাজ বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে অর্থের কারণে। এমনকি, মাত্র নবম শ্রেণিতেই পড়াশোনায় ইতিও টানতে হয় তাঁকে। এমতাবস্থায়, প্রতি মুহূর্তে দাঁতে দাঁত চিপে লড়াই করে মা আর বোনকে নিয়ে কোলাবার একটি ঝুপড়িতে বেড়ে ওঠেন নীলেশ মোহিত (Nilesh Mohit)। বাবা মত্ত থাকায় নিত্যদিন মায়ের সঙ্গে ঝামেলা চলত। সেই কারণে ২০০৯ সালে কাজের খোঁজে মহারাষ্ট্রের রায়গড় থেকে মুম্বইয়ে চলে এসেছিলেন তাঁরা। পাশাপাশি, বাবাকে ছেড়ে চলে আসায় পুরো সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে নীলেশের কাঁধে।
আর তখন থেকেই শুরু জীবনযুদ্ধ। এমনকি, একটা সময়ে নীলেশের মা-ও পরিচারিকার কাজ করতে করতে অত্যধিক পরিশ্রমের জেরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এমতাবস্থায়, দিনে দু’জায়গায় কাজ করেও সংসার চালাতে হয় নীলেশকে। এদিকে, ছোট থেকেই নীলেশের ছবি আঁকার প্রতি তীব্র আকর্ষণ ছিল। এমনকি, সুযোগ পেলেই বিভিন্ন চিত্র প্রদর্শনীতেও হাজির হতেন তিনি। ঠিক সেই আবহেই এক বার মুম্বইয়ের জাহাঙ্গির আর্ট গ্যালারিতে বিশ্ববিখ্যাত শিল্পী মকবুল ফিদা হুসেনের চিত্র প্রদর্শনী দেখে ছবি আঁকার প্রতি আরও আকৃষ্ট হয়ে পড়েন নীলেশ।
যদিও, আর্থিক সঙ্কট তাঁকে বারংবার চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে। একটা সময়ে পিওন এবং নিরাপত্তারক্ষীর কাজ ছেড়ে দিয়ে ফের পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। কিন্তু, খরচ সামলাতে হোটেলে ওয়েটারের কাজ শুরু করেন নীলেশ। যদিও, তখন চলত ছবি আঁকাও। এই প্রসঙ্গে তিনি এক সাক্ষাৎকারে জানান যে, “এক দিন হঠাৎ হোটেলে এক গ্রাহককে চা দেওয়ার পর ট্রে-তে থাকা ন্যাপকিন পেপারটিতে ওই গ্রাহকেরই ছবি আঁকতে শুরু করি। যদিও, তা দেখে সুপারভাইজার ধমক দেন। কিন্তু তিনি আমার আঁকা দেখে চমকে যান। এরপরই তিনি বলেন, আমাকে কয়েক জন নামী ব্যক্তিদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবেন। যাতে আমি আরও ভালোভাবে ছবি আঁকতে পারি। এমনকি, সেই ছবি বিক্রি করারও সুযোগ থাকবে।”
তারপর থেকেই তিনি বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিদের পাশাপাশি একাধিক রাজা-মহারাজার ছবি আঁকতে শুরু করেন এবং সেগুলি বিক্রিও হতে থাকে। সেই সময়েই দেশের অন্যতম বর্ষীয়ান শিল্পপতি রতন টাটারও একটি ছবি আঁকেন তিনি। এমনকি, ২০১৮ সালে টাটার জন্মদিনে তিনি একটি বড় ছবি উপহার দেন টাটাকে। পাশাপাশি, টাটাকে তিনি জানান, “আপনার যত বড় ছবি এঁকেছি, তার থেকে অনেক ছোট ঘরে থাকি আমি। ফলে আমি ছবি আঁকলেও তা রাখার জায়গা থাকে না।”
এদিকে, এই কথা শুনে রতন টাটা তাঁকে একটি চেক লিখে দিয়ে বলেছিলেন যে, এই টাকা দিয়ে মুম্বইয়ে যেন একটা বাড়ি কিনে নেন নীলেশ। যদিও, নীলেশ অত্যন্ত সম্মানের সাথে তা ফেরত দিয়ে টাটাকে বলেছিলেন, “যদি আপনার কিছু দিতে ইচ্ছা হয়, তা হলে আমাকে কাজ দিন। আমার সংসার চালানো জরুরি।” আর এই কথা শুনেই টাটা হেসে তাঁর যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ দেওয়ার কথা জানান। এমতাবস্থায়, এখনও কাজ পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন নীলেশ। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, বর্তমানে প্রতি মাসে নীলেশের আঁকা একটি বা দু’টি ছবি বিক্রি হয়। যার দামও থাকে বেশ চড়া। এমনকি, কিছু কিছু ছবির দাম ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠে। তবে, এখনও তিনি সেই কাজের অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।