ছিলনা প্রশাসনের অনুমতি! তারপরও খুলে দেওয়া হয় গুজরাটের ওই ঘাতক সেতু, তদন্তে প্রকাশ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য

বাংলাহান্ট ডেস্ক : গতকাল গোটা দেশজুড়ে পালিত হয়েছে ছট পুজো (Chhat Puja)। এরকমই এক ছট পুজোর ঘাটে ভয়ংকর দুর্ঘটনা প্রত্যক্ষ করল গুজরাট (Gujarat)। রবিবরা সন্ধ্যায় গুজরাটের মোরবি জেলায় (Morbi District) মাচ্ছু নদীর উপর একটি কেবল ব্রিজ ভেঙে পড়ে। প্রায় শতাধিক মানুষ সেখানে আটকে পডেন বলে জানা যায়। মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হয় উদ্ধারকাজ। পুলিস, স্থানীয় প্রশাসন, রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী, দমকল বিভাগ উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সঙ্গে রাত লাগান স্থানীয় মানুষও। সারা রাত জুড়ে চলছে সেই তল্লাশি অভিযান। বর্তমানে এই দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪০ এরও বেশি।

ব্রিজ ভেঙে পড়তেই কয়েকশো মানুষকে নিয়ে জলে ডুবে যায় ব্রিজের একাংশ। একটি ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, প্রাণ বাঁচাতে মানুষ সেখানে সাঁতার কাটছে। ভেঙে পড়া ব্রিজের কেবল ধরে ভেসে থাকার শেষ চেষ্টা করছিলেন বেশ কয়েকজন। সেই ভিডিয়োতে অসহায় অবস্থায় শিশু ও মহিলাদেরও দেখা যায়। জানা গিয়েছে, এই ব্রিজ ভেঙে পড়ার আগে এর ধারণ ক্ষমতার বেশি মানুষ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ঘটনার মুহুর্তে প্রায় ৪০০ জন মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছে সেই ব্রিজ। প্রথম কেবলগুলি ভেঙে পড়ে এবং এক সেকেন্ডের মধ্যেই ছিটকে সেতুটি নীচে নেমে আসে। মানুষ একে অপরের উপর নদীতে পড়ে যান। কেউ কেউ সেতুর পাশের বারগুলি ধরে থাকতে পেরেছিলেন বলে জানান তিনি।

আরেকজন স্থানীয় বাসিন্দা রঞ্জনভাই প্যাটেল এক স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ‘যতজনকে সম্ভব আমরা বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলাম। যাঁরা সাঁতরে পাড়ে আসার চেষ্টা করছিলেন তাঁদের আমরা টেনে তুলে নিয়েছি। যেহেতু বেশিরভাগ মানুষই মাঝ নদীতে পড়েছিলেন আমরা তাঁদের বাঁচাতে পারিনি।’ আরেক প্রত্যক্ষদর্শী সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘অফিসের পর আমি বন্ধুদের সঙ্গে এই নদীর ধারে এসেছিলাম। সেই সময়ই ব্রিজ ভেঙে পড়ার বিকট শব্দ শুনতে পাই। সেখানে গিয়ে জলে ঝাঁপ দিই। কিছু মানুষকে উদ্ধার করতে পারি। আমরা বেশ কয়েকজন শিশু ও মহিলাকে উদ্ধার করতে পেরেছিলাম।’

পরিবার নিয়ে এই ঝুলন্ত ব্রিজে ঘুরতে এসেছিলেন আহমেদাবাদের বাসিন্দা বিজয় গোস্বামী। কিন্তু ব্রিজ ভেঙে পড়ার আগেই তাঁরা সেখান থেকে চলে যান। তিনি জানান, ‘ব্রিজের উপর প্রচণ্ড ভিড় ছিল। আমি ও আমার পরিবার ব্রিজের উপরই ছিলাম। সেই সময় কিছু অল্প বয়সী ছেলে ইচ্ছাকৃতভাবে ব্রিজটি নাড়াতে থাকে। কোনও ঠেস ছাড়া সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা অসাধ্য ছিল। আমার মনে হচ্ছিল এটি বিপজ্জনক হতে পারে, তাই ব্রিজের কিছুটা গিয়েই সেখান থেকে আমি পরিবার নিয়ে ফিরে আসি।’ তিনি আরও জানান,’তবে সেখান থেকে আসার আগে সেখানকার কর্মীদের সতর্ক করেছিলাম যে কিছু মানুষ সেখানে ব্রিজটি নাড়াচ্ছে।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, কর্মীরা তাঁর কথায় পাত্তাও দেয়নি। তাঁরা টিকিট বিক্রি করতেই ব্যস্ত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘কর্মীরা জানিয়েছিলেন, তাঁদের কাছে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করার কোনও উপায় নেই।’

কিছুক্ষণের জন্য আর্তনাদ ভেসে আসে মাচ্ছু নদী থেকে। সেখানে অনেকেই নিজের পরিবার-পরিজনদের হারিয়েছেন। নিজের প্রাণ বাঁচিয়ে উঠতে পারলেও কাছের মানুষের খোঁজে তখনও দুর্বল শরীরে চলছে তল্লাশি। ১০ বছরের এক কিশোর জানায়, ব্রিজ ভেঙে পড়ার সময় সে একটি দড়ি ধরেছিল। সেটি ধরেই উঠে এসে কোনও রকমে নিজে প্রাণ বাঁচিয়েছে। কিন্তু তার খুঁজে পায়নি তার বাবা-মাকে।

দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-মন্ত্রীরা এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন। রাজ্যসরকারের পক্ষ থেকেও নিহতদের পরিবারকে ৪ লক্ষ করে টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে সরকারের তরফ থেকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও সমবেদনা জানিয়ে নিহতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা ও আহতদের ৫০ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। এই মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার ভিডিয়ো ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে ভেঙে পড়ে মাচ্ছু নদীর উপর এই ঝুলন্ত কেবল ব্রিজ। জানা যাচ্ছে এই দুর্ঘটনার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত এই ব্রিজের উপর ছিলেন কয়েকশো সাধারণ নাগরিক।

Sudipto

সম্পর্কিত খবর