বাংলাহান্ট ডেস্ক: গত ৩০ অক্টোবর, রবিবার একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনার সাক্ষী থেকেছে গোটা দেশ। গুজরাটের মোরবির একটি ঝুলন্ত সেতু ভেঙে (Morbi bridge collapse) প্রাণ হারিয়েছেন শতাধিক মানুষ। আহতও হয়েছেন বহু। জানা গিয়েছে, এই সেতু দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১৩৪ জনের। যার মধ্যে ৪০ জনেরও বেশি শিশু রয়েছে। এমনকি, এখনও কাদায় অনেকের দেহ আটকে রয়েছে যেগুলি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তাঁদের উদ্ধার করা হলে বাড়তে পারে মৃতের সংখ্যা।
জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনাটি ঘটার সময় সেতুর উপর মজুত ছিলেন প্রায় ৫০০ মানুষ। এই দুর্ঘটনা ঘটার পর গোটা মোরবি জুড়ে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে নিহতদের পরিজনদের হাহাকার। তবে এমন মুহূর্তেও উঠে এসেছে মনুষ্যত্ব ও বীরত্বের কাহিনী। দুর্ঘটনাগ্রস্তদের মধ্যে এমন মানুষও রয়েছেন যাঁরা নিজেরা গুরুতর আহত হলেও বাঁচিয়েছেন একাধিক প্রাণ।
তেমনই একজন হলেন নাদিম সেখ। নিজের পায়ে গুরুতর চোট পেলেও হাল ছেড়ে না দিয়ে তিনি প্রাণ বাঁচিয়েছেন অন্তত ৬০ জনের প্রাণ। তাঁদের ফিরিয়ে এনেছেন মৃত্যুর মুখ থেকে। তাই গোটা মোরবি জুড়েই শোনা যাচ্ছে নাদিমের মসিহা হওয়ার কাহিনী। দুর্ঘটনাটি যখন ঘটে তখন নাদিম নিজেও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সেতুটি আচমকা ভেঙে পড়ায় পায়ে গুরুতর চোট পান নাদিম।
তিনি সাঁতার জানতেন। ফলে তিনি তড়িঘড়ি নদী পেরিয়ে ডাঙায় চলে আসতে সক্ষম হন। এরপর তিনি দেখেন শতাধিক মানুষ জলে পড়ে রয়েছেন এবং বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। এমন সময় নাদিম সিদ্ধান্ত নেন যে তাঁকে সেই সব মানুষের প্রাণ বাঁচাতেই হবে। তাই তিনি জলে ঝাঁপ দেন ও অন্তত ৬০ জনকে ডাঙায় নিয়ে আসেন। এই মুহূর্তে তিনি মোরবির এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সংবাদমাধ্যমকে নাদিম বলেন, “সেতুটি আচমকাই ভেঙে পড়ে। সেই সময় সেখানে যাঁরা ছিলেন প্রত্যেকেই জলে পড়ে যান। ঘটনার আকস্মিকতায় সকলেই ঘাবড়ে যান এবং চূড়ান্ত এক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। আমি আমার ৫ জন বন্ধুর সঙ্গে সেই সময় সেতুতে ছিলাম। এই দুর্ঘটনায় আমরা আমাদের একজন বন্ধুকে হারিয়েছি। আমি ও আমার বন্ধুরা সাঁতার জানতাম। ফলে আমরা সকলে মিলে প্রায় ৫০-৬০ জনকে জল থেকে উদ্ধার করেছি। এই কাজ করার সময় আমি নিজেও আহত হই, কিন্তু হাল ছেড়ে দিইনি।”
নাদিম আরও জানান, এই ঘটনা তাঁর জীবনের সবচেয়ে পীড়াদায়ক ঘটনা। এমন ঘটনা তিনি আগে কখনও দেখেননি। তিনি বলেন, “অনেক চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু অনেক শিশু আমার চোখের সামনে মারা গেল। তাদের মায়েরা তাদের জন্য নদীর তীরে অপেক্ষা করছিলেন।”