বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: বিশ্বকাপের এক সপ্তাহ আগে একটি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটালেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। তিনি এইমুহূর্তে বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ গোলের মালিক। ফুটবলের মাঠে বিশ্বকাপ ছাড়া প্রায় সমস্ত কিছু দলগত এবং ব্যক্তিগত অর্জন করা হয়ে গিয়েছে তার। এইমুহূর্তে তিনি প্রায় ৩৮ বছর বয়সী। কিন্তু সাফল্যের খিদে তার এতটাই বেশি যে এই মুহূর্তে প্রবল সমস্যার মধ্যে রয়েছেন তিনি। চলতি ফুটবল মরশুমের শুরু থেকে যেন নিজের পরিচিত ছন্দ হারিয়ে ফেলেছেন পর্তুগিজ মহাতারকা। কোনওদিনই তিনি মিডিয়ার ডার্লিং নন। তাই ৩৭ বছর বয়সে এসেপ্রথম যখন কোনও ব্যক্তিগত খারাপ মরশুম কাটাচ্ছেন তিনি, তখন তার পারফরম্যান্সের অবনতির চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়েছে।
চলতি মরশুমের শুরুতে ডাচ কোচ এরিক টেন হাগকে নতুন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কোচ হিসাবে নিয়োগ করেছিল রেড ডেভিলস ম্যানেজমেন্ট। তিনি যখন প্রাক-মরশুম প্রস্তুতি পর্বে গোটা দলকে নিয়ে অনুশীলনে ব্যস্ত ছিলেন তখন কোন পারিবারিক সমস্যার কারণ দেখিয়ে সেই শিবিরে যোগ দিতে পারেননি রোনাল্ডো। তিনি ফিরে আসার পর মরশুমের শুরু থেকেই তার জায়গা হয়েছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড বেঞ্চে। শুধুমাত্র ইউরোপা লিগের ম্যাচগুলি এবং ইপিএলে কোনও ফরোয়ার্ডের চোট থাকলেই প্রথম একাদশে সুযোগ পাচ্ছিলেন রোনাল্ডো যা নিয়ে পর্তুগিজ মহাতারকা নিজে একেবারেই সন্তুষ্ট ছিলেন না। সেই সঙ্গে ফুটবল বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশ তার ওপর অভিযোগ করেছিল যে যেহেতু ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এই মরশুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলার যোগ্যতাঅর্জন করে উঠতে পারেননি, তাই ক্লাব ছাড়ার জন্য মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন রোনাল্ডো গোটা প্রাক মরশুম পর্ব জুড়ে। শেষ পর্যন্ত মনের মতন কোনও ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন না হওয়ায় বাধ্য হয়েই নাকি রোনাল্ডো ম্যানচেস্টারে ফিরেছেন।
এবার এই সমস্ত বদনাম, কুৎসা, সাম্প্রতিককালে তার ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে একজন ফুটবলার হিসেবে অবস্থান কিছু নিয়ে মুখ খুলেছেন রোনাল্ডো নিজে। বিখ্যাত ইংরেজ জার্নালিস্ট পিয়ার্স মর্গ্যানের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে বসেছেন রোনাল্ডো। সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ্যে আসবে বুধবার এবং বৃহস্পতিবার দুটি ভিন্ন ভাগে। আপাতত কিছু কিছু তথ্য এবং একটি ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে যেখানে রোনাল্ডো বলেছেন, “যেদিন থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ইতিহাসের সবচেয়ে সফল কোচ অ্যালেক্স ফার্গুসন দায়িত্ব ছেড়েছেন (২০১৩) সেদিন থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আর আগে এগোয়নি। আগের বছর যখন কোচ হিসেবে ওলে গানার সলশায়ারকে ছেঁটে ফেলা হলো, তখন এমন একজনকে (রাল্ফ র্যাগনিক) কোচ করে আনা হলো যিনি সাধারণত স্পোর্টিং ডিরেক্টরের কাজ করতেন। আমি সিদ্ধান্তর অর্থ আমি অন্তত বুঝতে পারিনি। তাছাড়া আমি যখন ক্লাব ছেড়েছিলাম তখন থেকে ক্লাবের সুইমিং পুল, জিম, বেশকিছু ট্রেনিংয়ের সামগ্রী সব একইরকম রয়ে গিয়েছে।”
এইটুকু অংশ আপাতত রোনাল্ডোর মুখ থেকে শোনা গিয়েছে। তাছাড়াও তিনি নিজে যা যা বলেছেন সেগুলির কিছু অংশ প্রকাশ্যে এসেছে। তিনি নাকি এটাও বলেছেন যে তিনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বর্তমান কোচ এরিখ টেন হাগকে শ্রদ্ধা করেন না, কারণ সে রোনাল্ডোকে শ্রদ্ধা করেনি। কোচ এবং ক্লাবের কিছু সিনিয়র এক্সিকিউটিভ তাকে দলে চায়নি শুরু থেকেই। আগের মরশুমেও নাকি ওই এক্সিকিউটিভরা তাকে দলে চাননি। তার ওপর জুলাই মাসে ইচ্ছা করে দলের প্রাক মরশুম প্রস্তুতি শিবিরের যোগ না দেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছিল, এই অভিযোগ করিয়ে দিয়ে রোনাল্ডো জানিয়েছেন যে তার বছরই জন্মানো শিশুকন্যা সেই সময় অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়েছিল এবং নিজের পরিবারের পাশে দাঁড়াতেই সেই সময় ক্লাবের সঙ্গে যোগ দিতে পারেননি তিনি। প্রসঙ্গত চলতি বছরে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর সঙ্গিনী জর্জিনা রদ্রিগেজের যমজ সন্তানের জন্ম দেওয়ার কথা ছিল। তো জন্মানোর সময় তাদের মধ্যে যে পুত্র সন্তান ছিল সে জন্মানোর পরই মারা যায় এবং রোনাল্ডোর মতে যে কন্যা সন্তানকে ডাক্তাররা বাঁচাতে সক্ষম হয়েছিল সে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের প্রাক মৌসুম প্রস্তুতি শিবির চলাকালীন অত্যন্ত অসুস্থ ছিল। সেইসঙ্গে প্রাক্তন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফরোয়ার্ড ওয়েন রুনির বিরুদ্ধেও খড়্গহস্ত হয়েছেন রোনাল্ডো। প্রাক্তন ইংল্যান্ড তারকা বেশ কয়েকবার সাক্ষাৎকারে রোনাল্ডোর সমালোচনা করেছেন এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই মুহূর্তে পর্তুগিজ মহাতারকার মতো বয়স্ক ফুটবলারের প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন। সেই প্রসঙ্গে রোনাল্ডো নাকি বলেছেন যে তিনি জানেন না রুনি প্রকাশ্যে কেন এমন ভাবে তার বিরুদ্ধে কথা বলেন। রোনাল্ডো মনে করেছেন হয়তো তিনি রনির চেয়ে এক বছরের বড় হয়েও এখনো ফুটবল খেলে যাচ্ছেন এবং রনি দু’বছর আগেই নিজের ক্যারিয়ার শেষ করে ফেলেছেন সেই নিয়েই হয়তো ইংল্যান্ড তারকা তার ওপর সন্তুষ্ট নন। তারপর ইয়ার্কির ছলে নাকি রোনাল্ডো এটাও বলেছেন বয়স বেশি হওয়া সত্ত্বেও তাকে এখনও রুনির চেয়ে বেশি আকর্ষণীয় দেখতে।
কিন্তু এই সাক্ষাৎকার দেওয়ার পর বিশ্বকাপের শেষে ডিসেম্বর মাসে আবার কি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে খেলতে নামতে পারবেন রোনাল্ডো। জবাবে নাকি পর্তুগিজ তারকা বলেছেন আপাতত তিনি নিজের পুরো ফোকাসটা রাখছেন পর্তুগালের হয়ে বিশ্বকাপে ভালো পারফরম্যান্স করার ওপর। তারপর তিনি ক্লাবের সঙ্গে নিজের যাবতীয় সমস্যা নিয়ে বোঝাপড়ায় বসবেন। রোনাল্ডো মনে করেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তেমন প্রতিষ্ঠান হওয়া উচিত ছিল এত বছর পরে, সেই জায়গায় পৌঁছতে পারেনি তারা। ম্যানচেস্টার সিটি লিভারপুল এমনকি আর্সেনাল ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে টপকে গিয়েছে। নিজেদের হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার করতে প্রচুর পরিবর্তন প্রয়োজন এই ক্লাবে এবং রোনাল্ডো এটাও মনে করেন যদি এই পরিবর্তনের শুরুটা তাকে দিয়েই হয় তাহলে তার কোনও সমস্যা নেই। টিকাছড় বিখ্যাত উক্তি টেনে এনে রোনাল্ডো বলেছেন কোন কিছু নতুন করে গঠন করতে গেলে প্রথমে প্রয়োজন পড়ে ধ্বংসের। সেই সঙ্গে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ভক্তদেরকে নিজের ভালোবাসার কথাও জানিয়েছেন রোনাল্ডো। তার মতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সমর্থকটাই একমাত্র এমন যারা সকল রকম পরিস্থিতিতে তার পাশে থেকেছেন। ক্লাবের ভক্তদের তিনিও খুব পছন্দ করেন কিন্তু সত্যিটা জানলে তাদের পক্ষেই উপকার হবে বলে মনে করছেন সিআরসেভেন। সেইসঙ্গে রোনাল্ডোর শিশুকন্যা মারা যাওয়ার পরে লিভারপুল বনাম ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ম্যাচে লিভারপুলার ভক্তরা খেলা চলাকালীন সপ্তম মিনিটে উঠে দাঁড়িয়ে রোনাল্ডোর পাশে থাকার বার্তাস্বরূপ গোটা এক মিনিট যে হাততালি দিয়েছিলেন সেই ঘটনা তার হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল বলে জানিয়েছেন তিনি। কত বড় ইন্টারভিউ রোনাল্ডো দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু এখন যেহেতু তিনি চলতি মরশুমে বেশি খেলেননি বলে অফ ফর্মে রয়েছেন, তাকে ছাড়া এই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড বেশ কিছু ম্যাচ জিতেছে, তাই তার এই কথাগুলি সাধারণ মানুষের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে সেই নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়। রোনাল্ডোর কাছে এখন নিজেকে প্রমাণ করার একমাত্র উপায় বিশ্বকাপে সেরা পর্যায়ের ফুটবল খেলা, যা তিনি প্রায় ৩৮ বছর বয়সে পৌঁছে করতে পারবেন কি না সে নিয়ে বড় সন্দেহ থেকে যায়।