জন্ম থেকেই নেই দু’টি হাত! দু’পায়ে ট্রাক্টর চালিয়ে অন্নসংস্থান করছেন পূর্ব বর্ধমানের IIT পাস প্রতিবন্ধী যুবক

বাংলা হান্ট ডেস্ক: অদম্য মনের জোরের কাছে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাও যে হার মেনে যায় সেটাই যেন ফের একবার প্রমাণ করে দেখালেন পূর্ব বর্ধমান (Purba Bardhaman) জেলার রায়না বিধানসভার উচালন গ্রামের বাসিন্দা সুজিত দাঁ। জন্ম থেকেই দু’টি হাত নেই তাঁর। তবুও, শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কাছে হেরে যাতে চান নি বছর ৩৭-এর সুজিত। বরং, তিনি জীবনযুদ্ধে একের পর এক গন্ডী অবলীলায় টপকে গিয়েছেন। আর এভাবেই তিনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সকলের কাছেই।

জানা গিয়েছে, জীবনে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার প্রেরণা সুজিতকে জুগিয়েছিলেন তাঁর গ্রামেরই মাস্টার মশাই শক্তিপদ ভট্টাচার্য্য। শুধু তাই নয়, সুজিতকে শিক্ষার আলোয় আলোকিতও করেছেন তিনি। হাত না থাকায় পায়ে পেনসিল গুঁজেই লেখা পড়া শিখেছেন সুজিত। আর এভাবেই তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক ছাড়াও ITI-র মাধ্যমে সার্ভে ডিপ্লোমা কোর্সও সম্পূর্ণ করেন।

এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, সুজিত কিন্তু একটি চাকরির পরীক্ষাতেও পাস করেছিলেন। যদিও, শেষপর্যন্ত চাকরি অধরাই থেকে যায় তাঁর। এই প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ITI পাশ করার পর ডিভিসির চাকরির পরীক্ষায় বসে উত্তীর্ণ হন তিনি। পাশাপাশি, ওই প্যানেলে তাঁর নামও এসেছিল। কিন্তু তারপরেই ২০১১ সালে রাজ্যে সরকার বদলের পর আর সেই বিষয়ে কোনো তথ্য মেলে নি।

যদিও, তাতেও থেমে থাকেন নি তিনি। বরং, শারীরিক প্রতিবন্ধকতার সাথে টক্কর দিয়ে দুই পা-কে কাজে লাগিয়েই ট্রাক্টর চালানো শেখেন সুজিত। আর ট্রাক্টর চালিয়েই প্রথম উপার্জন হাতে পেয়েছিলেন তিনি। বর্তমানে ট্রাক্টর চালানোর পাশাপাশি ধানের ব্যবসা করেন সুজিত। এদিকে, একদম অল্প বয়সেই বাবাকে হারিয়েছিলেন তিনি। এমতাবস্থায়, বাড়িতে বিধবা মা পুতুলদেবী সহ যৌথ পরিবারে অন্য সদস্যরাও রয়েছেন। কিছুদিন আগেই খুড়তুতো ভাইয়ের সঙ্গে যৌথভাবে স্পেয়ার পার্টসের ব্যবসাও শুরু করেছেন সুজিত। পাশাপাশি, যোগাযোগের জন্য পা দিয়েই ফোন ব্যবহার করেন তিনি।

এদিকে, ছেলের প্রতিবন্ধকতার প্রসঙ্গে সুজিতের মা পুতুলদেবী জানান, “ছেলেকে জন্ম দেওয়ার পর যখন দেখি তার দু’টি হাতই নেই তখন আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। তারপর জ্ঞান ফিরলে শুধুই কেঁদেছি। অনেক ব্যঙ্গ বিদ্রেপ আমাকে প্রথমে সহ্য করতে হয়েছে। তবে, পরিবারের সবাই পাশে ছিল বলেই আমার ছেলে সুজিত সমস্ত বাধা কাটিয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে।”

whatsapp image 2022 12 12 at 5.21.53 pm

কি জানালেন সুজিত: পাশাপাশি, সুজিত জানিয়েছেন, দুটি পা দিয়ে তাঁকে সবকিছু করতে হয় বলে তাঁর কিন্তু কোনো আক্ষেপ নেই। বরং এইভাবে সমস্ত কাজ করতে পারায় নিজেকে নিয়ে তিনি গর্ববোধ করেন। তবে, এতকিছুর পরেও রয়ে গেছে একটা আক্ষেপ। একটা স্থায়ী চাকরি পেলে তাঁর অনেক উপকার হত বলে জানান তিনি।


Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর