বাংলা হান্ট ডেস্কঃ আত্মহত্যা না খুন? সিবিআই (CBI) হেফাজতে লালন শেখের (Lalan shekh) মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এখন এই প্রশ্নেই তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতি। লালনের মৃত্যুর সময় সিবিআই এর সাথে ছিলেন মাত্র এক জন কেন্দ্রীয় জওয়ান! ফলে কার্যতই মৃত্যু নিয়ে জমেছে ধোঁয়াশার কালো পাহাড়।
সিবিআই হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে বগটুইকাণ্ডের (Bagtui) মূল অভিযুক্ত লালন শেখের। একদিকে সিবিআই এর দাবি, আত্মহত্যা করেছে লালন শেখ, অন্যদিকে তাঁর পরিবারের দাবি খুন করা হয়েছে লালনকে। সোমবার বিকেলে লালন শেখের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন বীরভূমের পুলিশ সুপার নগেন্দ্র ত্রিপাঠী৷ বিকেল ৪টে ৫০ মিনিট নাগাদ শিবিরের শৌচালয়ে গিয়ে গলায় গামছা জড়িয়ে আত্মঘাতী হন লালন, এমনটাই জানানো হয় সিবিআই তরফে।
জানা গিয়েছে, রামপুরহাটের পথসাথীতে সিবিআইয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে৷ তবে কিভাবে সিবিআই হেফাজতে মৃত্যু হল তাঁর? লালন শেখের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এখন রীতিমতো তোলপাড় বঙ্গ রাজনীতি। তাঁর মৃত্যুর তদন্তের দাবি জানাচ্ছে শাসক-বিরোধী দু’পক্ষই।
সূত্রের খবর সিবিআই হেফাজতে লালনের নিরপত্তার দায়িত্বে ছিল সিআরপিএফ। সিবিআই সূত্রে খবর , তাঁর মৃত্যুর সময় রামপুরহাটে সিবিআইয়ের অস্থায়ী শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন দু’জন সিবিআই আধিকারিক এবং এক জন কেন্দ্রীয় জওয়ান। মঙ্গলবারই লালনকে আদালতে উপস্থিত করানোর কথা ছিল। সেই সংক্রান্ত কাজেই সোমবার দুপুরে আদালতে গিয়েছিলেন দুই সিবিআই আধিকারিক। সেই সময় লালনের পাহারায় ছিলেন মাত্র এক জন কেন্দ্রীয় জওয়ান।
সোমবার সিবিআইয়ের অস্থায়ী শিবিরের শৌচালয় থেকে লাল রঙের গামছা গলায় জড়ানো অবস্থায় উদ্ধার হয় লালনের ঝুলন্ত দেহ। প্রসঙ্গত, গত ২১ মার্চ রামপুরহাটের বগটুই মোড়ে বোমা ছুড়ে দুষ্কৃতীদের দ্বারা খুন হয় রামপুরহাটের বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের উপপ্রধান ভাদু। সেই খুনের পর রাতে বগটুই গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। তার জেরে ১০ জনের মৃত্যু হয়। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে সেই ঘটনার তদন্তভার হাতে নেয় সিবিআই। সেই ঘটনায় লালনের বিরুদ্ধে বগটুইয়ে আগুন লাগানোর অভিযোগ ছিল। এরপর চলতি মাসেই ঝাড়খণ্ডের পাকুড় থেকে পাকড়াও করা হয় লালনকে।
এরপর হঠাৎই সিবিআই হেফাজতে তাঁর অস্বাভাবিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে শোরগোল পরে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। অন্যদিকে লালনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে শুরু হয়ে গেছে শাসক-বিরোধী তরজা। তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বিজেপির দিকে নিশানা করে বলেন, ‘‘সিবিআইয়ের উপর আস্থা রাখি। অনেক যোগ্য অফিসার রয়েছেন। কিন্তু সিবিআইকে যখন বিজেপি ব্যবহার করে, তখন প্রশ্ন তো উঠবেই। বিজেপি যখন বলছে সিবিআই অমুক জায়গায় যাবে, অমুককে ধরে আনবে, তখন বলতেই হয়, আধিকারিকরা নন, বিজেপি চালাচ্ছে তদন্ত।’’
সবমিলিয়ে ক্রমশ্য দানা বাঁধছে রহস্য। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, বগটুইকাণ্ডের অভিযুক্তের নিরাপত্তা কি এতটাই ঢিলেঢালা ছিল যে সকলের চোখের আড়ালে সে আত্মহত্যা করলো? নাকি এর পেছনে রয়েছে অন্য কোনো গল্প? একের পর এক আশঙ্কায় বেঁধেছে প্রশ্নের বিশাল জট। তবে সিবিআই অবশ্য এই ঘটনা নিয়ে এখনো পর্যন্ত মুখ খোলেনি।