বাংলাহান্ট ডেস্ক : যখন তাঁর মাত্র ১৫ বছর বয়স, সে তাঁর পূর্ব লন্ডনের বাসস্থান ছেড়ে স্কুলের পড়াশোনা শেষ না করেই পালিয়ে আসে সিরিয়া (Syria)। আর তারপরেই যোগ দেয় ‘আইএস’ (Islamic State), যে ‘আইএস’ কিনা মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম এবং বর্তমানে পৃথিবীর সন্ত্রাসবাদী (Terrorist) আন্দোলনের সাথে যুক্ত এক বৃহত্তম সংগঠন। ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর থেকেই সম্পূর্ণ রূপে বদলে যায় সবকিছু, পাল্টে যায় তার জীবনচর্চা, জীবনবোধ।
তিনি শামিমা বেগম (Shamima Begum)। পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন একেডেমিতে তিনি পড়াশোনা করতেন। ভালোই তো ছিল তাঁর জীবন, সুন্দর ভাবে কাটছিলো প্রিয়জনদের সাথে। কিন্তু কী কারণে এই বদল? কেনই বা তিনি যোগ দিলেন এই সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনে? ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে তিনি ছাড়াও তাঁর আরও দুই সঙ্গী, কাদিজ়া সুলতানা ও আমিরা আবাসে- তাঁরাও তাঁর সাথে লন্ডন থেকে সিরিয়া পালিয়ে আসেন। এরপর থেকে শুরু হয় জঙ্গি হওয়ার প্রশিক্ষণ। তিনি হয়ে ওঠেন একজন সম্পূর্ণ রূপে সন্ত্রাসবাদী।
কিন্তু হঠাৎ তাঁর মনে হয়, তিনি এসব আর চান না। তিনি ফিরে আসতে চান তাঁর প্রিয়জনের কাছে। কিন্তু ততদিনে মামলা আইনের কাঠগড়ায়। এতকিছুর পর ২০১৯ এর ফেব্রুয়ারী নাগাদ তাঁকে একজন ব্রিটিশ সাংবাদিক খুঁজে বের করেন এক শরণার্থী শিবির থেকে। তিনি সেই সাংবাদিকের সাথে লন্ডনে ফিরে আসতে চেয়ে ছিলেন। কিন্তু আর ফিরতে পারেননি। তিনি এখন সিরিয়াতেই একটি শরণার্থী শিবিরে আছেন।
সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি মুখ খুললেন তাঁর জীবনের বিভিন্ন ওঠা পড়া এবং জীবনের এইসব সংগ্রাম নিয়ে। ছোটবেলায় তিনি যখন লন্ডন ছাড়েন তিনি দিব্যি খুশি খুশিই চলে গিয়েছিলেন, ভাবতেন আর কোনোদিন দেশে ফেরার দরকার হবে না। কিন্তু এখন দেশে ফিরতে পারলেই মনে হয় তাঁর শান্তি। বর্তমানে ফিরে পেতে চান তাঁর নাগরিকত্ব। কারণ সিরিয়ায় পাড়ি দেওয়া এবং এইসব সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনে যোগ দেওয়ার পরই তিনি তাঁর নাগরিকত্ব হারিয়েছিলেন।
তিনি সাক্ষাৎকারে জানান যে, কী কঠিন তাঁর এখনকার দিনগুলো। সিরিয়ার এই শরণার্থী শিবির তাঁর কাছে জেলের থেকেও খারাপ। কারণ জেলে অন্তত ছুটির একটা ব্যবস্থা থাকে, আর এখন এখানে তিনি চির বন্দী। তাঁর মুক্তি কবে কেউ জানে না। তিনি আরও জানান যে, সিরিয়ায় আসার পরই তাঁর সাথে ডাচ বংশোদ্ভূত আইএস জঙ্গি ইয়াগো রিদাইকের সাথে তাঁর বিয়ে হয়। ২০১৯ পর্যন্ত তিনি তিনটি সন্তানের জন্ম দিলেও একজনও কেউ বাঁচেনি। তবে তিনি কী এখনো তাঁর স্বামীর সাথেই আছেন, এই বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
তিনি নিজের অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করে বলেন যে, তিনি মোটেই খুশি নন এই জঙ্গি দলে যোগদান করে, আর তাই নিজেকে তিনি এতটা ঘৃণা করেন। তিনি তাই মুক্তি চান এখান থেকে এবং ব্রিটিশ সরকারকে জানাতে চান এই জঙ্গি দল কীভাবে বাচ্চাদের তাঁদের এই দলে যুক্ত করতে বাধ্য করে। তবে তিনি নিজের ব্যাপারে কিছুই পরিষ্কার করে জানাননি। তিনি বলেন যে, যে দুই বান্ধবীদের সাথে তিনি এখানে পালিয়ে আসেন, সিরিয়ায় পা রাখার পর পরই তাঁরা মারা যান। তিনি এখন বুঝতে পারেন যে এই জঙ্গি দলে যোগদানের ফলে কেউ তাঁকে মেনে নেবে না। কিন্তু তিনি শুধু জানাতে চান, তিনি সত্যিই তাঁদের মতো নন।