বাংলা হান্ট ডেস্ক: যত দিন এগোচ্ছে ততই অর্থনৈতিক সঙ্কট আরও স্পষ্ট হচ্ছে পড়শি দেশ পাকিস্তানে (Pakistan)। পাশাপাশি, সেখানে আটা, ডাল, চাল ও চিনির মত খাদ্যদ্রব্যের দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে হু হু করে। শুধু তাই নয়, সেখানকার অবস্থা এতটাই বেগতিক যে, বর্তমানে পাকিস্তানে আটা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজিতে ২০০ টাকা বা তারও বেশিতে। এমনকি, পাকিস্তানের অবস্থা শ্রীলঙ্কার থেকেও খারাপ হতে চলেছে। অথচ এই অবস্থাতেই পাকিস্তান ভারতকে টক্কর দেওয়ার স্বপ্ন দেখে। উল্লেখ্য যে, ভারতে আটার দাম প্রতি কেজিতে মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। পাশাপাশি, পাকিস্তানের তুলনায় ভারতের অর্থনীতিও যথেষ্ট শক্তিশালী।
এমতাবস্থায়, বর্তমান প্রতিবেদনে আজ আমরা ভারতের এমন একজন ব্যক্তির প্রসঙ্গ আপনাদের কাছে উপস্থাপিত করব যিনি গত ৮ বছর ধরে মাত্র ৫ টাকায় প্রতিদিন শত শত মানুষকে থ্রি স্টার হোটেলের মতো খাবার সরবরাহ করছেন। ইতিমধ্যেই তাঁর এহেন পদক্ষেপের কথা দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও পৌঁছে গিয়েছে। পাশাপাশি, জনপ্রিয় অভিনেতা অমিতাভ বচ্চনও তাঁর প্রশংসা করেছেন।
এই প্রসঙ্গে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, ওই ব্যক্তির নাম হল অনুপ খান্না। যিনি প্রায় ৮ বছর ধরে উত্তরপ্রদেশের নয়ডার সেক্টর ২৯-এ “দাদি কি রসোই” নামের একটি দোকান চালান। তিনি ৪৭ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা। তাঁর দোকানে অড়হর ডাল, মিক্স ভেজ, ডাল মাখানি, মটর-পনির, ছোলা, রাজমা, বাসমতি চাল, তাওয়া রুটি, ফ্রুটি, বিস্কুট, প্যাঁড়া, রসগোল্লা, গুড় সহ আরও নানান লোভনীয় খাবার পাওয়া যায়।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল “দাদি কি রসোই”-এর মেনু প্রতিদিন পরিবর্তিত হয়। শুধু তাই নয়, সেখানে খাবারের মান এতটাই দুর্দান্ত যে ভারতের ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি ডিপার্টমেন্টের আধিকারিকরা এখানে পরিদর্শনের পর নিজেরাই স্বাদগ্রহণের পরে “এ গ্রেড”-এর শংসাপত্র দিয়েছেন। অনুপ নিজেই এই কাজটি করে চলেছেন।
রাষ্ট্রপতি ভবনে সম্মানিত করা হয়েছে তাঁকে: এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, অনুপ খান্না শুধুমাত্র ৫ টাকায় খাবার সরবরাহ করেন না। পাশাপাশি, তিনি তাঁর প্রধানমন্ত্রী জন ঔষধি স্টোর থেকে অসুস্থদের সস্তায় ওষুধও দেন। এছাড়াও, দুস্থ মানুষদের ১০ টাকার বিনিময়ে বস্ত্রও দেন তিনি। মূলত, তাঁর লক্ষ্য হচ্ছে অভাবীদের “রুটি, কাপড় এবং ওষুধ” প্রদান করা। আর এই কাজটিই তিনি বিগত ৮ বছর ধরে করে আসছেন।
এমতাবস্থায়, খাবারের জন্য শুধুমাত্র ৫ টাকা নেওয়ার প্রসঙ্গে অনুপ জানান যে, তিনি চাইলেই মানুষকে বিনামূল্যে খাবার দিতে পারতেন। কিন্তু ৫ টাকা নেওয়া হয় যাতে, সেখানে খেতে আসা প্রতিটি মানুষের আত্মসম্মানে কোনো ঘা না লাগে। মূলত, বিনামূল্যে খাবার দিলে অনেক দুস্থ মানুষ সেখানে খেতে যেতে দ্বিধাবোধ করতেন। কিন্তু খাওয়ার পরিবর্তে ৫ টাকা নেওয়ায় বিষয়টি এদিক থেকে সামলানো যায়। পাশাপাশি, তিনি “দাদি কি রসোই”-এ মানুষকে শৃঙ্খলা শেখান। সেখানে সবাইকে খাবার পেতে লাইনে দাঁড়াতে হয়।
আর অনুপের এহেন মহতী কাজে মুগ্ধ হয়েই তাঁকে প্রায় ৩ বার রাষ্ট্রপতি ভবনে ডেকে সম্মানিত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, নয়ডার বিধায়ক পঙ্কজ সিং থেকে শুরু করে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং লোকসভার সদস্য ড. মহেশ শর্মা, নয়ডা কর্তৃপক্ষের প্রাক্তন সিইও রামা রমন সহ আরও অনেক বড় অফিসার এবং নেতারা লাইনে দাঁড়িয়েই তাঁর কাছ থেকে খাবার খেয়েছেন।