বাংলাহান্ট ডেস্ক: সম্প্রতি বিশ্বের সেরা খাদ্য গন্তব্যের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে কলকাতা। দশটি সেরা শহরের তালিকায় তিলোত্তমা রয়েছে ৯ নম্বর স্থানে। তাই কলকাতা মানেই শুধু হাওড়া ব্রিজ, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল বা ময়দান নয়। কলকাতা মানে এমন একটি জায়গা যেখানে সেরা খাবার পাওয়া যায়। কলকাতা হল গোটা বিশ্বের খাদ্যপ্রেমীদের মক্কা। সুস্বাদু খাবারের পীঠস্থান।
কলকাতার ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে এখানকার খাবারের ইতিহাসও। আজ কলকাতায় যত রকমের খাবার পাওয়া যায়, সবগুলির নেপথ্যে রয়েছে শতাব্দী প্রাচীন ইতিহাস। এই শহরের রাস্তার খাবার বা স্ট্রিট ফুডের জগতজোড়া নাম। কম খরচে এত ধরনের সুস্বাদু খাবার বিশ্বের আর কোথাও পাওয়া যায় কিনা জানা নেই। তাই আজকের প্রতিবেদনে আমরা কলকাতার এমন কয়েকটি বিখ্যাত স্ট্রিট ফুডের (Kolkata Best Street Food) কথা বলব, যা অন্তত একবার চেখে দেখা উচিত।
১। অনাদি কেবিনের মোগলাই পরোটা: মোগলাই পরোটা হল কলকাতা শহরের অন্যতম সেরা স্ট্রিট ফুড। পাতলা রুটির মধ্যে মাংসের পুর দেওয়া পরোটা এবং সঙ্গে কাঁচা পিঁয়াজ, ও সেদ্ধ ডিম। একবার খেলে এর স্বাদ মুখে লেগে থাকবে। কলকাতার অনেক জায়গায় এই সুস্বাদু খাবার পাওয়া গেলেও অনাদি কেবিনের মোগলাইয়ের স্বাদ যেন অন্য জগতের। এই মোগলাইয়ে হাঁস বা দেশি মুরগির ডিম ব্যবহার করা হয়। অনাদি কেবিনের পথচলা শুরু ১৯২৫ সালে বলরাম জানার হাত ধরে।
২। আগরওয়ালের পাও ভাজি: পাও ভাজি মুম্বইয়ে সব থেকে ভাল পাওয়া গেলেও কলকাতাও কম নয়। পার্ক স্ট্রিটের বরদান মার্কেটের বাইরে সবচেয়ে ভাল পাও ভাজি পাওয়া যায়। এখানে রয়েছে আগরওয়ালের দোকান। এখানকার পাও ভাজির শহর জোড়া নাম। ঘি, মশলা এবং সেদ্ধ সবজি দিয়ে তৈরি ভাজির সঙ্গে মাখন লাগানো রুটি পরিবেশন করা হয়। তাতে ছড়ানো থাকে কাজুবাদাম।
৩। পরমেশ্বর কুলফিওয়ালার কুলফি: পার্ক স্ট্রিটের বরদান মার্কেটের কাছে পাও ভাজির পাশাপাশি আরও একজনের দোকান দেখতে পাবেন। তা হল পরমেশ্বর কুলফিওয়ালার। ঐতিহ্যবাহী কেশর বাদাম এবং সীতাফল থেকে শুরু করে নানা রকমের কুলফি পাবেন পরমেশ্বরের কাছে।
৪। রাজ কিশোর শাহের ঝাল মুড়ি এবং পাপড়ি চাট: কলকাতা শহরের একটি পরিচয় হয় ঝালমুড়ি দিয়ে। এই শহরের প্রায় প্রতিটি মোড়েই পাওয়া যায় এই সুস্বাদু খাবার। তবে পার্ক স্ট্রিটের বারবিকিউ নেশনের বাইরে বসেন রাজও কিশোর শাহ। তাঁর দোকানের ঝালমুড়ি অনবদ্য। দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি ঝালমুড়ি ও পাপড়ি চাট বিক্রি করছেন।
৫। লালু-ভুলুর চায়ের দোকানের মাংসের চর্বির ঘুঘনি: কখনও খাসির চর্বির ঘুগনী খেয়েছেন? না খেয়ে থাকলে অবশ্যই ঘুরে আসুন কুমোরটুলি ঘাটের কাছে কলকাতা পুলিশের সুতানুটি ফাঁড়ির বিপরীতের এই স্টলে। তবে যেকোনও দিন গেলে পাবেন না। যেতে হবে শুধুমাত্র রবিবারে। এই দোকানের চাও কিন্তু অসাধারণ খেতে।
৬। অরুণ টি স্টলের সিঙাড়া এবং জিলিপি: অরুণ টি স্টলের সিঙাড়া থিয়েটার রোডের অফিস কর্মীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। এখানকার হিংয়ের কচুরির নামও রয়েছে। এই দোকানের সিঙাড়ার একটি আলাদা স্বাদ রয়েছে, যা শহরের বাকি দোকানের থেকে অনেকটাই আলাদা।
৭। হট কাটি রোল থেকে রোল: থিয়েটার রোডের আরও একটি জনপ্রিয় দোকান হল হট কাটি রোল। তরুণ প্রজন্মের কাছে রোল খাওয়ার অন্যতম সেরা গন্তব্য এটি। নরম পরোটার মধ্যে তুলতুলে মাংসের পুর দেওয়া রোল একবার খেলে বার বার খেতে চাইবেন। এখানকার কাঠি রোল অন্য দোকানের চেয়ে মোটা ও মশলাদার। এখানে খেতে পারেন ডবল চিকেন ও ডবল মটন রোল।
৮। জিৎ লাল চ্যাট সেন্টারের দই বড়া: দই বড়া সারা ভারতেই পাওয়া যায়। কিন্তু জিৎ লালের দই বড়ার স্বাদ তুলনাহীন। দই আর মশলার ছিটে দেওয়া বড়া মুখে দিলেই গলে যায়। সঙ্গে পাওয়া যায় মিষ্টি চাটনি যার উপর ছড়ানো হয় ঝুড়িভাজা। এটি রয়েছে নিউ মার্কেটের সিমপার্ক মলের ঠিক বিপরীতে।
৯। লক্ষ্মণের পান: সব খাবারের শেষে পান না হলে ঠিক চলে না। এর জন্য চলে যেতে পারেন শরৎ বোস রোডে। সেখানে রয়েছে লক্ষ্মণের পান। চল্লিশ বছরেরও বেশি পুরোনো এই দোকানে নানা ধরনের, নানা স্বাদের পান পাওয়া যায়। এখানকার চকোলেট পান অবশ্যই চেখে দেখতে পারেন।