বাংলা হান্ট ডেস্ক: ভারত (India) ও চিনের (China) মধ্যবর্তী ক্ষেত্রে রীতিমতো যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হওয়া নেপালে (Nepal) ড্রাগনের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের যোগ্য জবাব দিয়েছে মোদী সরকার। ইতিমধ্যেই ভারত রাক্সৌল-কাঠমান্ডু রেল লাইনের জন্য ফাইনাল লোকেশন সার্ভের গতিকে বাড়িয়ে দিয়েছে। এরপর কাঠমান্ডু পর্যন্ত ট্রেন চালানোর পথ পরিষ্কার হয়ে যাবে। একই সঙ্গে ভারতের এহেন পদক্ষেপের জেরে চিনও তার অ্যাকশন শুরু করেছে। মূলত, চিন এখন কেরুং-কাঠমান্ডু রেললাইনের সম্ভাবনা যাচাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এদিকে, কেপি অলি সমর্থিত সরকার ক্ষমতায় আসার পরই চিনের এহেন গতি পরিলক্ষিত হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বিলিয়ন ডলারের এই রেললাইনের মাধ্যমে চিন নেপালকে শ্রীলঙ্কার মতো ঋণের ফাঁদে ফেলতে চায়। উল্লেখ্য যে, এই রেললাইনটি হিমালয়ের মাঝখান দিয়ে তৈরি করা হবে। যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং প্রযুক্তিগতভাবে খুবই চ্যালেঞ্জিং। শুধু তাই নয়, রেললাইন নির্মাণের পর তা সচল রাখতে কোটি কোটি টাকা খরচও হবে। চিন রেলওয়ে লাইন বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের আওতায় এই রেললাইন নির্মাণ করতে চায়। এমনকি, এটির পুরো খরচ নেপালের কাছ থেকে আদায় করতে চায় তারা। এদিকে নেপাল সরকার চায় চিন ঋণের পরিবর্তে আর্থিক সহায়তা করুক। তবে, চিন এর জন্য প্রস্তুত নয় বলে অনুমান করা হচ্ছে।
চিনকে পেছনে ফেলেছে ভারত: কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, নেপালে ট্রেন চালানোর বিষয়টিই এখন ভারত ও চিনের মধ্যে কড়া টক্কর এনে দিয়েছে। দুই দেশই নেপালে তাদের প্রভাব শেষ হতে দিতে চায় না। গত ডিসেম্বরে চিন থেকে ৬ সদস্যের একটি দল রেলের জরিপের জন্য পৌঁছেছিল। করোনার পর প্রথমবারের মতো নেপালে এসেছিল চিনা জরিপ দল। এই প্রসঙ্গে নেপালের রেলপথ মন্ত্রকের মুখপাত্র আমান জানিয়েছেন, “চিনা দল প্রস্তাবিত রেল নেটওয়ার্কের বিভিন্ন সাইট পরিদর্শন করেছে এবং গত মঙ্গলবার জরিপ সম্পন্ন করার পর চিনে ফিরে গিয়েছে।” পাশাপাশি, আমান বলেন, “আমরা এখন বলতে পারি ট্রেন চালানোর সম্ভাব্য যাচাইয়ের কাজ অনেকটাই এগিয়েছে।”
আর এইদিক থেকে দেখলে ট্রেন চালানোর ক্ষেত্রে চিনকে অনেকটাই পেছনে ফেলে দিয়েছে ভারত। পাশাপাশি, রেলের কর্মকর্তা রোহিত কুমার বিসুরাল বলেছেন যে, ভারতের পক্ষ থেকে বিহারের রাক্সৌল থেকে কাঠমান্ডু পর্যন্ত ট্রেন চালানোর ক্ষেত্রে ফাইনাল লোকেশন সার্ভের জন্য তার ফিল্ডওয়ার্ক শেষ করা হয়েছে। ভারতীয় দিক থেকে, এই সম্পূর্ণ প্রকল্পটি কোঙ্কন রেল দ্বারা কার্যকর করা হচ্ছে। সংস্থাটি এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে তাদের রিপোর্ট দেবে। এর আগে ২০১৬ সালের মার্চে চিনের ইশারায় চলা কেপি অলি যখন বেইজিং সফরে গিয়েছিলেন, তখন এই দুই দেশ রেলের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল।
চিন ও নেপালের মধ্যে রেলপথে ব্যয় হবে ৩ বিলিয়ন ডলার: এরপরে, ভারত রাক্সৌল এবং কাঠমান্ডুর মধ্যে একটি ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা প্রস্তাব করে। এমতাবস্থায়, ২০১৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কেপি অলির ভারত সফরের সময় এই রেললাইনটির প্রসঙ্গটি স্বাক্ষরিত হয়। ভারত এই বৈদ্যুতিক রেললাইনের জন্য আর্থিক সহায়তা করছে। অন্যদিকে চিন ও নেপালের মধ্যে রেললাইন নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার। এই প্রসঙ্গে নেপালি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে, চিনের এই রেল প্রকল্পটি নিরীক্ষণ করতে ৪২ মাস সময় লাগবে। এদিকে, ভারত দেরিতে শুরু করলেও খুব শীঘ্রই তার ফাইনাল লোকেশন সার্ভের কাজ শেষ করবে। পাশাপাশি এই রেললাইনটি ১৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে বলেও জানা গিয়েছে।