বাংলাহান্ট ডেস্ক: পাকিস্তানের অবস্থা হঠাৎ এত খারাপ হল কেন? জানলে অবাক হবেন, এক সময় বেশ ভাল অবস্থাতেই ছিল পাকিস্তান (Pakistan Crisis)। এমনকী ভারতের থেকেও ভাল অবস্থায় ছিল পাকিস্তান। কিন্তু আজ সময় বদলেছে। আজ ভারতের ধারে কাছে নেই প্রতিবেশী এই রাষ্ট্র। এমনকী, সেখানে চলছে এক গুরুতর অর্থনৈতিক সঙ্কট। যার জেরে শীঘ্রই অন্ধকারে ডুবে যেতে পারে তারা।
মুদ্রাস্ফীতি সেখানে এতটাই চরমে পৌঁছে গিয়েছে যে মূল্যবৃদ্ধি যেন মহামারীর আকার নিয়েছে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বন্যার কারণে ঘাটতি দেখা দিয়েছে খাদ্যশস্যে। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া। দু’বেলা ঠিক করে খেতে পারছেন না মানুষ। অথচ মাত্র ৬০ বছর আগেও এমন পরিস্থিতি ছিল না জিন্নার দেশের। এমনকী, ভারতের থেকেও সুখে ছিল পাকিস্তান। কিন্তু হঠাৎ কী হল যার ফলে এত খারাপ অবস্থা হল দেশটির?
মাত্র ৬০ বছর আগেও মানুষের পকেটে টাকা ছিল। ১৯৬০ সালে পাকিস্তানের অবস্থা ভারতের থেকে ভাল ছিল। বিশ্ব ব্যাঙ্কের দেওয়া তথ্য অনুসারে, ১৯৬০ সালে পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় ছিল ৬ হাজার ৭৯৭ পাক রুপি। ভারতে তখন এই সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৭০৮ টাকা। অর্থাৎ মাথাপিছু আয়ের নিরিখে ভারতের তুলনায় ৮৯ টাকা এগিয়ে ছিল পাকিস্তান। তবে ২০২১ সালে ভারতের মাথাপিছু আয় ছিল ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ৫৫২ টাকা। কিন্তু পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় ছিল ১ লক্ষ ২৫ হাজার ৪৯৬ টাকা।
গত ৬০ বছরে রকেটের গতিতে এগিয়ে গিয়েছে ভারত। কিন্তু পাকিস্তানে মাথাচারা দিয়ে উঠেছিল সন্ত্রাস। এমনকী সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয়স্থল হয়ে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে পাকিস্তান। আজ তারা ঋণে জর্জরিত। অর্থনীতিবিদরা জানাচ্ছেন, আগামী ২ বছরে পাকিস্তানকে কয়েক বিলিয়ন ডলার ঋণ শোধ করতে হবে। তার উপরে এখনও ঋণের পর ঋণ নিয়ে যাচ্ছে তারা।
১৯৬০ সালে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৫.৪৬ হাজার কোটি টাকা। সেখানে পাকিস্তানের ছিল ২.৬১ হাজার কোটি পাকিস্তানি রুপি। তবে ২০২১ সালে পাকিস্তানের ফরেক্স রিজার্ভ নেমে আসে মাত্র ৩৫ হাজার কোটি টাকায়। অন্যদিকে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার বেড়ে হয় ৪৫.৯২ লক্ষ কোটি টাকা। গোটা বিশ্বে পাকিস্তান পরিচিতি পায় সন্ত্রাসবাদের দেশ হিসেবে। একইসঙ্গে দেশে শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা ক্রমশ কমতে থাকে।
১৯৬০ সালে পাকিস্তানের শিক্ষিত মানুষের হার ছিল ১৬.৪ শতাংশ। ভারতে তা ছিল ১৮.৩ শতাংশ। কিন্তু ২০২১ সালে ভারতে ৭৪ শতাংশ শিক্ষিত মানুষ রয়েছেন। অন্যদিকে পাকিস্তানে রয়েছেন ৫৮ শতাংশ শিক্ষিত মানুষ। অর্থাৎ বিগত বছরগুলিতে শিক্ষিত মানুষরা হয় মারা গিয়েছেন, নয়তো দেশ ছেড়েছেন। শুধু মানুষই নয়, একাধিক সংস্থাও পাকিস্তান ছেড়ে চলে গিয়েছে সন্ত্রাসের ফলে।
একইসঙ্গে সরকারের নীতির ফলে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে ব্যাপক হারে। কিন্তু পাক সরকারও সেদিকে নজর দেয়নি। তাদের অর্থভান্ডারেও ভাটা পড়েছে। এর ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের আমদানিতেও প্রভাব পড়েছে। তার উপর বন্যার ফলে প্রচুর ফসল নষ্ট হয়েছে। তাই দেখা দিয়েছে খাদ্যসঙ্কট। এইসব কারণেই আজকে এতটা বিধ্বস্ত পরিস্থিতি প্রতিবেশী রাষ্ট্রটির। আজ তাই হন্যে হয়ে অন্য দেশের কাছে সাহায্যের হাত পেতেছে জিন্নার দেশ।