বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: একসময় পর্তুগালের (Portugal) রাস্তায় ঝাড়ু হাতে সাফাই কর্মীর কাজ করতেন। আজ তিনি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বেতনপ্রাপ্ত ফুটবলার এবং সর্বকালের অন্যতম সেরা। তিনি ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ডস স্যান্টোস অ্যাভেইরো (Cristiano Ronaldo)। তিনি শুধু সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার ই নন, আগামীর তারকা হতে চলা প্রতিভাবান ফুটবলার, যেমন কিলিয়ান এমবাপ্পে, এরলিং হাল্যান্ড, ভিনিসিয়াস জুনিয়র, আলেহান্দ্রো গ্যারান্যাচোদের কাছে তিনিই আদর্শ। নিজের কাজের প্রতি নিষ্ঠা, সততা এবং কঠিন পরিশ্রম থাকলে যে কেউ শূন্য থেকে শুরু করে সবকিছু নিজের হাতের মুঠোয় পেতে পারে তার জ্বলন্ত উদাহরণ হলেন ক্রিশ্চিয়ানো।
অথচ পরিস্থিতি কিছুটা এদিক ওদিক হলেই হয়তো ফুটবলার তো দূর, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর জন্মই হতো না। সংসারের অভাবের কারণে তার মা ডোলারেস তাকে জন্ম দিতেই চাননি। কিন্তু ডাক্তারের পরামর্শে শেষ পর্যন্ত নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন তিনি। বাবা ছিলেন পর্তুগালের একটি ছোট দ্বীপ মাদেইরার একটি ছোট ক্লাব আন্দোরিনার কিটম্যান এবং সেইসঙ্গে একজন অ্যালকোহলিক ব্যক্তি। মাত্র ১৫ বছর বয়সে হৃদপিণ্ডের সমস্যায় ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর ফুটবল কেরিয়ারটা শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যেতে পারতো। কিন্তু ভগবানের ইচ্ছা বোধহয় তেমনটা ছিল না। তাই চূড়ান্ত দারিদ্রতা, মারণ রোগ, একাধিক কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করে স্পোর্টিং লিসবন, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ, জুভেন্টাসের মত একাধিকই ইউরোপিয়ান জায়ান্টসদের হয়ে অবিশ্বাস্য সমস্ত পারফরম্যান্স করে ইতিহাসের পাতায় নিজের জায়গা পাকাপাকিভাবে করে নিয়েছেন ক্রিশ্চিয়ানো। আজ তার ৩৮ তম জন্মদিন। আজকের দিনে তার তিনটি এমন রেকর্ড এর কথা এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো যা ভাঙ্গা অন্য কোন ফুটবলারের পক্ষে অসম্ভবের সামিল।
৩. চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১৫ গোল: ইউয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এই মুহূর্তে বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্লাব প্রতিযোগিতা। ইউরোপের বিভিন্ন প্রান্তের বড় বড় ক্লাবগুলি এই প্রতিযোগিতায় একত্রিত হয় এবং শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা অর্জনের লড়াই চলে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো এখনো অবধি ১৪০ গোল নিয়ে সর্বোচ্চ স্কোর। অথচ ভাবলে আশ্চর্য হতে হয় নিজের কেরিয়ারের প্রথম তিন চার বছরে মাঠে তার পজিশনের কারণে তিনি একটিও গোল করেননি ওই টুর্নামেন্টে। কিন্তু পরবর্তীতে একজন উইঙ্গারে রূপান্তরিত হওয়ার পর রিয়াল মাদ্রিদ ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে মোট ৭ বার তিনি এই টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ স্কোরার হয়েছেন। যে কয়বার তার দল এই টুর্নামেন্ট জিতেছে প্রত্যেকবারই তিনি ছিলেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ স্কোরার। এর পাশাপাশি রোনাল্ডোর নামের পাশে রয়েছে একটি অনন্যর রেকর্ড। তিনি তিনবার এই প্রতিযোগিতায় ১৫ বা তার বেশি গোল করেছেন। আজ পর্যন্ত অন্য কোন ফুটবলের এই কীর্তি এই মাইলফলক একবারের ছুঁতে পারেননি।
২. ইউরো কাপের সর্বোচ্চ স্কোরার: ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ বা ফুটবলপ্রেমীদের কাছে সংক্ষেপে ইউরো ফুটবল বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় একটি প্রতিযোগিতা। ২০০৪ সালে নিজের দেশের মাটিতে প্রথমবার এই প্রতিযোগিতায় মাঠে নেমেছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো। পর্তুগাল সেইবার ফাইনাল অবধি পৌঁছতে পেরেছিল এবং ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ২টি গোল এবং ২ টি অ্যাসিস্ট করেছিলেন। তার ১২ বছর পর নিজের এবং পর্তুগাল ফুটবল ইতিহাসের প্রথম আন্তর্জাতিক ট্রফি হিসেবে ২০১৬ ইউরো জেতেন রোনাল্ডো। যে পর্তুগালের ফুটবল নিয়ে গর্ব করার মতো কিছুই ছিল না তাদেরকে রোনাল্ডোর নেতৃত্বাধীন সেই দল গর্ব করার জায়গা করে দিয়েছিল। রোনালদো নিজের কেরিয়ারে মোট ৫ বার এই টুর্নামেন্টে খেলেছেন এবং ১৪ গোল করে তিনি এই টুর্নামেন্টের ইতিহাসে সর্বোচ্চ স্কোরার।
১. ৩ ইউরোপিয়ান লিগে রাজত্ব: ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো একমাত্র ফুটবলার যিনি ইংল্যান্ড, স্পেন এবং ইতালির লিগেই সেরা ফুটবলার এবং সর্বোচ্চ স্কোরার হওয়ার সম্মান অর্জন করেছেন। ইংল্যান্ডে তিনি খেলেছেন ৭-৮ বছর, স্পেনে কাটিয়েছেন ৯ বছর এবং ইতালিতে তার কেরিয়ার ছিল ৩ বছরের। তিনটি ক্লাবের হয়েই তিনি একক দক্ষতায় একাধিক ম্যাচ জিতিয়েছেন। অসম্ভব হয়ে যাওয়া পরিস্থিতি থেকে দলকে উদ্ধার করেছেন। নিজেকে তুলে নিয়ে গিয়েছেন আলাদা এক উচ্চতায়।
কিন্তু ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর ২০২২/২৩ মরশুমটা খুব একটা ভালো কাটছে না। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার পর ক্লাব ছেড়েছেন গত ডিসেম্বরে। বিশ্বকাপে হতশ্রী পারফরম্যান্স করেছেন। ইউরোপিয়ান ফুটবলের মায়া কাটিয়ে চলে এসেছেন এশিয়ায় সৌদি আরবের লিগে, আল নাসেরের জার্সিতে। সেখানেও এখনো অবধি তাকে সেরা ছন্দে পাওয়া যায়নি। ২০ বছর নিরবিচ্ছিন্ন ও ধারাবাহিক ভালো পারফরম্যান্সের পর ৩৮-এ পা দিয়ে প্রথম ফুটবলের মাঠে খারাপ সময়ের মুখ দেখেছেন রোনাল্ডো। কিন্তু এই খারাপ সময়টা তার এত বছরের গরিমাকে মিটিয়ে দিতে পারবে না।