বাংলা হান্ট ডেস্ক: প্রকৃতির ধ্বংসলীলার কাছে মানুষ যে কতটা অসহায় তা আরও একবার পরিলক্ষিত হয়েছে তুরস্ক-সিরিয়ায়। গত সোম থেকে মঙ্গলবারের মধ্যে পাঁচ-পাঁচটি শক্তিশালী ভূমিকম্প (Syria-Turkey Earthquake) রীতিমতো বিধ্বস্ত করে দিয়েছে ওই অঞ্চলগুলিকে। মৃত্যুমিছিল এবং দিগন্ত বিস্তৃত হাহাকারে বিদীর্ণ হচ্ছে চারিদিক। যত সময় এগোচ্ছে ততই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। যদিও, ঠিক সেই আবহেই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকেই বাঁচানো সম্ভব হল এক নবজাতকের প্রাণ।
জানা গিয়েছে, কংক্রিটের ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে শোনা গিয়েছিল ওই সদ্যোজাতের কান্নার আওয়াজ। তারপরেই, দ্রুত কংক্রিটের বিশাল চাঙর সরিয়ে উদ্ধার করা হয় শিশুটিকে। প্রবল ভূমিকম্পে সিরিয়ায় ধসে পড়া ভবনগুলির ধ্বংসাবশেষের নীচেই অলৌকিকভাবে জন্ম নিয়েছে শিশুটি। ভূমিকম্পের প্রায় ১০ ঘন্টা পর ওই নবজাতককে উদ্ধার করা হয়। যদিও, ওই সদ্যোজাতের মা প্রাণ হারালেও তার সাথে তখনও মায়ের নাড়ির বন্ধন ছিন্ন হয়নি। আর সেই কারণেই বেঁচেছিল শিশুটি।
আরও জানা গিয়েছে যে, হতভাগ্য শিশুটির পরিবারের কোনো সদস্যই আর বেঁচে নেই। তার পরিবারের সদস্যরা সিরিয়ার দেইর এজোর প্রদেশের বাসিন্দা হলেও দীর্ঘ কয়েক বছরের ভয়ঙ্কর যুদ্ধের কারণে তারা বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েন। এমনকি, যুদ্ধের হাত থেকে বাঁচতে শিশুটির বাবা-মা আফরিনে পালিয়ে এসেছিলেন। এদিকে, গত সোমবার ভোরে ঘটা প্রথম ভূমিকম্পের সময়ই তার মায়ের প্রসব যন্ত্রনা শুরু হয়েছিল।
আর তখনই প্রবল ভূমিকম্পে ভেঙে পড়েছিল তাদের বাড়ি। এমন পরিস্থিতিতে, ধ্বংসস্তূপের নীচেই ওই শিশুকন্যার জন্ম দেন তার মা। যদিও, তখনই মৃত্যু হয় তাঁর। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, উদ্ধারকারীরা কংক্রিটের চাঙর সরিয়ে ওই সদ্যোজাতের কাছে পৌঁছে দেখেন তখনও মায়ের সঙ্গে তার নাড়ির যোগ বিচ্ছিন্ন হয়নি।
এদিকে, ওই শিশুকন্যাটির চিকিৎসা করেন ডাঃ হানি মারুফ। তিনি বলেন, “উদ্ধারকারীরা ভূমিকম্পের ১০ ঘণ্টারও বেশি সময় পর সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩) বিকেলে ওই ছোট্ট শিশুটিকে খুঁজে পান। এক মহিলা প্রতিবেশী শিশুটির নাভি কেটে ফেলেন। তারপর শিশুটিকে আফরিন হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তাকে ইনকিউবেটরে রাখা হয়েছে।” পাশাপাশি, তিনি আরও জানান “শিশুটি যদি আরও এক ঘণ্টা ধ্বংসস্তূপের নিচে থাকত, তাহলে সে মারা যেত।”
Extended family members pulled a newborn baby alive from the rubble of a home in northern Syria, after finding her still tied by her umbilical cord to her mother, who died in Monday's massive quake, a relative said.https://t.co/jTXsLi9x4B pic.twitter.com/IAGwwcxlo7
— Jamaica Observer (@JamaicaObserver) February 7, 2023
ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এই প্রসঙ্গে একটি ভিডিও ভাইরাল হতে শুরু করেছে। যেখানে দেখা গিয়েছে, কিভাবে ওই শিশুকন্যাকে উদ্ধার করা হচ্ছে। উল্লেখ্য যে, এই ভয়াবহ ভূমিকম্পের জেরে উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার জিনড্রিস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমতাবস্থায়, এই ভূমিকম্পকে শতাব্দীর অন্যতম মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে মনে করা হচ্ছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভূমিকম্পের কারণে প্রায় ৭,৯০০ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তবে, এখন যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলছে উদ্ধারকাজ।