বাংলা হান্ট ডেস্ক : মহার্ঘ ভাতা নিয়ে উত্তাল বঙ্গ রাজনীতি। বিতর্কের জেরে তৃণমূলের (TMC) শিক্ষা সেলেই এবার উঠল পদত্যাগের ঢেউ। একযোগে পদত্যাগ করলেন ১৪ জন শিক্ষক। শিলিগুড়িতে দেশবন্ধু হিন্দি হাই স্কুলের ঘটনায় বেশ বিপাকে শাসক দল। নিরুত্তর শাসক নেতৃত্বও। এদিকে, বকেয়া ডিএ-র দাবিতে সরকারি কর্মীদের আবারও কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। আগামী ২০, ২১ ফেব্রুয়ারি রাজ্য জুড়ে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে সরকারি কর্মীদের সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ।
বৃহস্পতিবার শহিদ মিনারে অনশন আন্দোলনের সপ্তম দিন। এদিন ধর্না অবস্থানের ২১ তম দিন। বকেয়া না মেটানো হলে পঞ্চায়েত ভোটে কাজ করবে না কর্মীরা। লাগাতার কর্মবিরতির চরম হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সরকারি কর্মীরা। ভোটের কাজ না করার কথা জানিয়ে নির্বাচন কমিশনকে চিঠিও দিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, ষষ্ঠ বেতন কমিশন অনুযায়ী কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের ডিএ-র তফাত এখন ৩৫ শতাংশ। দিন দিন ফারাক বেড়েই চলেছে। অথচ বকেয়া দেওয়ার নাম নেই রাজ্যের।
এবারের রাজ্য বাজেটে সরকারি কর্মীদের জন্য ৩ শতাংশ হারে বর্ধিত ডিএ ঘোষণা করেছে রাজ্যের অর্থদফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। কিন্তু সেখানেও সমস্যা! রাজ্য বাজেট পেশের সময়ে তাঁকে ডিএ নিয়ে কোনও কথা বলতে দেখাই যায়নি। একটি চিরকুট মন্ত্রী মারফত এসে পৌঁছয় অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের হাতে। তারপরই সরকারি কর্মীদের জন্য ডিএ ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি ওই চিরকুটেই ৩ শতাংশ ডিএ-এর কথা ঘোষণা ছিল? চিরকুটটি দেখে অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেন, ‘আমাদের রাজ্যের সকল কর্মচারী, শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মচারী, সমস্ত পেনশনভোগীরা ৩ শতাংশ ডিএ, মহার্ঘ ভাতা লাগু করা হবে। আগামী মার্চ থেকে তা লাগু হবে।’ তিনি এদিন আরও বলেন, ‘আগামী অর্থবর্ষের জন্য ৩ লক্ষ ৩৯ হাজার ১৬২ কোটি নিট বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।’ চিরকুট প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘ডিএ-এর কথা বাজেটে ছিলই না। এটা মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদনে আমরা ঘোষণা করেছি।’
এদিকে, ডিএ নিয়ে চরম অসন্তোষ সরকারি কর্মীদের মধ্যেই। এক সরকারি কর্মীর দাবি করেন, ‘আমরা ৩৯ শতাংশ বকেয়া চাই। আমরা পাটীগণিত বুঝিয়ে দেব ওঁকে, ৩ শতাংশ দিয়ে ৩৯ শতাংশকে ঢাকা যায় না। আমাদের দাবি যতক্ষণে না আদায় হচ্ছে, লড়াই চলবে।’ তাঁরা এই আন্দোলন দীর্ঘায়িত করার ডাক দিয়েছেন। এই পরিস্থিতির মধ্যেই শিলিগুড়িতে দেশবন্ধু হিন্দি হাই স্কুলের তৃণমূল শিক্ষা সেলের ১৪ জন শিক্ষক একসঙ্গে পদত্যাগ করলেন। তাঁদের মধ্যে ১১শিক্ষক শিক্ষক ও ৩ জন প্যারাটিচার। তাঁরা অবশ্য পদত্যাগ নিয়ে ক্যামেরার সামনে কিছু বলতে চাননি। যদিও তৃণমূলের ইউনিয়ন ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক- দু’তরফেই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করা হয়েছে।
প্রধান শিক্ষক জয়কিশোর পান্ডে বলেন, ‘পদত্যাগের বিষয়টা আমি শুনেছি। তবে ওঁরা আমাকে তেমন কিছু জানায়নি। ফেসবুকে পোস্ট করে তাঁরা পদত্যাগ করেছেন।’ তৃণমূল সংগঠনের নেতা সকেত শ্রীবাস্তব বলেছেন, ‘আমরা শুনেছি বিষয়টা। কিছু একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আমাদেরকে না জানিয়েই ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। হয়তো ডিএ বা অন্য কোনও বিষয়ে ভুল বোঝাবুঝি। আমরা আলোচনা করে মিটিয়ে নেব।’