বাংলাহান্ট ডেস্ক: পৃথিবীতে যত উঁচু পাহাড় আছে, ঠিক ততটাই গভীর, এমনকী তার থেকেও গভীর জায়গা রয়েছে। এই পৃথিবীতেই যেমন ‘স্বর্গ’ আছে, তেমনই আছে ‘পাতাল’। এই পাতালে কখনই সাধারণভাবে প্রবেশ করা যায় না। এটি এতটাই গভীর যে এখানে সাধারণ ভাবে প্রবেশ করতে গেলে মারা যাবেন সাধারণ মানুষ। শৈশবে পাতালের ব্যাপারে অনেক গল্প শুনলেও আদতে তা কেমন দেখতে, সেই ব্যাপারে বিশেষ কিছু জানা যায় না। গল্পের পাতাল আসলে রয়ে গিয়েছে গল্পের পাতাতেই।
কিন্তু পৃথিবীর গভীরেই লুকিয়ে রয়েছে পাতাল। সেখানে রয়েছে আস্ত একটি দুনিয়া। এটি রয়েছে সমুদ্রের গভীরে। এটি এতটাই গভীর যে এখানে মাউন্ট এভারেস্টও (Mount Everest) ডুবে যেতে পারে পুরোটাই। বাস্তবের পাতাল রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরের (Pacific Ocean) গভীরে। বিশ্বের গভীরতম স্থান হল প্রশান্ত মহাসাগরের মারিয়ানা ট্রেঞ্চ (Mariana Trench)। এটি এতটাই গভীর যে এখানে বিশ্বের উচ্চতম পর্বতও ডুবে যেতে পারে। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন, মারিয়ানা ট্রেঞ্চ মোট ২৫৫০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এটি মারিয়ানা দ্বীপের পূর্বদিকে অবস্থিত।
ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যাটমস্ফিয়ার অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মতে, মারিয়ানা ট্রেঞ্চেই রয়েছে বিশ্বের গভীরতম স্থান। এটির নাম চ্যালেঞ্জার ডিপ (Challenger Deep)। এটির গভীরত্ব এতটাই যে এখানে গোটা এভারেস্ট ডুবে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, চ্যালেঞ্জার ডিপের গভীরত্ব শুধুই অনুমান করা যায়। আজ পর্যন্ত পৃথিবীর অতটা গভীরে পৌঁছে সরোজমিনে তদন্ত করা সম্ভব হয়নি। কেউ বলতে পারবে না ওই জায়গাটির সঠিক গভীরত্ব কতটা।
তাঁদের অনুমান, চ্যালেঞ্জার ডিপ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০ হাজার ৯৩৫ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। তবে এই অনুমান সম্পূর্ণভাবে করা হয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষণাপত্র দেখে। ১৯৬০ সালে গবেষকদের একটি দল চ্যালেঞ্জার ডিপে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস জানিয়েছে, ওই গবেষকদের দলের মতে চ্যালেঞ্জার ডিপ আনুমানিক ১০ হাজার ৯১১ মিটার গভীর। সাধারণত ‘সোনার’ বিম দিয়ে সমুদ্রের গভীরত্ব মাপা হয়। কিন্তু চ্যালেঞ্জার ডিপ এতটাই গভীর যে সোনার দিয়ে এটি করা যায় না।
সমুদ্র কতটা গভীর তা জানার আরও একটি উপায় আছে। সমুদ্রের তলায় একটি প্রেসার সেন্সর রাখা হয়। যাতে বোঝা যায় সেটির উপর ঠিক কতটা জল রয়েছে। এভাবে বোঝা যায় সেই সমুদ্র ঠিক কতটা গভীর। চ্যালেঞ্জার ডিপে সোনার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল। সেই গবেষণায় দেখা যায় যে সোনার বিমগুলি সমুদ্রের তলায় গিয়ে ফেরত আসতে প্রায় ১৪ সেকেন্ড সময় নিচ্ছে। এটি সাধারণত অনেক কম সময়েই চলে আসে। তবে এত বেশি সময় নেওয়া একটি বড় ব্যাপার। এখান থেকেই বিজ্ঞানীরা এর গভীরত্ব সম্পর্কে অনুমান করতে পেরেছিলেন।