বাংলা হান্ট ডেস্কঃ আজ নিয়োগ দুর্নীতি মামলার (Teacher Recruitment Scam) শুনানিতে দুপুর ১২ টা নাগাদ আদালত চত্বরে নিয়ে যাওয়া হয় রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। আলিপুর আদালতে ঢোকার মুখে রাজ্যের বিরোধী দলের তিন নেতার নাম তোলেন জেলবন্দি পার্থ (Partha Chatterjee)। এদিন আদালতে প্রবেশের মুখে সাংবাদিকদের সামনে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন পার্থবাবু। সরাসরি সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী, বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নামে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন তিনি। পাশাপাশি এদিন সকালে থেকেই পার্থর মুখে ‘বলব, বলব, পরে বলব’, এই বুলিই শোনা যাচ্ছিল।
আগের সপ্তাহে ভার্চুয়াল শুনানির দিন থেকেই সশরীরে আদালতে পৌঁছে কিছু বলার আর্জি জানিয়ে আসছিলেন পার্থ। বিগত কিছুদিন থেকে সকলের মনে এই একটাই প্রশ্ন! কী বলতে চাইছেন পার্থ? সূত্রের খবর, এদিন আদালতে প্রবেশ করার সময়ও যখন সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করেন তখনও তিনি বলেন, ‘বলব, বলব, পরে বলব।’
এদিন আদালতে সওয়াল-জবাব পর্বে নিয়োগ দুর্নীতির অন্যতম অভিযুক্ত কুন্তল ঘোষ ও তাপস মণ্ডলের আইনজীবীরা সওয়াল করেন। ঠিক সেই পার্থ বলেন, ‘আইনজীবী যা বলেছেন, তার সঙ্গে আমি কিছু বলতে চাই।’ এরপর দুপুর ৩ টের সময় দ্বিতীয় ধাপের শুনানি শুরু হলে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী বিচারককে বলেন, ‘কয়েকটা কথা বলটে চাই। 8 মাস ধরে জেলে রয়েছি। বিচার ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধা আছে।’ এদিন জেলের বাইরে দাপট দেখালেও বিচারকের কাছে করুন স্বরে আর্জি করেন পার্থ।
তিনি আরও বলেন, “আমার এখনও বিশ্বাস আছে, যাই ঘটুক না কেন, সত্য একদিন প্রকাশ হবে।” এরপর প্রশ্ন তুলে পার্থ বলেন, “আমার মন্ত্রী হওয়াটা কি অপরাধ? আমি খুব ভাল ছাত্র ছিলাম না, আবার খুব খারাপ ছাত্রও ছিলাম না। আমি ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে স্কলারশিপ পেয়েছি। স্যার কী অপরাধ করেছি? মন্ত্রী হওয়া অপরাধ?” প্রশ্ন পার্থর।
পার্থর সংযোজন, “প্রাইমাফেসি মানে কি? মানে প্রাথমিকভাবে উঠে আসা। থানায় আমার নামে কোনও কেস নেই। আমি বিরোধী দলনেতা ছিলাম। কেউ কখনও আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনতে পারেনি। আমি আইনি ছাত্র ছিলাম। আইনের প্রলেপ নমনীয় না হয়ে দমনীয় হবে স্যর?”
বিচারকের কাছে করুন স্বরে পার্থর কথা, “আমি কি পালিয়ে যাব? আমার মামা, মা বিজ্ঞানী। ছোটবেলা থেকে এখানে এসেছি। শুধু রাজনৈতিক নেতারাই কি প্রভাবশালী?” এরপর পার্থ বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সংস্থায় চাকরি করেছি ওদের চাপটা জানি।’ পার্থর বক্তব্য শুনে বিচারক তাকে বলেন, “আমি যদি জামিন না দিই। আপনার যদি সেটা পছন্দ না হয়, তাহলে উচ্চতর আদালতে যান।”
সঙ্গে সঙ্গে পার্থর উত্তর, “স্যর অ্যাপেক্স কোর্ট বলছে আপনার হাতে জামিন দেওয়ার ক্ষমতা আছে।” এরপর গলা ছোট করে পার্থ বলেন, ‘বিচার হওয়া অবধি থাকব কি না জানিনা’। ফের বিচারককে তিনি বলেন, “স্যর আমি নিয়োগকর্তা নই। আমি বোর্ড পরিচালক নই।”
বিচারক তাকে বলেন, ‘আমি আইনের বাইরে যেতে পারব না।’ পাল্টা পার্থর অনুরোধ, ‘স্যর আইনটা একটু দেখে নেবেন। পাবলিক প্রসিকিউটর মানে সিবিআই প্রসিকিউটর নয়। এটাই আমার বলার ছিল স্যর।’ এদিন আদালত থেকে বেরোনোর সময়ও দলের সঙ্গে আছেন বলেই বার্তা দেন তিনি। ‘আপনাকে কী কালিমালিপ্ত করা হচ্ছে?’ সাংবাদিকদের কথায় পার্থর উত্তর, ‘যার নিজের কালি লেগে আছে, তারা আবার কি কালিমালিপ্ত করবে?’