বাংলাহান্ট ডেস্ক: সত্যজিৎ রায়ের (Satyajit Ray) অমর সৃষ্টি ফেলুদা (Feluda)। বাংলা হোক বা ইংরেজি সাহিত্য, গোয়েন্দা গল্পের প্রতি পাঠকদের ঝোঁক চিরদিনের। কিন্তু শার্লক হোমস, আগাথা ক্রিস্টি কিংবা বাঙালির ব্যোমকেশ বক্সী সকলেই এমন এমন রহস্য নিয়ে ব্যস্ত থেকেছেন যেগুলো ঠিক কিশোর পাঠ্য নয়। ফেলুদা পূরণ করেছিল সেই অভাব। বাচ্চা থেকে বুড়ো ‘থ্রি মাস্কেটিয়ার্স’এর প্রতিটি অভিযানের সঙ্গী হতে পেরেছেন সকলেই।
ফেলুদার প্রথমে আবির্ভাব হয়েছিল বইয়ের পাতায়। সেখান থেকে তাকে সিনেমার পর্দায় নিয়ে আসেন স্রষ্টা সত্যজিৎ রায়। তাঁর হাত ধরেই ১৯৭৪ সালে ‘সোনার কেল্লা’তে প্রথম দেখা মেলে প্রদোষ মিত্তির অ্যান্ড কোং এর। ফেলুদার চরিত্রে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, তোপসের ভূমিকায় সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায় আর জটায়ু ওরফে লালমোহন গাঙ্গুলী সন্তোষ দত্ত।
একগুচ্ছ ফেলুদা কাহিনির মধ্যে থেকে মাত্র দুটি গল্প সিনেমায় রূপ দিয়েছিলেন কিংবদন্তি সত্যজিৎ রায়। সোনার কেল্লার ৫ বছর পর মুক্তি পেয়েছিল ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’। সেখানেও দেখা মিলেছিল সেই থ্রি মাস্কেটিয়ার্সের। দুটি ছবিই বাংলা চলচ্চিত্র জগতে আইকনিক হয়ে রয়ে গিয়েছে। কিন্তু এই দুটি ছবির পর ফেলুদাকে আর পর্দায় ফেরালেন না কেন সত্যজিৎ?
কারণটা হল কিংবদন্তি অভিনেতা সন্তোষ দত্তের জন্য। জটায়ু চরিত্রটা যেন তাঁর কথা ভেবেই লিখেছিলেন এবং এঁকেছিলেন সত্যজিৎ। আর বলা বাহুল্য লালমোহনবাবু হিসাবে এখনো সন্তোষ দত্তকেই চেনেন অধিকাংশ সিনেপ্রেমীরা। অনেকেই জানেন, অভিনয়ের পাশাপাশি সন্তোষ দত্তের পেশা ছিল ওকালতি। জানা যায়, সোনার কেল্লায় অভিনয়ের প্রস্তাব যখন আসে তখন একটি হত্যাকাণ্ডের মামলা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন আইনজীবী সন্তোষ দত্ত।
কিন্তু স্বয়ং সত্যজিৎ রায় ফোন করে বলছেন, জটায়ুর চরিত্রে অভিনয় করতে। শেষমেষ মামলার শুনানি ছেড়েই সোনার কেল্লার শুটিংয়ে গিয়েছিলেন সন্তোষ দত্ত। বাকিটা ইতিহাস। কিন্তু ১৯৭৯ সালে জয় বাবা ফেলুনাথ মুক্তির পর ১৯৮৮ সালে প্রয়াত হন সন্তোষ দত্ত। আর কাউকে জটায়ু বলে ভাবতে পারেননি সত্যজিৎ রায়।
তাই সন্তোষ দত্তের মৃত্যুর পরে আর ফেলুদার কোনো ছবি বানাননি অস্কারজয়ী পরিচালক। তারপরে আবারো সত্যজিৎ-পুত্র সন্দীপ রায় পর্দায় ফেরান ফেলুদাকে। তবে ফেলুদা, তোপসে, জটায়ু সকলের চরিত্রেই আসেন নতুন অভিনেতা।