ষড়যন্ত্র, তৃণমূলকে ছোট করতেই কাড়া হল সর্বভারতীয় তকমা! গেরুয়া শিবিরকে তুলোধোনা

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ সদ্য জাতীয় দলের (National Party) তকমা হারিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress)৷ সোমবার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনের (Election Commission) পক্ষ থেকে এই ঘোষণা করা হয়। প্রসঙ্গত, গত কিছুদিন ধরেই তৃণমূলের জাতীয় দলের তকমা থাকবে কি না, তা নিয়ে টানাপোড়েন চলছিল৷ এরই মধ্যে কেড়ে নেওয়া হয় তকমা। অন্যদিকে, দুদিন থেকে এই নিয়ে সরগরম রাজ্য তথা দেশের রাজনীতি।

তৃণমূলের জাতীয় দলের তকমা কাড়ার পিছনে কেন্দ্রের বিজেপির (BJP) ষড়যন্ত্রই দেখছে বাংলা থেকে শুরু করে দিল্লির রাজনৈতিকমহলও। উঠে আসছে হাজারো প্রশ্ন। এই যেমন, বিজেপি, কংগ্রেসের পর লোকসভায় তৃতীয় বৃহত্তম দল তৃণমূল কংগ্রেস। এখানেই খটকা। লোকসভায় তৃতীয় বৃহত্তম দল দল হওয়ার পরেও তৃণমূলের জাতীয় দলের মর্যাদা কাড়ার পেছনে কারণ কি?

অনেকেরই মতে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই ‘পরিকল্পিত’ ভাবে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দেশজুড়ে বিজেপি-বিরোধী আঞ্চলিক শক্তিগুলিকে একজোট করার কাজে বর্তমানে অত‌্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে তৃণমূল। সেই জন্য কোনো ঝুঁকি না নিয়ে আগেভাগেই কেড়ে নেওয়া হল জাতীয় দলের তকমা।

এ প্রসঙ্গে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) বলেন, “আপাতভাবে মনে হচ্ছে তৃণমূলকে ভয় পাওয়ার জন‌্যই যেন পরিকল্পতিভাবে তৃণমূলকে পিছিয়ে দেওয়া হল। লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূল বড় শত্রু হিসাবে উঠে আসছে বলে তাদের একটু বিরক্ত করা কিনা, কোনও বিশেষ মারপ্যাঁচে বিশেষ ক্রাইটেরিয়ায় করা হচ্ছে কিনা, এগুলো শীর্ষ নেতৃত্ব দেখবে।” তকমা কাড়ার বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।

জানিয়ে রাখি, নিয়ম অনুযায়ী জাতীয় দলের স্বীকৃতি পেতে হলে কোনো রাজনৈতিক দলকে চার বা তার অধিক রাজ্যের দল হিসেবে স্বীকৃতি পেতে হবে। অথবা লোকসভা নির্বাচনে অন্তত তিনটি রাজ্য থেকে ২ শতাংশ আসন পেতে হয়। সবদিক বিচার করে এদিন তৃণমূলের জাতীয় দলের তকমা সরানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

এবার বলি, ২০১৪ সালে লোকসভায় ৩৪টি আসন জেতে তৃণমূল। এই মুহূর্তে লোকসভায় তাদের আসন সংখ‌্যা ২৩। অন‌্যদিকে, গোয়া থেকে রাজ‌্যসভায় তাদের একজন সাংসদ লুইজিনহো ফেলেইরো ইস্তফা দেওয়ায় সেখানে সাংসদ সংখ‌্যা এই মুহূর্তে ১২। প্রথমবারের জন্য মেঘালয়ের নির্বাচনে নেমেও ভাল ফল করেছে তৃণমূল। শুধু তাই নয়, ‘কন‌্যাশ্রী’, ‘সবুজ সাথী’, ‘দুয়ারে সরকার’-এর মতো বাংলার মুখ‌্যমন্ত্রীর কল্পনাপ্রসূত প্রকল্প আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সম্মানিত হয়েছে। যা শুধু বাংলা নয়, গোটা দেশেরই গর্ব।

tmc flag

তৃণমূলের বক্তব‌্য, “অন‌্যান‌্য রাজ্যের শতাংশ দেখিয়ে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব বিতর্কের মুখে। দেখা যাচ্ছে, যে ‘আঞ্চলিক দলগুলোকে’ নিয়ে টিপ্পনি করা হয়, তারা জেতে। আর জাতীয় দলগুলো হারে।” প্রসঙ্গত, শুধু তৃণমূলেরই জাতীয় দলের তকমা গিয়েছে এমনটা নয়। তৃণমূলের পাশাপাশি জাতীয় দলের তকমা গিয়েছে শরদ পওয়ারের এনসিপি এবং সিপিআই দলেরও। অন্যদিকে, আশ্চর্যজনকভাবে নতুন করে জাতীয় দলের তকমা পেয়েছে দিল্লির অরবিন্দ কেজরীবালের দল আম আদমি পার্টি। যারা লোকসভায় কার্যত অস্তিত্বহীন।

দিল্লির রাজনৈতিক মহলের মতে, কমিশনের এই সিদ্ধান্তের পিছনে রয়েছে বিজেপির হাত। হয়েছে বড়সড় ষড়যন্ত্র। কারণ, ২০১৬ সালে যখন নির্বাচন কমিশন তৃণমূল কংগ্রেস, এনসিপি ইত‌্যাদি দলগুলিকে জাতীয় দল ঘোষণা করেছিল, তখনই বলা হয়েছিল ১০ বছর বাদে আবার এই সিদ্ধান্ত খতিয়ে দেখা হবে। তাহলে সেই ১০ বছরের সময়টা গিয়ে শেষ হচ্ছে ২০২৬-এ। তাহলে তার তিনবছর আগেই কেন তকমা কেড়ে নেওয়া হল, এই প্রশ্ন উঠছে সর্বত্র।

Sharmi Dhar
Sharmi Dhar

শর্মি ধর, বাংলা হান্ট এর রাজনৈতিক কনটেন্ট রাইটার। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৩ বছর ধরে সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত ।

সম্পর্কিত খবর